করোনা ভাইরাস: সংকটে অর্থনীতি, মহামন্দার আশঙ্কা

0
708

দুই বিশ্বযুদ্ধ দুনিয়ার অর্থনীতিকে যে সংকটে ফেলেছিল, করোনা ভাইরাসের কারণে সেরকম সংকট দেখা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জার্মান অধ্যাপক আলব্রেশট রিচেল৷ এমনকি দেখা দিতে পারে মহামন্দা৷লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স এর অর্থনৈতিক ইতিহাসের অধ্যাপক রিচেল ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন৷

 চাহিদা কমে যাওয়া, উৎপাদনে অতিমন্দা, বেকারত্ব অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া, আর্থিক সংকট এবং তারপর প্রবল ঋণ সংকট৷ এসবই চরম অর্থনৈতিক সংকটের লক্ষণ৷এই সংকটের একেবারে শুরুতে দাঁড়িয়ে পৃথিবী । কারন বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে বিশ্ব সেদিকেই যাচ্ছে ।

১৯৩০ এর দশকের শুরুতে যে মহামন্দা দেখা দিয়েছিল এটা তার থেকেও খারাপ হতে পারে৷ তাঁর মতে বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে আছে৷ কারণ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ৷ এ অবস্থা আগে কখনো হয়নি । কোনো কিছুর সঙ্গেই বর্তমান অবস্থার তুলনা চলে না৷ সবচেয়ে কাছাকাছি কিছু বলতে হলে বিশ্বযুদ্ধের সময়ের অর্থনীতির কথা বলা যায়৷ দুই বিশ্বযুদ্ধের সময় পৃথিবীজুড়ে রেস্তোরাঁ এবং ছোট দোকান বন্ধ ছিল৷ নিশ্চিত ভাবে যুদ্ধকালীন অর্থনীতিতে নিজেদের সম্পদ বাঁচাতে মানুষ সেটা করেছিল৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক সেরকমও নয়৷ দুইয়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে৷

অধ্যাপক রিচেল বলেন, আমরা সবাই এখন এটাই ভাবছি, যখন পণ্যের যোগানে সংকট দেখা দেবে বা সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি হবে তখন কি হবে৷ সারা বিশ্বে রাজনীতিকদের মধ্যেও এক ধরনের ‍আতঙ্ক আমরা দেখতে পাচ্ছি৷ বিশেষ করে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টের আচরণে এটা বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ ইস্টারের পর আবার অর্থনীতির চাকা সচল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি নিজের চামড়া বাঁচাতে চাইছেন৷ কেউ জানে না কোথা থেকে তিনি এই বুদ্ধি পেয়েছেন৷ তবে এটা বোঝা যাচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের মতের তোয়াক্কা না করেই রাজনৈতিকভাবে ছক কষা হচ্ছে৷

বর্তমান সংকটে নানা দেশ ‍নানা অপ্রচলিত মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে, ভর্তুকি দিয়ে অর্থনীতিকে মন্দার ‍হাত থেকে রক্ষা করতে চাইছে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র৷ অর্থনীতিকে বাঁচাতে জার্মানির দীর্ঘদিনের অস্ত্র ‘শর্ট-টাইম ওয়ার্ক’ দিয়েও কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না৷ বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি এই অস্ত্রই ব্যবহার করেছিল৷ এটা অনেকটা টাকা দিয়ে আগুন নেভানোর মত৷ কিন্তু এবার এইসব ব্যবস্থা কাজে আসবে কিনা তা করো জানা নেই৷ রোগে ভোগার চাইতে রোগ থেকে বাঁচার উদ্যোগ কি বেশি বিপর্যয় ডেকে আনছে? চারিদিকে এখন এই বিতর্ক চলছে৷

নানা দেশ বর্তমান সংকট মোকাবেলায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে৷ বলা যায় নতুন মুদ্রা ছাপিয়ে তারা এটা করছে৷ ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের সময় অর্থনীতিবীদরা মুদ্রা ছাপিয়ে  সংকট মোকাবেলার কথা বলেছিলেন৷ কিন্তু তারা সবাই ভুল প্রমাণিত হয়েছেন, এমনকি আমিও সেই দলে৷ তাই এখন আমি যেটা বলতে পারি সেটা হলো, আমরা আসলেই জানি না কি হচ্ছে৷ তবে সেই ঝুঁকি আছে দ্বিগুণ হারে ৷

যে কোন সংকটে   যুগে যুগে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসে ৷ এখন আমরা বাড়িতে বসে অফিস করছি৷ আমি খুব ভালো ভাবে জানি, ভবিষ্যতে ঠিক এভাবেই বাড়িতে বসে অনেকে কাজ করবেন, এ পদ্ধতি চালু হবে৷ সব বড় যুদ্ধ, বড় সংকট কাজের ধরনে পরিবর্তন এনেছে৷প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর নারীদের কর্মসংস্থানের হার বেড়েছে৷ ট্রেড ইউনিয়ন স্বীকৃতি পেয়েছে, দিনে আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারিত হয়েছে, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়েছে৷দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শিল্পে পণ্য উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে৷ সমাজে ভোক্তা বেড়েছে, সাধারণ মানুষ উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে৷ অর্থনৈতিক সংকটের পর এভাবেই সমাজে আমূল পরিবর্তন আসে৷

এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় হতে পারে সরকারি ঋণ৷ সংকট শুরুর আগে যেসব দেশের কাঁধে ঋণের বোঝা কম ছিল তারা দ্রুত বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন৷ বাকিদের দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করতে হবে৷ ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার সময় দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলো যেভাবে নিজেদের রক্ষা করে উদাহরণ তৈরি করেছিল, আবারও সেটা হতে যাচ্ছে৷

 ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেকদেশ  নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে৷ তাই এই সংকট মোকাবেলায় উন্নতদেশের সরকার ব্যাপক আকারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে৷ কিন্তু অন্যান্য দেশের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক বিষয়ে যদি বেশি জড়িয়ে থাকে তখন একে অপরের উপর বেশি নির্ভর করতে হবে৷