পদ্মা সেতু বাঙ্গালীর গর্বের এবং অহংকার । এ সেতু দিয়ে চলাচলের জন্য কোটি কোটি জনতা অধীর আগ্রহে উদগ্রীব। সেতুর সাথে মানুষের আবেগ ও অহংকারের বিষয়টি জড়িত। কারন এই সেতু নির্মাণ নিয়ে ঘটেছে অপ্রত্যাশিত নানা ঘটনা; কারো কারো মতে কেউ কেউ মেতে উঠেছিল গভীর ষড়যন্ত্রে। পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান । এটি আমাদের আত্মগৌরব, সম্মান ও আত্ম অহংকার জায়গাটিকে মজবুত ভিত্তি দিয়েছে।
এক সময় পদ্মা সেতু বিষয়ক সাংবাদিকতাকে ‘স্প্যান বা পিলার জার্নালিজম’ নামে ট্রল করা হতো৷ সেই পর্ব ছাপিয়ে আরো এগিয়ে উদ্বোধনের সপ্তাহে এই সেতুকে যেন প্রতিযোগিতা করে কাভারেজ দিয়েছে গণমাধ্যমগুলো৷
বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু চীনের ডানিয়াং-কুনসান গ্র্যান্ড ব্রিজ৷ গুগলের ওয়েবে ইংরেজিতে এই সেতুটির নাম দিয়ে সার্চে মোট দুই কোটি কনটেন্ট পাওয়া যায়৷ তবে এই সেতু নিয়ে সংবাদ কনটেন্ট পাওয়া যায় মাত্র ১২০০ টি৷ ভারতের দীর্ঘতম সেতু ঢোলা সাদিয়া সেতু বা ভূপেন হাজারিকা সেতু-র ওয়েব সার্চে প্রায় ৯০ হাজার কনটেন্ট পাওয়া যায়, সংবাদ দেখা যায় প্রায় দুই হাজার৷ সেই হিসাবে পদ্মা সেতু নিয়ে সংবাদ হয়েছে কয়েকগুণ বেশি৷
গুগলের ওয়েব সার্চে বাংলায় ‘পদ্মা সেতু’ লিখে অনুসন্ধান করলে মোট ৯১ লাখ কনটেন্ট পাওয়া যায়৷ সংবাদ ফলাফল পাওয়া যায় প্রায় ৩০ লাখ৷ এছাড়া ইংরেজিতে ‘Padma Bridge’ লিখে ওয়েব সার্চেও প্রায় ৮৬ লাখের উপরে কনটেন্ট পাওয়া যায়৷ সংবাদ পাওয়া যায় প্রায় দুই লাখ ৭৭ হাজার৷
পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছিল আট বছর আগে৷ এই সময়ে ইন্টারনেটে মানুষের আগ্রহের চিত্র দেখা যাচ্ছে ‘গুগল ট্রেন্ডসের’ গ্রাফে৷ সেতুটি নিয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন চলতি জুনে উদ্বোধনকে ঘিরে৷ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে৷ সেই সময় সেতুটিতে সর্বশেষ স্প্যান বসে৷ দিনের হিসাবে ২৫ জুন উদ্বোধনের দিনই এই সেতুকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিল৷ পরের দিনই তা অর্ধেকে নেমে আসে৷
স্বাভাবিকভাবেই পদ্মা সেতু নিয়ে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশেইা৷ আট বছরের চিত্রে ইন্টারনেট সার্চে এরপরের অবস্থানে আছে মালদ্বীপ, কাতার, ওমান, বাহরাইন৷ তবে গত এক মাসে বাংলাদেশের পরে কাতার, পাকিস্তান, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পদ্মা সেতু নিয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়েব সার্চ করা হয়েছে৷
গত আট বছরে গুগলে ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি জানতে চেয়েছেন পদ্মা সেতুর স্প্যান নিয়ে৷ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ‘পদ্মা ব্রিজ প্যারাগ্রাফ’, শিক্ষার্থীদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ ‘পদ্মা ব্রিজ পিলার’, ‘টোলের হার’ নিয়েও জানতে চেয়েছেন ব্যবহারকারীরা৷ অন্যদিকে উদ্বোধন, সরাসরি সম্প্রচারের ভিডিও নিয়ে বেশি তথ্য খুঁজেছেন তারা গত একমাসে৷ বাংলায় পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য, পিলার, খরচ, স্ট্যাটাস, উক্তি খুঁজেছেন মানুষ৷
দেশ ভিত্তিতে আট বছরে পদ্মা সেতু নিয়ে গুগলে সবচেয়ে বেশি খবর খোঁজ করা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে৷ এরপর বেশি সন্ধান করা হয়েছে নেপাল থেকে৷ তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কর্মী অবস্থান করা দেশ সৌদি আরব৷ চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য ও ক্যানাডা৷ গত একমাসে বাংলাদেশের বাইরে পদ্মা সেতু সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি খবর খুঁজেছেনে মানুষ মালয়েশিয়া, ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য ও ভারত থেকে৷
গত একমাসে ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাজ্যগুলো থেকে এই সেতু নিয়ে সবচেয়ে বেশি গুগল সার্চ হয়েছে৷ র্শীষে আছে বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত ত্রিপুরা৷ এরপর রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম ও অরুণাচল প্রদেশ৷ আগ্রহের শীর্ষে ছিল পদ্মা সেতুর টোল হার৷
গুগল ট্রেন্ডস অনুযায়ী, পদ্মা সেতু নিয়ে গত আট বছরে ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি ভিডিও খোঁজা হয়েছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে, যে স্থানটি পদ্মা সেতুকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে যুক্ত করেছে৷ এরপর সবচেয়ে বেশি ভিডিও অনুসন্ধান হয়েছে বরিশালের আটিপাড়া থেকে৷ তারপরে রয়েছে বাগেরহাট, মাগুরা, রাজশাহী৷ গত একমাসের চিত্রে শীর্ষে ছিল ঝালকাঠি৷
কোনো সেতু, মূর্তি, ভবন বা কোনো নির্মাণ নিয়ে পৃথিবীতে আলোড়িত হচ্ছে, আবেগে ভাসছে, সাম্প্রতিককালে এমন নিদর্শন কোথাও চোখে পড়ে না।
আবেগ এক বিরাট শক্তি। এই শক্তিই পরবর্তীতে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পথ সুগম করে দেয়। এর পেছনে একটিই চেতনা ছিল-আমাদের আত্মসত্তা।