শ্রমিক দূর্ভোগ নিয়ে মন্তব্য করে মালয়েশিয়ায় আটক রায়হান কবির

0
808

মালয়েশিয়ায় করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্ভোগ নিয়ে আল জাজিরা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেয়ার অপরাধে মালয়েশিয়ার পুলিশ বাংলাদেশী নাগরিক রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করেছে।

আল জাজিরা টেলিভিশনে প্রচারিত ঐ তথ্যচিত্রে রায়হান কবির কুয়ালালামপুর কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে অনিবন্ধিত বিদেশি শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, এবং ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে শত শত অভিবাসীকে জেলে পাঠানো হয়েছে।মহামারির মধ্যে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ দু’হাজারেরও বেশি অনিবন্ধিত শ্রমিককে আটক করেছে এবং কঠোর ভাইরাস লকডাউনের মধ্যে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। ঐ ভিডিওটি প্রচারের পর থেকেই মালয় সোশাল মিডিয়াতে মি. কবিরের বিরুদ্ধে প্রবল সমালোচনা শুরু হয়। এর জেরে কর্তৃপক্ষ তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে, এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে মালয় মেইল সংবাদপত্র খবর দিয়েছে, দু’সপ্তাহ ধরে খোঁজ করার পর পুলিশ শুক্রবার সন্ধ্যায় মি. কবিরকে গ্রেফতার করেছে।পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক খাইরুল জাইমি দাউদ জানিয়েছেন যে রায়হান কবিরকে  এখন বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে এবং ভবিষ্যতে তাকে আর মালয়েশিয়ায় ঢুকতে দেয়া হবে না।

আল জাজিরা গত ৩রা জুলাই ‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়াস লকডাউন’ নামে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করে। প্রায় ২৬ মিনিটের ঐ ডকুমেন্টারিতে মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া অবৈধ শ্রমিকদের বেহাল দশার কথা তুলে ধরা হয়।

শুক্রবার গ্রেপ্তারের ঠিক আগে রায়হান কবির নিজের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ঢাকার এক ইংরেজি দৈনিকে বলেন, “আমার অপরাধটা কী? আমি তো কোনও মিথ্যা বলিনি। প্রবাসীদের ওপর যে বৈষম্য ও নিপীড়ন চলেছে, আমি শুধু সেই কথাগুলো বলেছি।”আমি চাই প্রবাসে থাকা কোটি বাংলাদেশি ভালো থাকুক। আমি চাই পুরো বাংলাদেশ আমার পাশে থাকুক।”

আল জাজিরা টেলিভিশন রায়হান কবিরের গ্রেফতার নিয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য না করলেও তারা রায়হানের বিরুদ্ধে আনা ফৌজদারি অভিযোগগুলি তুলে নেয়ার ডাক দিয়েছে। এক রিপোর্টে আল জাজিরা তাদের রিপোর্টের সত্যতা সম্পর্কে জোরালো বক্তব্য রেখেছে। চ্যানেলটি জানিয়েছে, এই ঘটনায় পুলিশ তাদের একদল সাংবাদিককে কঠোরভাবে জেরা করেছে। মালয়েশিয়ার পুলিশের আইজি তানশ্রি আব্দুল হামদি বাদর জানিয়েছেন, পুলিশ এবং অ্যাটর্নি জেনারেরেলের দফতর আল জাজিরার ডকুমেন্টারিটি বিশ্লেষণ করেছে এবং তাতে ‘অনেক রাষ্ট্রদ্রোহিতার উপকরণ‌’ রয়েছে বলে মনে করছে।

রায়হান কবিরের গ্রেফতারের ব্যাপারে বিবিসির তরফ থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এনিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু জানিয়েছেন যে তিনি একটি ‘বিশেষ পরিবেশের’ মধ্যে আছেন। কিন্তু সেটা কি তার কোন ব্যাখ্যা জানা যায়নি।

গ্রেফতার হওয়ার পর বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যে কনসুলার সেবা কবিরের পাওয়ার কথা, তিনি সেটা পেয়েছেন কিনা, তাও জানা যায়নি।