পাহাড়ে উচ্চ শিক্ষা বাস্তবায়নে: বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়

0
1038

পাহাড়ে উচ্চ শিক্ষা বাস্তবায়নে: বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়

দখিনা ডেস্ক: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উচ্চ শিক্ষা লাভের নতুন একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে দেশের শততম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনুমতি পাওয়া বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় । বান্দরবানে এই বিশ্ববিদ্যালয় যেন একটি স্বপ্নের নাম।

২০১৮ প্রথমদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদ , স্থানীয় শিক্ষাঅনুরাগী ও সমাজসেবকের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা উদ্যোগ  নেয়া হয় । তাঁদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বান্দরবান শিক্ষা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন।’ বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও ‘বান্দরবান শিক্ষা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত যৌথ চুক্তির মাধ্যমে দেশের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা পাবলিক প্রাইভেট প্রজেক্ট হিসেবে পরিচালিত।সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বান্দরবান শিক্ষা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন বিনিয়োগের ৭৫ শতাংশ এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ২৫ শতাংশ বহন করবে। সে অনুযায়ী জমি ক্রয় এবং স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে।

২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বান্দরবান শহরে একটি অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ৭৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়। অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বান্দরবানবাসীর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়টির উচ্চশিক্ষার সূচনা তবে সূয়ালক ইউনিয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেখানেই স্থানান্তরিত হবে যাবতীয় কার্যক্রম। প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রার কয়েক মাসের মধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শুরু করেছে । প্রায় ১০০ একর নিয়ে পাহাড়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির দৃষ্টি নন্দন মহা পরিকল্পনা চলছে ।

বছরে দুটি করে সেমিস্টার ভিত্তিতে প্রতিটি ব্যাচে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে । বহুতল ভবনের তিনটি ফ্লোরে অস্থায়ী এ ক্যাম্পাসে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রমের অফিসগুলো । ক্লাস রুম, লাইব্রেরি , ক্যাফেটেরিয়া। ভিসি অফিস, শিক্ষক কক্ষ এবং প্রশাসনিক অফিস  ।

ইংরেজি সাহিত্য, ব্যবসা প্রসাশন, সমাজ ও নৃ-বিজ্ঞান, গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং -এ বিষয়ে পাঠদানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে শিক্ষা কার্য্যক্রম । এছাড়াও গন মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, হোটেল ও পর্যটন, আইন সহ আরও কয়েকটি প্রস্তাবিত বিষয় অনুমোদনের অপেক্ষায় । দুটি কম্পিউটার ল্যাব ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সবধরনের বই নিয়ে নজর কাড়ার মত লাইব্রেরি সাথে ইন্টারনেট যুক্ত কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে । ক্যম্পাস যুড়ে  ওয়াই ফাই সংযোগের আওতায় আনা হয়েছে।

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নুরুল আবছার জানান, চট্টগ্রামের চন্দনাইশে এবং কক্সবাজার ছাড়া মধ্যখানের বিশাল এ অঞ্চলটিতে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তাই পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়াসহ আশপাশের এলাকাগুলোতেও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের আশার আলো জ্বলছে ।

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের কো-চেয়ারম্যান ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, আপাতত ছাত্রীদের জন্য একটি আবাসিক ব্যবস্থা আছে  , সেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ছাত্রদের জন্যে আবাস তৈরির কাজও চলছে। তিনি বলেন শির্ক্ষাথীদের যাতায়াত সুবিধার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়িক মালিক সমিতি একটি বাস দিয়েছে । তিনি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, এত অল্প সময়ের অনুমোদন পাওয়ার অর্থ  বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি আন্তরিকতা । জেলা ঘোষণার চার দশক না পেরোতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বান্দরবানবাসীর। বান্দরবানবাসীর জীবনে খুলবে স্বপ্নের সহস্র দুয়ার। তিনি বলেন, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি হবে শতভাগ আবাসিক। আর এ জন্য জেলা সদরের প্রবেশমুখ সুয়ালকে একশ একর জমি নেওয়া হয়েছে। সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস তৈরি করা হবে। তবে ‘ইটের খাঁচার মত গাদা গাদা ভবন নির্মাণ করা হবে না এ ক্যাম্পাসে। পাহাড়ের সৌন্দর্যে প্রকৃতির ছোঁয়ায় সাজিয়ে তোলা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস। পাহাড়, জলাশয়, বন-বনানী, পাখির কিচির মিচির, নির্মল হাওয়া আর শিমুল-পলাশের আগুন রাঙা উদ্যানে বেড়াতে বেড়াতে শিক্ষার্থীরা নেবে শিক্ষার পাঠ। এমন একটা বিদ্যাপীঠ গড়ার স্বপ্ন নিয়েই এগুচ্ছে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় । পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, সকলের সহযোগিতায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ১০০ একর জমির উপর বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে । এ বিশ্ববিদ্যালয় পুরো কাজ সমাপ্ত হলে এখানে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হতে পারবে এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পারবে। তিনি আরো বলেন, কোন সরকারই পাহাড়ের উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করেনি, শুধু মাত্র বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে এখানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি প্রদান করেছেন।

উল্লেখ্য শিক্ষা কার্য্যক্রমের প্রথম বৎসরে ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সুয়ালক ইউনিয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে ১শ একর জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভূমির উপর ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধন করেন বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এসময় ভাইস চ্যান্সেলরের অধ্যাপক ড. এ এফ ইমাম আলী, ট্রাস্টি বোর্ড এর  সদস্যবৃন্দ,  পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মো. ইয়াছির আরাফাত, শিক্ষক-শিক্ষাথীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।