বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন জায়গায় হাত দেবে না সরকার: ধর্ম উপদেষ্টা
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহী ইসলামিক ফাউন্ডেশন চত্বরে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আফম খালিদ হোসেন বলেছেন, বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন কোনো জায়গায় হাত দেবে না অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি নওদাপাড়ায় অবস্থিত আল মারকাজুল ইসলামি আস সালাফি মাদরাসা পরিদর্শন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন ।
তিনি বলেন, মসজিদ, মন্দির এবং মাজারে হামলা গর্হিত কাজ। ধর্মীয় উপাসনায় যারা হামলা চালান তারা মানবতার শত্রু। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় সাধারণ জনগণের পাশাপাশি মাদরাসার ছাত্রদের পূজার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে মন্দির পাহারা দেওয়ানো হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মাদরাসার শিক্ষক এবং ছাত্ররা কখনোই জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। এটি ছিল আগের সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দেশে বিক্ষিপ্তভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এগুলো বিতর্ক সৃষ্টির প্রয়াস। প্রধান উপদেষ্টাও বার বার বলেছেন, বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন কোনো জায়গায় আমরা হাত দেব না। আমরা হলাম অন্তর্বর্তী সরকার। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশনকে রিস্টোর করা। পলিটিক্যাল স্ট্যাবিলিটি এনসিওর করা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ইকোনমিতে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ফরেন এক্সচেঞ্জ এসেছে। আরও আসছে। এটাকে যদি আমরা আরও বাড়াতে পারি, একটা কনজিনিয়াল এটমোসফিয়ার (অনুকূল পরিবেশ) যদি তৈরি হয়, যখনই তৈরি হয়- আমরা নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত দলকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমরা বিদায় নেব।
এ সময় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে যে বিজয় এসেছে, এরপরে বিদেশি মিডিয়াতে বলা হচ্ছে- এখানে সনাতন ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম- এসব ধর্মের মানুষের ঘর-বাড়ি, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা হচ্ছে। হামলা যে একেবারে হয়নি সেটা বলব না। তবে সেটা একেবারে বিক্ষিপ্ত। এটা খুব বেশি গুরুত্ব রাখে না।
আসন্ন হজের প্যাকেজমূল্য কমানোর পরিকল্পনা আছে জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, হজের সময় হাজিরা যে টাকা দেন, তার একটি পয়সাও আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে রাখি না। তাদের সঙ্গে আমরা ৮০ জন চিকিৎসক, আরও ২০-৩০ জন নার্স সঙ্গে রাখি। ফার্স্ট এইড চিকিৎসা দেই। সৌদিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। এ খরচগুলো আমরা হাজিদের কাছ থেকে নিই না। হজের মূল যেটা খরচ- বিমান ভাড়া, সৌদি আরবে থাকা-খাওয়া এবং নিরাপত্তার জন্য সৌদি আরবকে একটা টাকা দিতে হয়। এ মাসেই সৌদি হজমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হবে। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি, তখন টাকা কমিয়ে জনগণের কাছে একটা গ্রহণযোগ্য প্যাকেজ ঘোষণা করতে চাই।
এ সময় বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ-ভারতের সুসম্পর্ক বহাল রাখতে চাই। রাজনাথ মন্ত্রীর বক্তব্য আমরা শুনেছি। কিন্তু বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট দল ভারতে গেলে হামলা করবে, এ রকম খবরও মিডিয়াতে আসছে। এটা নিয়ে আমাদের ক্রিকেট বোর্ড আছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে- ওনারা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখবে; ব্যবস্থা নেবে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে করণীয় নিয়ে বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এ সভার আয়োজন করা হয়।