করোনা ভাইরাস: কেমন হবে এবার কোরবানির পশুর বাজার?

0
584

করোনা ভাইরাস: কেমন হবে এবার কোরবানির পশুর বাজার ?

এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ঈদ-উল-আযহা পালিত হবেপ্রতিবছর এই সময়েই দেশে গরু-ছাগল কেনা-বেচা বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। ভারত থেকে অবৈধ পথে গরু আসা অনেকটা কমে যাওয়ার পর গত কয়েক বছরে দেশজুড়ে বহু ছোট-ছোট খামার গড়ে উঠেছে যার মূল লক্ষ্য থাকে কোরবানির পশুর হাট। গ্রামাঞ্চলে বহু পরিবার শুধু কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য গরু-ছাগল লালন পালন করে। তবে এবার বাজার কেমন হবে সেটি নিয়ে অনেকের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। একদিকে পশু কেনা-বেচা, এরপর চামড়া কেনা -বেচাসহ ঈদ-উল-আযহা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গরু-ছাগল কেনা বেচা নিয়ে এক ধরণের সংকট হতে পারে বলে বিক্রেতা ও ক্রেতারা আশংকা করছেন। সবমিলিয়ে একটি বড় ধাক্কা আসতে যাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা আশংকা করছেন। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর কোরবানির জন্য দেশে এক কোটি ১৭ লক্ষ পশু ছিল। এর মধ্যে গরু ৪৫ লাখ এবং ছাগল ও ভেড়া ৭১ লাখ। এ বছরও হিসেব অনেকটা কাছাকাছি। কিন্তু এবার বাজার মন্দা হবে বলে অনেকে আশংকা প্রকাশ করছেন।

করোনার কারণে অনেকে কোথায় কোরবানি দিবে, মাংস কোথায় কিভাবে বিতরণ করবে – এসব নিয়ে চিন্তায় আছে,” মার্চ মাস থেকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে চরম স্থবিরতা নেমে এসেছে। বহু মানুষ হয়তো চাকরি হারিয়েছে নতুবা তাদের আয় কমে গেছে। যাদের আয় আছে তারাও স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে পশু কোরবানি দেবার ক্ষেত্রে অনেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

পশুর হাটে করোনা ছড়ানোর সর্বনাশের ষোলকলা: এবার করোনার মধ্যেও সারাদেশে কোরবানির পশুর হাট বসবে৷ তবে স্বাস্থ্যবিধি যাতে মানা হয় সেদিকে কঠোর নজরদারি করা হবে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা৷ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কারণে কোরবানি ও কোরাবানির পশু বিক্রি বাদ দেয়া যাবে না৷ কিন্তু হাট বসিয়ে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দুটে একসাথে অসম্ভব । এটা যদি করা হয় তাহলে এই করোনায় পশুর হাটেই সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হবে বলে মনে করেন অনেকে৷’’ গত রোজার ঈদেও দোকানপাট খোলার সময় একই কথা বলা হয়েছে৷ ব্যক্তিগত পরিবহণের নামে মানুষকে ঢাকা ছাড়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ এর কারণে ঈদের পরে করোনার প্রাদুর্ভাবও বাড়তে শুরু করে৷ এবার খোলা মাঠে গরুর হাট বসানো হলে আরো বড় সর্বনাশ হতে পারে বলে মনে করেন তারা৷

কোরাবানি অর্থনীতি: অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্রামীণ অর্থনীতির সাথে কোরাবানির পশুর হাটের একটা যোগ আছে৷ বাংলাদেশের চামড়া শিল্পও অনেকটা নির্ভরশীল কোরাবানির ওপরে৷ পরিকল্পনা করে করোনায় অর্থনীতি সচল রাখা যেতে পারে৷ কিন্তু এভাবে হাট বাজার খুলে দিলে শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিও বাঁচবে না, মানুষও বাঁচবে না৷ তাই বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে ৷ এই অর্থনীতিবিদরা বলেন, ‘‘এখনও সময় আছে, তাই পরিকল্পনা করে কোরবানির পশুর অনলাইন বাজার ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালি করতে হবে৷ কৃষক এবং ব্যাপারীদের কাছ থেকে গরু সংগ্রহের চেইন গড়ে তুলতে হবে৷ যেভাবে এবার শাক-সবজি, খাদ্য শস্য সংগ্রহ করা হয়েছে৷’’ যতদূর সম্ভব কসাইখানার ব্যবস্থা করতে হবে৷ গ্রামেও পশু কোরবানির জন্য নিয়ম করে দিতে হবে বলে মনে করেন অনেক গবেষক৷

হাটের প্রতি কেন এত আগ্রহ : কোরবানির হাটকে ঘিরে চলে বড় ধরনের বাণিজ্য৷ এরসাথে বিপুল মধ্যস্বত্বভোগী জড়িত৷ হাটের ইজারা, হাসিল, গরুর ট্রাক বা ট্রলার থেকে চাঁদা আদায়ে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকেন৷ হাট না বসলে বা কম বসলে তাদের আয়ে টান পড়বে৷ তাই হাট বসানোতে আগ্রহ অনেকের৷ বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরেই অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট চালু হয়েছে৷ এছাড়া মাংস বাজারজাত করার আধুনিক প্রতিষ্ঠান এবং খামার গড়ে উঠছে৷ এবার তা আরো সম্প্রসারিত বা জোরদার করা নিয়ে মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের কোনো আগ্রহ নেই৷ সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার বার্ষিক একটি বড় আয়ও আসে কোরবানির গরুর হাট ইজারা দিয়ে৷ স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও এই হাট থেকে বেশ আয় করেন৷ ঢাকার দুই সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনলাইন গুরুর হাট নিয়ে তারা চিন্তা করেননি৷

অনলাই হাটবাজার : ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এরইমধ্যে কোরবানির অনলাইন পশুর হাট নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ একশরও বেশি অনালইন হাট আছে৷ তবে যাতে প্রতারণা না হয় সেদিকেও তারা জোর দিচ্ছেন৷ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘‘এবার আমরা অনলাইন হাট ছাড়াও চেষ্টা করছি কোরাবানির পশু জবাই যেন যত্রতত্র না হয় তার ব্যবস্থা করতে৷ হাট বসলে সেখানেই কসাইখানা৷ আর অনলাইনে পশু বিক্রি করলেও তাদের মাধ্যমেই কোরবানির ব্যবস্থা করা৷’’

 শুধু পশুর হাট নয়, প্রচলিত পদ্ধতিতে পশু কোরবানি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে৷ সারা দেশের জেলা উপজেলায়ও পশুর অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়৷ বাস্তবে অনুমোদনের বাইরেও কোরবানিতে আরো অনেক হাট বসে৷ সব মিলিয়ে এই হাটের সংখ্যা সারাদেশে পাঁচ হাজারের কম নয়৷ জানা গেছে, সারাদেশেই কোরবানির হাটের জন্য একটি স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করছে৷ তার আগেই চূড়ান্ত হবে স্বাস্থ্যবিধি৷ সাধারণত কোরবানির আট-দশ দিন আগে পশুর হাট বসে৷ কিন্তু সারাদেশ থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন হাটে পশু নেয়া শুরু হয় তারও দশ-বার দিন আগে৷ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই বা ১ আগষ্ট বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে৷