করোনার প্রভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয় কমেছে শিক্ষার্থীও পাচ্ছে না ll
করোনায় সংকটে পড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তির অনুমতি থাকলেও শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছিল ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থী। এতো সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্য হলেও তারা উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়নি।
এদিকে, শিক্ষার্থী না পাওয়ায় একদিকে ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ ঝরে পড়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। দেশে ৪৯টি সরকারি এবং ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
ভর্তি কম হওয়ার কারণে হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পছন্দের তালিকায় থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ কারণে শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।যদিও এসব শিক্ষার্থী পাশ ঘোষণার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্প্রিং’ সেমিস্টারে ভর্তি মৌসুম শেষে দ্বিতীয় দফায় ‘সামার’ সেমিস্টারে ভর্তি চলছে।
ভর্তি কম হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঝরে পড়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে নারী শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আর করোনায় চাকরি, ব্যবসা হারিয়ে অর্থসংকটে পড়া অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের আর উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে ঠিক কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে তা জানা যাবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ গ্রাম থেকে আসে। টিউশনি করে তাদের লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ চলে। করোনায় তাদের টিউশন প্রায় শূন্যের কোঠায়। ফলে এসব শিক্ষার্থী আর রাজধানী বা বিভাগীয় শহরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন না। এ কারণে শিক্ষার্থী পাচ্ছেন না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে প্রতিষ্ঠিত কিছু উচ্চ ফি ধারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র একটু ভিন্ন।
বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়ে চলতি সেমিস্টারে শিক্ষার্থী পেয়েছে ৫০-এরও নিছে। এমন অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয় আছে যেখানে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি । অথচ স্বাভাবিক সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রতি সেমিস্টারে তিনশত থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ‘শিক্ষার্থী নেই। তাই সামনের দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য অনিশ্চয়তা ছাড়া আর কিছুই নাই মনে করছে কতৃর্পক্ষ। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর অধের্কে নেমে এসেছে। যারফলে খরচ কমানোর জন্য কোন কোন কতৃর্পক্ষ শিক্ষক-কর্মকর্তাদেরকে ছুঠিতে পাঠাচ্ছে ।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির আয়ে। নামি কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পুরোনো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ ও এফডিআর উত্তোলন করে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ব্যয় মেটাচ্ছে। তবে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়েছে মহাবিপাকে।
এত অনিশ্চয়তার মধ্যে কোন ধরনের আশার বাণী না থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য রয়েছে অন্ধকারময় হতাশা, ইতিমধ্যে নতুন অর্থ বৎসরের বাজেটে অর্থ মন্ত্রি ১৫% কর আরোপের ঘোষনা করেছেন । আর ইউ.জি.সি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য জারি করেছে ভর্তি সতর্কতা । সারা বৎসর তদারকি না করলেও প্রতি বৎসর ভর্তির সময় যেন শিক্ষার্থীরা হতাশায় পড়ে সে কাজটুকু ভালই করেন ।
তবে সরকার বেসরকারি কলেজে অনার্স কোর্স বন্ধ করে দেবে—এমন ঘোষণায় বেসরকারি কলেজেও শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থী ঝরে না পড়লে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বড় একটি চাপ তৈরি হবে বলে মনে করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা।