শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করল আমেরিকা

0
673

শিক্ষার্থিদের ভিসা বাতিল করছে অ্যামেরিকা ; করোনা ভাইরাসের নামে বিদেশি কর্মীদের পরে বার বিদেশি শিক্ষার্থিদের ভিসা নীতিও বদল করছে অ্যামেরিকা।

সোমবার ৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটিগুলোতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের ৭ হাজার ৮০০ ছাত্র-ছাত্রীসহ বিশ্বের ১১ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে নিজ নিজ দেশে চলে যাওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছে।

আইসিই জানিয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরতরা এ নির্দেশ অমান্য করলে তাদের গ্রেফতারের মুখোমুখি হতে হবে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী গ্রেফতারের পর সবাইকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এর আগে বিদেশিদের কাজের ক্ষেত্রে ভিসা দেওয়া নিয়ে আইন কঠোর করেছিল অ্যামেরিকা। বিদেশি কর্মীদের পরে এ বার বিদেশি শিক্ষার্থিদের ভিসা নীতিও বদল করছে অ্যামেরিকা। অনলাইন ক্লাস চললে দেশে ফিরতে হবে পড়ুয়াদের।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, করোনার কারণে প্রতিটি ইউনিভার্সিটির ক্লাস অনলাইনে করা হবে। তাই সশরীলে ক্লাসে থাকার কোনই প্রয়োজন নেই। পরিসংখ্যান বলছে, আইসিইর এ পদক্ষেপের এর ফলে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চীন এবং ভারতের শিক্ষার্থিরা। এই দুই দেশের পড়ুয়াই সব চেয়ে বেশি। এছাড়াও ভিকটিম হবে নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীসহ যারা স্বল্পমেয়াদি ট্রেনিং কোর্স (নয়-একাডেমিক অথবা ভোকেশনাল) নিতে এসেছে তারাও। মূলত দুই ধরনের ভিসা নিয়ে অ্যামেরিকায় পড়াশোনা করতে যান বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা। ননইমিগ্রান্ট এফ-১ এবং এম -১ ভিসা। অ্যামেরিকার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা অ্যাকাডেমিক কোর্স করতে যান তাঁদের এফ-১ ভিসা দেওয়া হয়। যাঁরা ভোকেশনাল কোর্স করতে যান, তাঁদের দেওয়া হয় এম-১ ভিসা।

করোনা ভাইরাস ছড়াতে শুরু করার পরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িক ভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি অনলাইনে পড়ানোর ব্যবস্থা করে। এখনও অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস চলছে। সামনেই শীতকালীন সেমেস্টার। নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস অনলাইনে করার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় । হার্ভার্ডের মতো কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ক্যাম্পাসে ৪০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ফিরতে পারেন, কিন্তু ক্লাস অনলাইনেই হবে।

এই পরিস্থিতিতেই নতুন ভিসা নীতি নিতে চলেছে মার্কিন অভিবাসন দফতর। তাদের বক্তব্য, অনলাইন ক্লাস হলে ছাত্রছাত্রীদের ভিসা দেওয়া হবে না। তাদের ফিরে যেতে নিজেদের দেশে। নতুন কোর্সের জন্যও এখন ভিসা দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ এই নিয়ম না মানলে অভিবাসন আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

অ্যামেরিকায় উচ্চ শিক্ষায় অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীদের পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশই বিদেশি ছাত্রছাত্রী। ২০১৮ সালে শুধুমাত্র বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের থেকে অ্যামেরিকার লাভ হয়েছিল ৪৪ দশমিক সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সেই লাভের কথাও আর ভাবতে চাইছে না অ্যামেরিকা।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নির্দেশ অনুযায়ী শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হলে প্রতিটি কক্ষে সর্বোচ্চ আটজনকে বসার ব্যবস্থা করা যাবে। অবশিষ্ট ২২ থেকে ২৩ জন কীভাবে ক্লাস করবেন-এমন প্রসঙ্গও উঠেছে ওইসব নীতি-নির্ধারকদের বৈঠকে।

গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে করোনার তাণ্ডব শুরুর পর থেকেই সবকিছু লকডাউনে গেছে। জুন পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্লাস নেওয়া হয় অনলাইনে। এমনকি যারা ক্যাম্পাসে অর্থাৎ ডর্মে (আবাসিক হোটেল) ছিলেন, তারাও ক্লাস করেন অনলাইনে। সেপ্টেম্বরে শুরুতে নতুন শিক্ষাবর্ষেও ক্লাসে উপস্থিত হবার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে কেউই মনে করছেন না। কারণ, গত কয়েক সপ্তাহে ৫০ স্টেটের মধ্যে অন্তত: ৩৬টিতেই উদ্বেগজনক হারে সংক্রমণ বেড়েছে। যেসব সিটি অথবা কাউন্টিতে লকডাউন শিথিল করা হয়েছিল, সেসবে পুনরায় সবকিছু বন্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ এক ধরনের অস্থিরতা পুনরায় জনজীবনকে গ্রাস করতে চলেছে

অ্যামেরিকায় করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, এই পরিস্থিতিতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে দ্রুত সমস্যার সমাধানই তাদের লক্ষ্য।