গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় হচ্ছে ড. ইউনুস এর নতুন ধারণা ‘তিন শূন্য বিশ্ব’, যেখানে তিনি ধারণা দিয়েছেন আগামী বিশ্ব সকলের নিরাপদ বসবাসের উপযোগী করে তুলতে দারিদ্র হতে হবে শূন্যের কোটায়, বেকারত্ব থাকতে হবে শূন্যের কোটায়, আর গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণও হতে হবে শূন্য। আর এই তিন শূন্য কিভাবে নিশ্চিত করা যায় তার ধারণা তিনি শেয়ার করেছেন তাঁর “অ্যা ওয়ার্ল্ড অব থ্রি জিরোস” বইতে। ইতোমধ্যে তাঁর নতুন এই চিন্তাদর্শন কাজে লাগাতে শুরু করেছে বিশ্বের অনেক দেশ। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন তাঁর চিন্তার আদলে সাজাচ্ছেন তাদের সামাজিক ব্যবসা কার্যক্রম। তাঁর এই চিন্তাদর্শন যত দ্রুতগতিতে বিস্তার করছে বিশ্বব্যাপি মানুষের মধ্যে তাতে ধারণা করা যাচ্ছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তিনি আবারও নতুন করে অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়ার জন্য আলোচনায় থাকবেন।
গত কয়েক দশকে অধ্যাপক ইউনূস পৃথিবীর যে দেশেই গিয়েছেন সেখানেই সমাদৃত হয়েছেন, সমৃদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের নাম। পৃথিবীর যে প্রান্তে গেছেন সেখানেই মানুষ তাকে সর্বোচ্চ সম্মান জানিয়েছেন। এ মুহূর্তে জীবিত নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করলে প্রথম কাতারে থাকবে তাঁর নাম। সেরা পাঁচ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একজন হবেন তিনি। বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বে এ
দেশের একমাত্র গ্লোবাল আইকন কেউ হয়ে থাকলে তিনি হলে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। একশো বছরেও এমন একজন ইউনূস তৈরি করা সম্ভব নয়। ড. মুহাম্মদ ইউনুস, যিনি বিশ্বের কাছে “ড. ইউনিভার্স” নামে পরিচিত, তাঁর ক্ষুদ্র ঋণ ধারণার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচনে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছেন।
একটি নতুন এবং সাহসী ধারণা উপস্থাপন করেছেন, যা তিনি “তিন শূন্য” তত্ত্ব নামে পরিচিত করেছেন। এই তত্ত্ব তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য নিয়ে গঠিত: শূন্য দারিদ্র্য , শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নির্গমন । এই ধারণা বাস্তবায়িত হলে এটি আবারও ড. ইউনুসকে নোবেল পুরস্কারের মঞ্চে নিয়ে আসতে পারে, এবং কেননা এই থিয়োরি আমাদের বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির সমাধান হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
শূন্য দারিদ্র্য : ড. ইউনুসের “তিন শূন্য” তত্ত্বের প্রথম লক্ষ্য হলশূন্য দারিদ্র্য বা দারিদ্র্য তার অবসান । তিনি বিশ্বাস করেন যে দারিদ্র্য কেবল অর্থনৈতিক সমস্যার ফল নয়, বরং এটি একটি সামাজিক সমস্যা যা সঠিকভাবে সমাধান করা সম্ভব। ক্ষুদ্র ঋণ ধারণার মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন যে কীভাবে ক্ষুদ্র ঋণ মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পারে। এই মডেলটি দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কার্যকর একটি উপায় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এবং ড. ইউনুস এখন আরও বড় পরিসরে এই ধারণাকে প্রসারিত করতে চান, যাতে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের সম্পূর্ণ অবসান সম্ভব হয়।
শূন্য বেকারত্ব:“তিন শূন্য” তত্ত্বের দ্বিতীয় লক্ষ্য হল কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, অর্থাৎ বেকারত্বের সম্পূর্ণ অবসান। ড. ইউনুস বিশ্বাস করেন যে প্রত্যেক মানুষের কর্মসংস্থান একটি মৌলিক অধিকার, এবং এই অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তিনি সোশ্যাল বিজনেস মডেলগুলোর ওপর জোর দেন। এই মডেলগুলো লাভের পরিবর্তে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হয়, যা কর্মসংস্থান তৈরি করতে সহায়ক। ড. ইউনুস মনে করেন যে এই মডেলগুলো যদি বৈশ্বিকভাবে গৃহীত হয়, তাহলে বিশ্বের সমস্ত মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
শূন্য কার্বন নির্গমন: “তিন শূন্য” তত্ত্বের তৃতীয় এবং সর্বশেষ লক্ষ্য হলশূন্য কার্বন নির্গমন, অর্থাৎ কার্বন নিঃসরণকে সম্পূর্ণভাবে শূন্যে নামিয়ে আনা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে আমাদের গ্রহকে রক্ষা করতে হলে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস একটি জরুরি পদক্ষেপ। ড. ইউনুস বিশ্বাস করেন যে সোশ্যাল বিজনেস মডেলগুলোর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলোর প্রসার ঘটানো সম্ভব, যা কার্বন নিঃসরণ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যদি এই মডেলগুলি বৈশ্বিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমিয়ে পৃথিবীকে একটি সবুজ ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ড. ইউনুস ইতিমধ্যে তাঁর ক্ষুদ্র ঋণ ধারণার জন্য বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পেয়েছেন, এবং তিনি দেখিয়েছেন যে একজন ব্যক্তি কীভাবে বৈশ্বিক পরিবর্তন আনতে পারে। তাঁর “A World of Three Zeros” বইয়ে প্রস্তাবিত “তিন শূন্য” তত্ত্ব, যা দারিদ্র্য, বেকারত্ব, এবং কার্বন নিঃসরণের মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান প্রদান করে,এই সময়ের জন্য একটি প্রয়োজনীয় সমাধান হিসাবে দেখছে বিশ্ববাসি । যদি এটি বৈশ্বিকভাবে গৃহীত এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, নোবেল পুরস্কারের জন্য একটি শক্তিশালী প্রার্থীতা হতে পারে। তাহলে এটি তাকে আরও একবার নোবেল পুরস্কারের সম্মান এনে দিতে পারে। এই তত্ত্ব বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী একটি টেকসই, ন্যায়সংগত, এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব। তাঁর এই সাহসী এবং প্রয়োজনীয় ধারণা বিশ্বকে একটি নতুন পথে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে সকলের জন্য সমান সুযোগ, দারিদ্র্যমুক্ত এবং পরিবেশবান্ধব পৃথিবী সম্ভব হবে।