১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা দিবস বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে একটি বার্ষিক উৎসবের দিন যা ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। বিশ্বের কোটি কোটি প্রেমিক-প্রমিকারা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই পালন করে থাকেন এই দিনটি। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। যদিও অধিকাংশ দেশেই দিনটি ছুটির দিন নয় । তবে খুব কম মানুষই জানেন ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র পিছনের গল্প। কিভাবে আসল এই বিশ্ব ভালবাসা দিবসের চিন্তা।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে-এর ইতিহাস শুরু আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৭০০ বছর আগে, ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। এক কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলত। এক সময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইনের ভালবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালবাসার কথা সম্রাটের কানে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খৃষ্টাব্দের তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন। খৃষ্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে।
পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। সম্প্রতি পাকিস্তানেও ২০১৭ সালে ইসলামবিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে সেদেশের আদালত। বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে, এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।
মানবীয় ‘ভালবাসা দিবস’ নামে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে এটিকে আমদানি করেন এক বুদ্ধিজীবী। আর দিবসটিকে এভাবে প্রচলন করার ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারিতে টেলিভিশনে ভালবাসার নানা পসরা নিয়ে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভালবাসা দিবসের উন্মাদনা তৈরি করা হয়। কিশোর-তরুণ-নারী-পুরুষ হুড়মুড়িয়ে পড়ে এর পেছনে। তৈরি হতে থাকে গান, নাটক, সিনেমা। দিনটি এলেই এ উন্মাদনায় অনেকেই রাস্তায় নেমে পড়ে ভালবাসার মহড়া প্রদর্শন করতে। অথচ প্রকৃত ভ্যালেন্টাইন ডের ইতিহাসের সাথে এসবের কী সম্পর্ক আছে ?
আজ যদি ভ্যালেন্টাইন ডে পালনই করতে হয়, আসুন প্রকৃত ইতিহাস হিসেবে আমরা এদিন দৃষ্টিহীন মানুষকে আন্তরিক ভালবাসা দিয়ে একটু সেবা করি। তারা আমাদের মতো পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে পায় না; কিন্তু মনের সৌন্দর্য তো তারা অনুভব করতে পারবে। আজ ভ্যালেন্টাইন ডে-তে এটাই হোক সকলের পুষ্পবিতরণের শপথ।
উইকি