কোষাগারের কোটি টাকা আত্মসাত, প্রোগ্রামার বরখাস্ত

0
828

সরকারি কোষাগার থেকে এক কোটি ২৭ লাখ টাকা জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (সিজিএ) প্রোগ্রামারকে বরখাস্ত করেছে সরকার। কোষাগার থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার ৬টি ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ওই টাকা স্থানান্তর করেন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনে জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিজিএ) ঢাকা এর প্রোগ্রামার (সাময়িকভাবে বরখাস্ত) বিরুদ্ধে প্রোগ্রামার হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন তার সহযোগিতায় অর্থ বিভাগের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের এসএএস সুপার সাময়িকভাবে বরখাস্ত কর্তৃক এক কোটি ২৭ লাখ টাকা জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে সরকারি কোষাগার থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখায় এসএএস সুপার-এর নিকট আত্মীয়-স্বজনের নামে ৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট এক কোটি ২৭ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে স্থানান্তর করেন। তবে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সুপার-এর সঙ্গে যোগসাজশে ডাটাবেজ সিস্টেমের আইবাস ইউজার ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ব্যাক অ্যান্ড থেকে উক্ত অর্থ স্থানান্তর সংক্রান্ত ডাটা মুছে দিতে সহায়তা করেন।

এ সংশ্লিষ্ট তথ্য মুছে ফেলা ও সরকারি কোষাগার থেকে এক কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতে সহযোগিতা করেন বিধায় প্রোগ্রামারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর ৩(ডি) অনুযায়ী (বর্তমানে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩ (ঘ)) অভিযুক্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ বিবরণী ও অভিযোগনামা জারি করা হয়। তাই অর্থ বিভাগ গত ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট মো. সিদ্দিকুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।

এদিকে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীর লিখিত জবাব এবং শুনানি সন্তোষজনক না হওয়ায় অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুর রহমানকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা রয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন। তদন্ত প্রতিবেদন জানা গেছে, প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র এবং অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় একই বিধিমালার ৪ এর ৩ (ঘ) অনুযায়ী চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ গুরুদণ্ড আরোপের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তারপর একই বিধিমালার ৭ (৯) অনুযায়ী ২য় কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। উক্ত নোটিশের লিখিত জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল)  বিধিমালা ২০১৮ এর ৭ (১০) এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পরামর্শকরণ) রেগুলেশন, ১৯৭৯ এর ৬ নং রেগুলেশন অনুযায়ী মো. সিদ্দিকুর রহমানকে চাকরি হতে বরখাস্তকরণ গুরুদণ্ড আরোপের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনকে পরামর্শ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। কমিশন এ বিষয়ে একমত পোষণ করে।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের মতামত, বিভাগীয় মামলার সকল বিধিবিধান ও প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং মামলার সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩ (ঘ) অনুযায়ী দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে একই বিধিমালার ৪ এর ৩ (ঘ) অনুযায়ী সরকারি চাকরি হতে বরখাস্ত করার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সদয় সম্মতি গ্রহণ করা হয়। ফলে সিজিএ কার্যালয় ঢাকার প্রোগ্রামারকে (সাময়িকভাবে বরখাস্ত) সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৪ এর ৩ (ঘ) অনুযায়ী সরকারি চাকরি হতে বরখাস্তকরণ গুরুদণ্ড প্রদান করা হলো।