চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রানজিট পণ্যের প্রথম কনটেইনার জাহাজ

0
879

প্রায় দশ বৎসর ধরে নানা আলোচনা শেষে অবশেষে আলোর মুখ দেখল ট্রানজিট। গত বৃহস্পতিবার ১৬ জুলাই খিদিরপুরে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের বর্তমান নাম ভারতের কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বন্দর ৭ নম্বর  গেট  থেকে ট্রানজিট পণ্য নিয়ে মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০ প্রথমবারের মতো ‘এমভি সেঁজুতি’ নামের একটি জাহাজ নোঙর করেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। রড ও ডাল বোঝাই কনটেইনারগুলো দেশের সড়কপথ দিয়ে আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর হয়ে চলে যাবে ভারতের ত্রিপুরা ও আসামে। পণ্যবাহী জাহাজে টিইইউ’স টিএমটি ইস্পাত এবং দুই টিইইউ’স আসামের করিমগঞ্জের জন্য ডাল বোঝাই করা হয়েছে। এরপর জাহাজটি হলদিয়া যায়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। জাহাজটি বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের ১ নম্বর জেটিতে (বার্থ) আনা হয় ।

এনসিটির দায়িত্বে থাকা দেশের শীর্ষ টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের সিওও ক্যাপ্টেন তানভির জানান, কলকাতা-হলদিয়া থেকে আসা এমভি সেঁজুতিতে ২২১ বক্সে ৩০০ টিইইউ’স (২০ ফুট লম্বা একক) কনটেইনার রয়েছে। এর মধ্যে ২০ ফুট দীর্ঘ ৪টি কনটেইনারে ট্রানজিট পণ্য রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, মঙ্গলবার ভোরে ট্রানজিট পণ্য নিয়ে প্রথমবারের মতো একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। এখানে থাকা চার কনটেইনার পণ্য বাংলাদেশের উপর দিয়ে সড়কপথে যাবে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরাতে।

এমভি সেঁজুতি’র স্থানীয় এজেন্ট ম্যাংগো শিপিং লাইনের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, এমভি সেঁজুতি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে এনসিটিতে পৌঁছেছে। বন্দর, কাস্টমস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের মাশুল পরিশোধ শেষে চারটি ট্রেইলরে (লরি) সড়কপথে কনটেইনারগুলো আখাউড়া হয়ে ত্রিপুরা ও আসাম পাঠিয়ে দেওয়া হবে। শুল্কায়নের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে কাস্টমস। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও বিধি অনুযায়ী তাদের মাসুল আদায় করবে।

২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফরম ইন্ডিয়া’ চুক্তি এবং উক্ত চুক্তির আওতায় প্রণীত এসওপি অনুযায়ী ট্রানজিট পণ্যবাহী চারটি কনটেইনারের প্রথম ট্রায়াল রান উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এভাবে ট্রানজিট পণ্য নিলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে পণ্য পরিবহন ব্যয় কমবে অর্ধেকের বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাত ধরনের মাশুলের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি কনটেইনার থেকে ইলেকট্রিক সিলের মাশুল ছাড়া আয় করবে গড়ে ৪৮ থেকে ৫৫ ডলার (বাংলাদেশের মুদ্রায় চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা)। এর বাইরেও মাশুল পাবে বন্দর ও সড়ক বিভাগ।

ট্রানজিট কিংবা ট্রানশিপমেন্টের পণ্য পরিবহনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে সড়ক ও রেলপথে এখনও তৈরি হয়নি বাড়তি কোনো অবকাঠামো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের এই পণ্য পরিবহন অর্থনীতির জন্য সুখকর। তবে ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চট্টগ্রাম বন্দর ও সড়কপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। তারা মনে করছেন, আরও মাশুল বাড়ানোর সুযোগও রয়েছে বাংলাদেশের।