বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আয়-ব্যয়ের হিসাব

0
583

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের অন্যতম সহযোগী সংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কঠিন সময় পার করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অর্থসাহায্য বন্ধ করে দেবার কথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। বিশ্বে ১৮৫ দেশে মহামারীতে আক্রান্ত প্রায় ২৩ লক্ষ, মৃত দেড়লক্ষের বেশি, মোট সংক্রমিতের সংখ্যা আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি প্রায় ৬ লক্ষের উপর এবং মৃত্যু ২৬০০০-এর বেশি, সে সময়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের ঘোষণা নিয়ে অনেক দেশ সাবধানী। তারা এ ব্যাপারে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া জানায়নি, প্রায় দেশ সংক্রমণ রোধ করা ও মহামারী মোকাবিলায় নিয়েই ব্যস্ত ।

 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আয়ের উৎস: বেশ কিছু দেশ, মানব-হিতৈষী সংস্থা, জাতিসংঘ প্রমুখ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থের জোগানদার। সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমেরিকার মত সদস্য রাষ্ট্রগুলির মোট অর্থের প্রায় ৩৫.৪১ শতাংশ জোগান দেয়, পরিকল্পিত অনুদানের পরিমাণ ২৫.৬৬ শতাংশ, মানব হিতৈষী সংস্থাগুলির কাছ থেকে আসে ৯.৩৩ শতাংশ, জাতিসংঘ সংস্থাগুলি দেয় ৮.১ শতাংশ এবং বাকিটা আসে বিভি্ন্ন মাধ্যম থেকে।অর্থ দেওয়া বাধ্যতামূলকও না থাকলেও, দেশগুলি নিজেরাই স্থির করে তারা কত পরিমাণ অর্থ দেবে।প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার অনুদান দিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে। এর পরই চীন ২ কোটি ৯ লাখ মার্কিন ডলার, জাপান ২ কোটি ১ লাখ, জার্মানি ১ কোটি ৫ লাখ এবং যুক্তরাজ্য ১ কোটি ১ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান দিয়ে আসছিল ওই সংস্থাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবচেয়ে বড় আর্থিক অনুদানকারী। সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী মোট অনুদানের ১৪.৬৭ শতাংশ দেয় এই দেশটি। আর্থিক অনুদানকারীর তালিকায় রয়েছনে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বিল গেটসের ফাউন্ডেশন বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস। তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দেন মোট অনুদানের ৯.৭৬ শতাংশ। জেনেভার একটি সংস্থা জিএভিআই এর পক্ষ থেকে দেয়া হয় ৮.৩৯ শতাংশ অনুদান। অবাক করা বিষয় হলো এই সংস্থাও পরিচালনা করেন বিল ও মেলিন্ডা গেটস।

এছাড়া যুক্তরাজ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে মোট অনুদানের ৭.৭৯ শতাংশ দেয়। জামার্নি দেয় ৫.৮৬ শতাংশ। আর চীন এই সংস্থাকে অনুদান দেয় মাত্র ০.২১ শতাংশ। চীনের থেকেও বেশি অনুদান দেয় ভারত পাকিস্তান। ভারতের আর্থিক অনুদান ০.৪৮ শতাংশ ও পাকিস্তান দেয় ০.৩৬ শতাংশ।

বিভিন্ন দেশের আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকেও আর্থিক অনুদান গ্রহন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এছাড়া সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে ফি হিসেবে আর্থিক অনুদান নেয় দেশটি। এই ফি সংশ্লিষ্ট দেশটির জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক অবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর নির্ভর করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন কর্মসূচি: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। যেমন ২০১৮-১৯ সালে এই অর্থের মোট ১৯.৩৬ শতাংশ (প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় হয়েছিল পোলিও দূরীকরণে, ৮.৭৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিষেবা যাতে সকলের কাছে পৌঁছায় সে ব্যাপারে দেখবার জন্য, ৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল প্রতিরোধযোগ্য অসুখের ভ্যাকসিনের জন্য এবং ৪.৩৬ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল মহামারী প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য।

আফ্রিকার দেশগুলি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভি্ন্ন প্রকল্পে পেয়েছিল প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ এশিয়া পেয়েছিল ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার। আমেরিকা পেয়েছিল ৬২.২ মিলিয়ন ডলার। আমেরিকা থেকেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ আসে এবং সেখানেই সবচেয়ে কম খরচ হয়ে থাকে।

 খরচের ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অগ্রাধিকার : বাৎসরিক কর্মসূচি পাস হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্তগ্রহণকারী কমিটি ওয়ার্ল়ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে। সেখানে সব দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে একজিকিউটিভ বোর্ডের তৈরি করা নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।এই অ্যাসেম্বলির মূল কাজ হল বছরে একবার জেনিভায় মিলিত হয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পলিসি স্থির করা, ডিরেক্টর জেনারেল নিয়োগ করা, আর্থিক নীতি পরীক্ষা করা এবং প্রস্তাবিত কর্মসূচির বাজেট পর্যালোচনা ও অনুমোদন করা। কোন দেশ কত পাবে তা স্থির হয় দেশগুলির পরিস্থিতির উপর । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ত্রয়োদশ সাধারণ কর্মসূচি (২০১৯-২৩)-এ বলা রয়েছে, “বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ, বিশেষ করে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের অসম উন্নয়ন একটি সাধারণ বিপদ।”