অবাঞ্চিত’ উপাচার্যের আচরনে বলির পাঁঠা শিক্ষার্থীরা
উন্নয়নের জন্য শিক্ষা স্লোগানে ২০০৩ সালে চট্টগ্রামে যাত্রা শুরু করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি’র মূল লক্ষ্য ছিলো উচ্চতর শিক্ষাকে সহজতর করা।
দীর্ঘ ২১ বৎসরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করার অভিযোগে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির (সাময়িক অব্যহতি পাওয়া) উপাচার্য অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হক’কে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অপপ্রচার, আর্থিক ক্ষতি সাধন, ইচ্ছা মতো অধ্যাপক নিয়োগ, অনুগত ও পছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিসহ নিদির্ষ্ট ১৪টি অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে কর্মরত ১৭৬ জনের যৌথ স্বাক্ষরের ভিত্তিতে উপাচার্য অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হক’কে ক্যাম্পাস থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তাদের থেকে জানা যায়, বিভিন্ন অনিয়মে অভিযুক্ত উপাচার্য মোজাম্মেল হক তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে কোনো সদুত্তর না দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অপ-প্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সেক্টরে নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার চেস্টা করে গেছেন। এ কাজে সহযোগি বেশ কিছু অনুগতদের তিনি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বারবার বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন। আর তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যের স্বীকার শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ সালে উপাচার্য পদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা পূরণ করতে না পারায় অধ্যাপক মোজাম্মেল হকে’র বিকল্প প্যানেল প্রস্তাবের নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়। তবে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ চার বছরের জন্য সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়।
সূত্রের দাবি, তাঁর এ নিয়োগে সুপারিশ ছিলো বিগত সরকারে বেশ কিছু প্রভাবশালী মন্ত্রী’র। রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিভাজন করে একটি পক্ষের হয়ে কুক্ষিগত করাই ছিলো অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের লক্ষ্য। অনিয়ম এর কারন জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভায় তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেন নি তিনি। উল্টো পরবর্তী সময় বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠান। অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদযলয় আইন ২০১০-এর ৩০(৮) অনুযায়ী উপাচার্য তাঁর কাজের জন্য বোর্ড অব ট্রাস্টিজের নিকট দায়ী থাকিবেন বলা আছে।
প্রফেসর মোজাম্মেল হক এভাবে আইন না মেনে একের পর এক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ নস্বাৎ করার চেস্টারত ছিলেন। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সিদ্ধান্তে তদন্তের র্স্বাথে মোজাম্মেল হক’কে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাঁর স্থলে বেসরকারি বিশ্ববিদযলয় আইন ২০১০-এর ৩০(৬) অনুযায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয় কোষাধ্যক্ষ ড. শরীফ আশরাফউজ্জামানকে। এর পরপরই বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অপপ্রচার শুরু করেন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। যা দৃষ্টিগোচর হলে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরতরা।
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে মোজাম্মেল হক দাবী করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অসাধু চক্র শিক্ষার্থীদের অর্থের বিনিময়ে জাল সনদ প্রদান সহ বেশ কিছু আর্থিক অনিয়মের সাথে যুক্ত। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাময়িক অব্যহতি পাওয়া উপাচার্য তাঁর বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জাল সনদে’র বিষয়ে জানান, বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জাল সনদ পাওয়া গেলেও এদের শনাক্তে আইনের আশ্রয় নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যরা যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়াই তার এই দাবীর মূল কারণ।
তবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব প্রফেসর সারওয়ার জাহান থেকে জানা যায়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে প্রদত্ত কোনো সনদ জাল এমন কোনো নজির নেই। শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন সময়কার সকল রেকর্ড সংরক্ষিত থাকায় যেকোনো সময় যে কোনো প্রতিষ্ঠান এটি যাচাই করতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন চক্র জাল সনদ তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করার চেস্টা করছে। ২০১৭ সালে জাল সনদ কান্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধ্বে আদালতে মামলা চলমান। যে কোন সময় রায় প্রকাশ হতে পারে তাই জাল সনদ কান্ডে জড়িতরা অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অপপ্রচার শুরু করেন ।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে উপাচার্যের আচরনে বিচলিত শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, এ ঘটনায় বলির পাঁঠা হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। একজন শিক্ষক নিজ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি এভাবে ক্ষুণ হলে শিক্ষাজীবন শেষে মেধার যথার্থ মূল্যায়ন পেতে প্রতিবন্ধকতার আশংকা করছেন তারা।
তবে শিক্ষার্থীদের বিচলিত হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অধ্যাপক মোজ্জামেল হক বলেন,’ছাত্র-শিক্ষক কি করবে তাদের ব্যাপার, আমার দ্বায়িত্ব যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো আমি তাই করেছি’। অপর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব প্রফেসর সারওয়ার জাহান বলছেন,’সাময়িক অব্যহতি পাওয়া উপাচার্য তাঁর অনিয়ম ঢাকতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণের চক্রান্তের সাথে জড়িত একটি চক্রে’র সাথে হাত মিলিয়ে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ।’