ভারত থেকে বাংলাদেশীদের তাড়ানোর দাবিতে মুম্বাইতে লক্ষাধিক মানুষের মিছিল ও জনসভা

0
675

ভারত থেকে কথিত অবৈধ বাংলাদেশীদের তাড়ানোর দাবিতে দেশের বাণিজ্যিক নগরী রাজধানী মুম্বাইতে আজ রবিবার ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২০ লক্ষাধিক মানুষের মিছিল ও জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ওই রাজ্যের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ‘মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা’ দেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের দাবিতে ও নতুন নাগরিকত্ব নাইনের সমর্থনে এই জনসভার ডাক দিয়েছিল। আর সেখানে দলনেতা রাজ ঠাকরে ঘোষণা করেছেন “ভারত কোনও ধর্মশালা নয়, এখান থেকে বাংলাদেশী ও পাকিস্তানিদের তাড়িয়েই ছাড়া হবে।”

কথিত বাংলাদেশীদের দেশছাড়া করার বিষয়টি ভারতে একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে বেশ কিছুকাল ধরেই। কিন্তু সেই ইস্যুতে এত বড় মাপের রাজনৈতিক কর্মসূচী এই প্রথম হল। মুম্বাইয়ের গোরেগাঁওতে হিন্দু জিমখানা গ্রাউন্ড থেকে শহরের দক্ষিণ প্রান্তে আজাদ ময়দান পর্যন্ত রাজ ঠাকরের দল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা এদিন যে বিশাল পদযাত্রার আয়োজন করেছিল, ওই শহরে এত বড় মাপের জমায়েত অনেকদিন হয়নি।

বিবিসি মারাঠির সংবাদদাতা ময়ূরেশ বলছিলেন, “দলের গেরুয়া পতাকা নিয়ে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক এদিন যেন মুম্বাইকে গেরুয়াতে রাঙিয়ে তুলেছিলেন। অচল হয়ে গিয়েছিল মেরিন ড্রাইভ।” “আর এই জনসভার প্রধান দাবিই ছিল ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করা বাংলাদেশী ও পাকিস্তানিদের এদেশ থেকে তাড়াতে হবে।” উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের ভাইপো রাজ ঠাকরে শিবসেনা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের দল ‘মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা’ গড়েছিলেন প্রায় চোদ্দ বছর আগে।

এতদিন মারাঠা জাতীয়তাবাদই ছিল তার প্রধান রাজনৈতিক অস্ত্র, কিন্তু ইদানীং তিনি ভাষণ শুরু করছেন ‘আমার প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনেরা’ বলে। রাজ ঠাকরে তার ভাষণে বলেন, “ভারত কোনও ধর্মশালা নয়, যে যেখান থেকে খুশি এসে যে কেউ এখানে বসে যাবে।”

“শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জলের মতোই অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করাও দেশের জন্য একটি মৌলিক ইস্যু – আর সেই জন্যই আমরা বাংলাদেশী ও পাকিস্তানিদের হঠানোর ডাক দিচ্ছি।”

“ব্রিটেন-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়াও তো অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, আর ভারত করলেই সমস্যা? আমি পরিষ্কার বলতে চাই, এই ইস্যুতে আমরাও অস্ত্র হাতে নিতে রাজি।”

মহারাষ্ট্রের নানা প্রান্ত থেকে রাজ ঠাকরের ডাকে যে হাজার হাজার সমর্থক এদিন মুম্বাইতে জড়ো হয়েছিলেন, তাদেরও মূল বক্তব্য ছিল ভারতের সামনে এখন এই অবৈধ বিদেশিরাই প্রধান বিপদ। কল্যাণ থেকে আসা গোপাল বাপটের কথায়, “আমাদের দেশটা যেন এখন পাকিস্তানি আর বাংলাদেশীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।” “এই আখড়া ভাঙতে না-পারলে ভারতের সমূহ সর্বনাশ।”

“রাজসাহেব তো ঠিকই বলছেন, ঢের হয়েছে – এদের এবার এখান থেকে বের করো, নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাও।” নাসিকের বাবাজি আমটে আবার বলছেন, “পাকিস্তান-বাংলাদেশ থেকে আসা এই সব অনুপ্রবেশকারীরা ভারতে ঢুকে গোটা দেশটাকে ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ – মানে তলায় তলায় কব্জা করে ফেলেছে।” “এরা সংখ্যায় লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি – আর এদের এখনই আরব সাগরে ছুঁড়ে ফেলে নিজের দেশে চলে যেতে বলা দরকার।” কথিত বাংলাদেশীদের তাড়ানোর ইস্যু এক সময় দিল্লিতে বিজেপির বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার ছিল।

কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালোরে বা পশ্চিম ভারতের মুম্বাইতে সেটাকে বড় ইস্যু করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে।কর্নাটকের বিজেপি সরকার যেভাবে ব্যাঙ্গালোরে বাংলাদেশী উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে বা মুম্বাইতে রাজ ঠাকরের দল যেভাবে আজ বাংলাদেশী তাড়ানোর ডাক দিয়ে বিশাল সভা করল, তাতেই সেটা স্পষ্ট।