সরকারি চাকুরেদের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত বস্তিবাসীদের জন্যও বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বস্তিবাসীরা অতিরিক্ত ভাড়ায় থাকে। এই টাকায় তাদের জন্য মানসম্মত আবাসন দেওয়া সম্ভব।
সোমবার রাজধানীর ইস্কাটনে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত এক হাজার ৬১৭টি ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এখানে থাকবেন মন্ত্রী, সচিব ও গ্রেড ওয়ান কর্মকর্তারা।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের জন্য এক হাজার ৫১২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে সেগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। জানান, ১৬টি প্রকল্পে দুই হাজার ৩৫০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। আরও ১৩টি প্রকল্পের প্রকল্পের কাজ চলছে।
সরকারি চাকুরেদের মতো বেসরকারি চাকুরে বা অন্যরাও সরকারি আবাসনের সুবিধা পাবেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের কাছে বিক্রির জন্য ৩৩ হাজার ৫২৬ প্লট উন্নয়ন ও আট হাজার ৯২২ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে।’
‘এরই মধ্যে উত্তরায় দ্বিতীয় পর্বে ছয় হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট উদ্বোধন করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৮ হাজার ১০৫টি প্লট উন্নয়ন এবং আট হাজার ৩৯ টি ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ চলছে। সারা দেশে আরও ১৮ হাজার ১৪৮টি প্লট উন্নয়ন ও এক লক্ষ ৪১ হাজার ৬৮৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমগুলে সমাপ্ত হলে নাগরিকের আবাসন সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।’
নগরের বস্তিবাসীদের জন্যও উন্নত আবাসনের চিন্তা রয়েছে সরকারের। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বস্তিতে মানবেতর জীবন যাপন করে। কিন্তু তাদেরকে উচ্চ হারে ভাড়া দিতে হয়। বস্তির ভাড়া কিন্তু কোনো অংশে কম না। এইগুলোর অনেক খোঁজ খবর আমরা নিয়েছি।’
‘সেখানে অনেক বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে খুব কষ্ট করে তাদের থাকতে হয়। তারা ভাড়া দিয়েই থাকে তাই ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করে তাদের দেওয়া যায়। আর এই ভাড়াটা যেন তারা প্রতিদিন হিসেবে দিতে পারে বা সাপ্তাহিক হিসেবে কিংবা মাস শেষে দিতে পারে।’
‘সেই ব্যবস্থা রেখেই বস্তিবাসীর জন্য বস্তিতে না থেকে তারা যেন তাদের জন্য নির্মিত ফ্ল্যাটে থাকতে পারে সেইভাবে একটা ব্যবস্থা আমরা করব।’
ফ্ল্যাটে ভাড়া বস্তির চেয়ে বেশি হবে না আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবে ভাড়া দিয়ে থাকে সেই রকমই। খুব বেশি ভাড়া নেওয়া হবে না। কিন্তু ভাড়াতে থাকতে হবে। সেই ধরনের কিছু প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি।’
এরই মধ্যে মিরপুরে ৫৩৩ টি ফ্যাট নিমার্ণের কাজ চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরো সাড়ে ১৬ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট আমরা নির্মাণ করব। … তাদের বসবাসের ব্যবস্থাটা যেন উন্নত হয় আমার সেদিকে খেয়াল রাখব।’
ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রাখারও তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। বলেন, যেখানে যেখাবে আবাসিক ও বাণিজ্যক ভবন বা শিল্প গড়া যাবে না।
‘আর স্কুল কলেজ যাই হোক না কেন, সেগুলো কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্যে হতে হবে। তার জন্য প্রত্যেকটা উপজেলায় মাস্টারপ্ল্যান করে তার উন্নয়ন করতে হবে।’
‘রাস্তাঘাট বিল্ডিং যাই হোক, সব পরিকল্পিতভাবে করতে পারলে আমাদের এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করতে পারব। আধুনিক সুযোগ সুবিধা দিতে পারব।’
স্থাপনা তৈরির ক্ষেত্রে জলাশয় নষ্ট না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা একটি বিরাট সমস্যা। …ঢাকার যতগুলো খাল ছিল সেগুলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে, অথবা সেখানে বক্স কালভার্ট করা হয়েছে।… আজকে পান্থপথ দিয়ে আপনার যাতায়ত করেন সেটা একটা খাল ছিল। শান্তিনগর খাল ছিল, সেগুনবাগিচা খাল ছিল, ধোলাইখাল ছিল… এই খালগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাষণ হতো।’
‘মতিঝিল আজকে নামে মতিঝিল ছিল। কিন্তু আপনারা কেউ দেখেন নাই। …আইয়ুব খানের আমলে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মিলিটারি ডিক্টেটররা যখন ক্ষমতায় আসে এরা দুটি কাজ করে, একটি হলো বক্স কালভার্ট করা আর অন্যটি হলো গাছ কাটা। এই ঢাকা শহর এক সময় প্রতিটি আইল্যান্ডে এক সময় গাছ ছিল। ফুলে ফুলে ভরা থাকত।’
‘আমাদের দেশের আবহাওয়া জন্য জলাশয়গুলো বন্ধ না করতে বলব। এই যে বৃষ্টির পানিটা আমরা আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন দিয়ে পাঠাতে চাই। যে আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে পানিটা যাবে, দেখা যায় এই বৃষ্টির পানিটা যে দিকে নামবে সে জায়গাটাই পানিতে ভরে গেছে। তাহলে পানিটা নামবে কোথায়?’
ঢাকা ও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে নানা প্রকল্প চলছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ১৩ টা খাল খননের প্রকল্প নিয়েছি। আরো ২৩টা খাল খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
‘খুলনা, রাজশাহী, সিলেটসহ বিভিন্ন মহানগরগুলোতে একটি সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলো দূর করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
‘ছোটবেলায় এমনও দেখেছি এক টানা সাতদিন বৃষ্টি। …সেটা আমাদের কষ্ট দেয়, কিন্তু আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যায়, এই পানিটা পূরণ হয়। আমাদের কৃষি জমি উর্বর হয়। সব দিক থেকেই এর একটা সুফল আছে। ইতিমধ্যে আমরা বরিশাল, সিলেট, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ সিরিজ পর্যন্ত, খুলনা মহানগরীম মংলা, মাদারীপুর, রাজবাড়ী উপজেলার জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’
বিদ্যুৎ ও পানি উৎপাদনের চেয়ে কম মূল্যে সরবরাহ করা হয় জানিয়ে এগুলো ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ করারও তাগিদও দেন তিনি। বলেন, গুলশানের দুটি বহুতল ভবনের মাঝখানটাও ডাস্টবিনে পরিণত হয়ে আছে।
বিএম/এমআর