‘স্মার্টসিটি চট্টগ্রাম’ শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠকে এলজিইডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম যা বলে গেলেন !

0
489

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে “স্মার্ট সিটি চট্টগ্রাম” শিরোনামে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি।অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শিক্ষা-উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী ও সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ, চুয়েটের উপাচার্য ড. রফিকুল আলম ও সার্দান ইউনিভাসিটির সহ-উপাচার্য নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আলী আশরাফ। গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।

চট্টগ্রামের উন্নয়নে জড়িত সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে “স্মার্ট সিটি চট্টগ্রাম” শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না করায় চট্টগ্রাম চেম্বার কর্তৃপক্ষের কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি।স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘আজকের এ আয়োজনটি অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষকে দাওয়াত না দেওয়ায় নাখোশ হয়েছেন এলজিইডি মন্ত্রী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘লতিফ সাহেব আমার ভালো বন্ধু তারা আমাকে দাওয়াত দিলেন আমি সরাসরি চলে এলাম কিন্তু এসে দেখি চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নেই, সিডিএ চেয়ারম্যানও নেই। তো আমি কার সাথে কী নিয়ে কথা বলবো। এটা আমাকে মূল্যায়ন নাকি অবমূল্যায়ন করা হলো আমি জানি না।’

তিনি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘উন্নয়ন নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের সকল কাজ সক্ষমতার উপর নির্ভর করে শুরু করতে হবে। তবে স্ব-স্ব দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে সরে গেলে হবে না। দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। একে অন্যের শুধু সমালোচনা করলে উন্নয়ন আসবে না। এর জন্য কাজ করতে হবে। তাই সমালোচনা ছেড়ে কাজ করলেই উন্নয়ন সহজ হবে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটিকে স্মার্ট করার পরিকল্পনা ও কাজ দুইটি সমানভাবে করতে হবে। তবে শুধু কোনও এক জায়গার উন্নয়ন নিয়ে ভাবলে হবে না। আমাদের শরীরে শুধু হাতকে স্বাস্থ্যবান করার চেষ্টা করলে হবে না। স্বাস্থ্যবান করলে পুরো শরীরকেই করতে হবে।’

এসময় মন্ত্রী আরও বলেন, ‘শিল্প ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের উপযুক্ততা কাজে লাগিয়ে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর করতে সকল উপাদানগুলোর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এই গুরুত্ব ও সম্ভাবনা ধরে রাখতে হবে। সময়ের সাথে শহরের জনসংখ্যা ও মাথাপিছু আয় কি পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে তা প্রাক্কলন করে সমন্বিত মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে একটি দীর্ঘমেয়াদী ও সুপরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলতে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রকল্প গ্রহণে যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা ও জনসম্পৃক্ততার বিষয়টি দেখতে হবে।’

বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘স্মার্ট সিটি তৈরিতে বিভিন্ন সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনই বড় চ্যালেঞ্জ। শহর অঞ্চলের সাংসদ ও অংশীজনদের মতামত গ্রহণ করা আইনগত কাঠামোর মধ্যে এনে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যেতে পারে।’

বিশেষ অতিথি এম এ লতিফ এমপি বলেন, ‘নগর পরিচালনা করার ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের সাথে মতবিনিময়ের কোন নজির নেই। আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা পরিহার করে জনপ্রতিনিধিসহ সকল শ্রেণির পেশাজীবীদের সাথে নিয়মিত পরামর্শ করে প্রাণপ্রিয় চট্টগ্রামকে একটি সুন্দর ও স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর এবং নাগরিকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সুস্বাস্থ্য ও সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’

চিটাগাং চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘মাতারবাড়ীতে কোল টার্মিনাল, ডিপ সীপোর্ট, পাওয়ার হাব, এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেল, লালদিয়া টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, রিং রোড, মেরিন ড্রাইভ, মিরসরাইয়ে ৩০ হাজার একর জায়গাজুড়ে দেশের বৃহত্তম স্পেশাল ইকনোমিক জোন, আনোয়ারায় চীন ও জাপানের জন্য ৪০০ একর জায়গাজুড়ে দু’টি ইকনোমিক জোনসহ অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন লক্ষাধিক কোটি টাকার এসব প্রকল্পের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রাম সিটিকে স্মার্ট সিটিতে পরিণত করার লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণে এই বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে।’

প্যানেল আলোচকগণ নাগরিকদের সমস্ত সেবা নিশ্চিত করা, জনগণের মতামত গ্রহণ, নারী ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ও টেকসই নগরী নিশ্চিত করা, সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা, সব ধরণের পেশাজীবীদের সম্পৃক্ততা এবং আগামী একশ’ বছরের কথা মাথায় রেখে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে চট্টগ্রামকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাউদার্ণ ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত প্রো-ভিসি প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার এম. আলী আশরাফ। প্যানেল আলোচক হিসেবে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ, চুয়েট’র ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, ভিত্তি স্থপতি ব্রিন্ডো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি ইকবাল হাবীব, চেম্বার পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, দৈনিক ইনকিলাব’র সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন, দৈনিক ভোরের কাগজ’র সম্পাদক শ্যামল দত্ত, চট্টগ্রাম বার কাউন্সিলের প্রাক্তন সভাপতি ইফতেখার শিমুল চৌধুরী, দৈনিক সমকাল’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি, জেএফ (বাংলাদেশ)’র সিইও এ কিউ আই চৌধুরী, ওবিই, চিটাগাং ক্লাব লিমিটেডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মিয়া আবদুর রহিম, সিসিসিআই ও এফবিসিসিআই’র প্রাক্তন পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক ও বিএসআরএম’র লীড সিএসআর রুহী মুর্শিদ আহমেদ অংশগ্রহণ করেন।