নুসরাতের জানাজা সম্পন্ন

0
1173

‘মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া না। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো। আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো। ইনশাআল্লাহ।’

ফেনীর সোনাগাজীতে এখন নুসরাত জাহান রাফির স্বজনদের আর্তনাদ আর হাহাকার।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সোনাগাজীর চরচান্দিয়া গ্রামে তার জানাজায় অংশ নিতে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। শেষবারের মতো তার বাড়িতে ভিড় করেন শোকাহত প্রতিবেশিরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। বিকেল ৫ টা ৫৩ মিনিটে ফেনীর সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রাফির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, রাফির বাবা এ কে মুসা মেয়ের জানাজা পড়ান।

বাড়ি ফিরেছে নুসরাত। হাজার হাজার মানুষ শোকার্ত মানুষের ভিড় ঠেলে তার নিথর দেহটি পৌঁছে দেয়া হয় বাড়ির আঙিনায়।

পুরোটা পথ ছিলেন লাশের পাশে। সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে পৌঁছে আর সংজ্ঞা ধরে রাখতে পারেননি নুসরাতের ভাই। স্বজন ও সতীর্থদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে বাতাস।

বৃদ্ধ দাদা হয়তো ভাবেননি তরুণী নাতনির লাশের ভার বইতে হবে তাকে। সরকারি সাবের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে দাদীর পাশের কবরেই অন্তিম শায়ান হবে তার।

যৌন হয়রানীর অপমান আর প্রতিবাদের আগুন বুকে নিয়ে চলে যেতে হয়েছে নুসরাতকে। ফাঁকা পড়ে ছিল তার পরীক্ষার আসন। পড়ার টেবিলে এলোমেলো বইগুলো আর তার স্পর্শ পাবে না। কেবল রয়ে যাবে তার অকাল প্রয়াণের বেদনা।

নুসরাতের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই দেখছেন এলাকাবাসী। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করলেন তারা।

রাফির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। তার ময়নাতদন্তের জন্য তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। গত বুধবার রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাফি।

আজ বৃহস্পতিবার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক প্রদীপ বিশ্বাস গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, ময়নাতদন্তের পাশাপাশি রাফির মরদেহ থেকে ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে।

দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী ও আলিম পরীক্ষার্থী রাফি গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।