কিভাবে বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো কোম্পানি বিশ্লেষণ করতে হয়

0
247

কিভাবে বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো কোম্পানি বিশ্লেষণ করতে হয়

 শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার পূর্বে একটি ভালো কোম্পানি কিভাবে বিশ্লেষণ করে বের করতে হয় তা আমাদের জানা দরকার। যারা ভালো কোম্পানি বাছাই করতে জানেন তাদের জন্যে বাজার ভালো বা খারাপে কিছু যায় আসে না, মন্দাবাজারেও তারা ঠিকই মুনাফা বের করে নিতে পারেন। তাই প্রত্যেক বিনিয়োগ কারীর জন্য ভালো কোম্পানি বের করার সূত্র জানতে হবে।

অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই পুঁজিবাজার বিশ্লেষণ সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা না থাকায় তারা গুজবে কান দেন, বড় ভাইদের তথ্যের উপর নির্ভরশীল হন, আইটেমবাজদের পাল্লায় পড়েন, আবার কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারণায় প্রলুব্ধ হয়ে আইটেম কিনেন। সর্বশেষ তারা নিঃস্ব হয়ে পুঁজি বাজার ত্যাগ করেন এবং বাজার সম্পর্কে নেতি বাচক ধারনা পোষণ করেন।

সব চেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, তুমি কি করছ সেটা না জানা”ওয়ারেনবাফেট

Background of Company: একটি প্রতিষ্ঠান যখন গড়ে উঠে তখনই তার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ পূর্বক পরিচালনা করে থাকে। দীর্ঘ দিন ধরে এভাবে প্রতিষ্ঠানটি তার নির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পরিচালিত হতে থাকে। বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান দুই ধরনের সম্পদ (দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান) অর্জন করে থাকে এবং সুনাম অর্জন করতে থাকে।কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগর জন্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের দেখতে হবে প্রতিষ্ঠানের মুনাফার ধারাবাহিকতা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও লক্ষ্য, কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য বা সেবা গ্রহীতার আকার, ভবিষ্যতে মার্কেট বড় হওয়ার সম্ভাবনা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা দেখা। সর্বোপরি কোম্পানির পরিচালক বৃন্দের অবস্থা, তাদের ব্যবসায়ীক দূরদর্শিতা, পরিচালকবৃন্দের মধ্যে কোন মতানৈক্য আছে কিনা এবং, তাদের শেয়ার ধারণের পরিমান যথাযথ আছেকিনা তা দেখতে হবে।

Product (উৎপাদিতপণ্য)কোম্পানি কি ধরনের পণ্য উৎপাদন করে উক্ত উৎপাদিত পণ্যের বাজার চাহিদা কি রকম ও ভবিষ্যতে চাহিদা কি রকম হতে পারে তা চিন্তা করতে হবে। বিনিয়োগকৃ্ত প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের মার্কেট শেয়ার কত শতাংশ। ভবিষ্যতে মার্কেট শেয়ার বাড়ার সম্ভাবনা কতটুকু আছে তা বিবেচনায় আনতে হবে। সেজন্যই কোম্পানির Product Line বিবেচনা করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

EPS, Dividend & Profit: আমাদের বিনিয়োগের জন্য নির্ধারিত কোম্পানি তার পূর্ববর্তী বৎসরগুলোতে কি পরিমান লাভ করেছে এবং তার শেয়ার হোল্ডারদেরকে নিয়মিত নগদ লভ্যাংশ প্রদান করছে কিনা তা দেখতে হবে।বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই কোম্পানির প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহপূর্বক লভ্যাংশের পরিমান, শেয়ার লভ্যাংশ প্রদানের পরিমান, বিনিয়োগ যোগ্য শেয়ারে সম্ভাব্য শেয়ার প্রতি আয় আনুপাত অর্থাৎ কোম্পানির ইপিএস দেখতে হবে।

Earning Growth & Return on Equity:আমাদের দেখতে হবে বিনিয়োগের জন্য নির্ধারিত কোম্পানির বিগত বৎসর গুলিতে আয় বৃদ্ধির প্রবনতা। অর্থাৎ প্রতি বৎসর কি পরিমান আয় বৃদ্ধি হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে বর্তমান বৎসরে সম্ভাব্য আয়ের বৃদ্ধি নির্ণয় করে দেখতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরকে দেখতে হবে কোম্পানি বিগত বৎসর গুলির ROE এবং আমরা যখন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিব তখনকার সম্ভাব্য রিটার্ন অনইকুইটি কত হতে পারে, কারন একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্যমান বাড়বে না কমবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে Earning Growth এবং Return on Equity এর উপর। সুতরাং ভালো লাভ প্রদান করা কোম্পানি সিলেক্ট করতে হবে বিনিয়োগের জন্য।

৫। Dividend Yield & Pay Out Ration: বিনিয়োগের জন্য নির্ধারিত কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগকৃ্ত প্রতি শেয়ারের বর্তমান বাজার মূল্যের বিপরীতে কি পরিমান লভ্যাংশ দেয় তা বিবেচনা করতে হবে এর মাধ্যমে। আমাদেরকে আরও দেখতে হবে পে আউট রেশিও অর্থাৎ কোম্পানিটি তার শেয়ার হোল্ডারদের জন্য বাৎসরিক যে ডিভিডেন্ট দেয় সেটা মোট আয়ের কত শতাংশ। অর্থাৎ মোট আয়ের কত অংশ ডিভিডেন্ট হিসাবে শেয়ার হোল্ডারদেরকে দিচ্ছে।

৬।P/E Ratio: বিনিয়োগের জন্য নির্ধারিত কোম্পানির পি ই রেশিও অবশ্যই দেখতে হবে।কারন উক্ত শেয়ারটির আয় অনুপাতে অতি মুল্যায়িত না অবমুল্যায়িত আছে তা বিনিয়গকারিকে অবশ্যই জানতে হবে। শেয়ারে মূল্য আয় অনুপাতে পি ই রেশিও যত কম হয় বিনিয়োগের ঝুকি ততো কম। মূল্য আয় আনুপাত হচ্ছে একটি কোম্পানির শেয়ার তার আয়ের কতগুন দামে বিক্রি হচ্ছে তার একটি পরিমাপক। এই আনুপাত ১০ থেকে ১৫ এর মধ্যে থাকলে ভাল।

৭। % of Share Holding: বিনিয়োগকারীগণকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে শেয়ার হোল্ডিং ইস্যুটি। বর্তমানে কোম্পানিটির কত শতাংশ শেয়ার পরিচালকবৃন্দ হোল্ড করে আছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীগণ কত, অন্যান্য বিনিয়োগকারীগণ কত তা দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে পরিচালক বৃন্ধের হোল্ডিং যত বেশি হবে ততো ভালো আর সাধারণ বিনিয়োগকারী গনের হোল্ডিং যত কম হবে ততো ভালো।

৮।News:বিনিয়োগের জন্য নির্ধারিত কোম্পানির প্রতিদিনকার  নিউজ আপডেট জানতে হবে। এতে কোম্পানির গতি প্রকৃতি, পরিকল্পনা, নতুন প্রোডাক্ট, আয়, বড় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি, বিভিন্ন চুক্তি, ই পি এস ইত্যাদি তথ্য সম্পর্কে জানতে হবে। উচ্চাবিলাশী কোম্পানিকে অবশ্যই বিনিয়োগের জন্য নির্ধারণ করতে হবে।

সুতরাং পুঁজি বাজারে ভালো কোম্পানি খুঁজে বের করে বিনিয়োগের বিকল্প নাই। এজন্য আমাদেরকে জানতে হবে ভালো শেয়ার কোন গুলি । ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে মুনাফা করতে না পারলেও পুঁজি হারানোর ভয় থাকেনা। এজন্য ভালো কোম্পানির শেয়ার বাছাই করার আগে বিনিয়োগকারীগণকে নিশ্চিত করতে হবে কোম্পানির অতীত ইতিহাস, এর পরিচালক বৃন্দের সততা, দক্ষতা, উৎপাদিত পণ্যের বাজার চাহিদা, কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি, ঋণ থাকলে তা মূলধনের কত অংশ, আয়-ব্যয়, শেয়ার প্রতি আয়, শেয়ার প্রতি সম্পদ, লভ্যাংশের পরিমান এবং অতীত রেকর্ড। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করলে সহজেই  একটি  ভালো কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নির্বাচন করা যায়।

আমাদের মেধাবিকাশের জন্য-বিল গেটস বলেনঃ “আপনি যদি গরিব হয়ে জম্ম নেন তবে তা আপনার দোষ নয়, কিন্তু আপনি যদি গরিব থেকেই মারা যান তবে তা আপনার দোষ”।

সুতরাং আমরা নিজের মেধা ও বুদ্ধি খাটিয়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে আর্থিক সচ্ছলটা আনয়ন করতে পারি। এভাবে আমরা পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় আর্থনীতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি।

লেখক : মোঃশাহ্‌ নেওয়াজ মজুমদার; mshahnewazmazumder@gmail.com