চীনের রহস্যময় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া নতুন এই ভাইরাসে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৭৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। খবর এএফপির
সোমবার দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। কমিশন জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে যে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে তারা সবাই হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের অধিবাসী। এ ছাড়া চীনজুড়ে নতুন করে আরও ৭৬৯১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তবে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন আরও জানিয়েছে, আরও প্রায় ৬ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে তারা সন্দেহ করছেন। এ ছাড়া প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানেই গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কানাডাসহ ১৩ দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
চীনের বাইরে এসব দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ জন। চীন সরকার হুবেই প্রদেশসহ দেশটির ৩০টি প্রদেশ ও অঞ্চলে নাগরিকদের চলাচলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতেই এ পদক্ষেপ।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মা জিয়াওউইয়ে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নতুন ধরনের এই করোনা ভাইরাস সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শক্তি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মানুষের শরীরে এ ভাইরাসের লক্ষণ স্পষ্ট হতে এক থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত লাগতে পারে। লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার আগেই শরীরে এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, যা সেভার অ্যাকুয়িট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (সার্স ভাইরাস) চেয়ে ভিন্ন। ২০০২-০৩ সালে চীনে উৎপত্তি হওয়া সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বব্যাপী আটশ’র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
এই ভাইরাসের কারণে চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত কাটছে চীনের নাগরিকদের। হুবেই স্বাস্থ্য কমিশন বলেছেন, ভাইরাসে নতুন করে মারা যাওয়ার সবাই উহান অঞ্চলের বাসিন্দা। এই অঞ্চলেই প্রথম এই ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে।
এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ইতিমধ্যে উহানসহ দেশটির ১৪ টি শহর অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
এদিকে এই ভাইরাস ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানসহ প্রায় ৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। যা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ও শঙ্কার তৈরি করেছে।
গত ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা দেখা দেয়।
এদিকে, সপ্তাহান্তে চীনের নববর্ষকে ঘিরে বিদেশে থাকা অনেক চীনা নাগরিক দেশে ফিরছেন। তাঁরা যখন আবার ফিরে যাবেন তখন তাঁদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া চীনের ভেতরেও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। তাই বিমানবন্দরসহ রেল ও বাস স্টেশনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
২০০২ -২০০৩ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময় প্রায় ৮০০ জন মারা গিয়েছিলেন। করনো ভাইরাস নিয়েও সেরকম আশঙ্কা করা হচ্ছে।