যেসব দেশে জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন এনেছে
বিশ্বের অনেক দেশেই রাজনৈতিকসহ নানা ইস্যুতে জাতীয় সংগীত পরিবর্তন এনেছে নানা প্রেক্ষাপটে। এপরিবর্তনগুলো সাধারণত জাতীয় উন্নতি বা নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য করা হয়।
আফগানিস্তান: দেশটিতে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা হয়। তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানে কোনো জাতীয় সংগীতই ছিল না। পরে ২০০২ সালে পুরোনো জাতীয় সংগীতকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। পরে ২০০৬ সালে তৎকালীন কারজাই সরকার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে জাতীয় সংগীতও পরিবর্তন করে।
অস্ট্রেলিয়া: ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ঘোষণার পর এই পরিবর্তন হয়। নতুন এ জাতীয় সংগীতে অস্ট্রেলিয়াকে আর ‘ইয়াং অ্যান্ড ফ্রি’ হিসেবে আর অভিহিত করার সুযোগ নেই। আদিবাসীদের সুদীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানোর অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অস্ট্রিয়া: লিঙ্গ সমতা আনার জন্য অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংগীতে ‘ছেলেরা’-এর জায়গায় ‘মেয়েরা এবং ছেলেরা’ লেখা হয়েছে। এটি করা হয় ২০১২ সালে।
জার্মানি: জাতীয় সংগীতে আরও বেশি লিঙ্গ সমতা আনার জন্য দেশটির সমতাবিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টিন রোজে-ম্যোরিং এ প্রস্তাব করেছেন। সংগীতের যে অংশে ‘ফাটারলান্ড’ অর্থাৎ ‘পিতৃভূমি’ বলা হচ্ছে, সেখানে ‘হাইমাট’ অর্থাৎ ‘জন্মভূমি’ লেখার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তবে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকেই জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করার কথা ভাবছেন না।
কানাডা: উত্তর আমেরিকার এই দেশটিও সম্প্রতি তাদের জাতীয় সংগীতকে আরও লিঙ্গ নিরপেক্ষ করেছে। সংগীতের দ্বিতীয় লাইনে ‘তোমার সব ছেলেরা’-এর জায়গায় লেখা হয়েছে ‘আমরা সবাই’।
নেপাল: ২০০৮ সালে নেপালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়। তার আগের বছর নেপালে নতুন একটি গানকে জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৬২ সালে গ্রহণ করা নেপালের আগের জাতীয় সংগীতে রাজতন্ত্রের প্রশংসা ছিল। তাই এতে পরিবর্তন আনা হয়।
রুয়ান্ডা: আফ্রিকার এই দেশটিতে ১৯৯৪ সালে মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে ওই দেশে পাঁচ থেকে ১০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। গণহত্যা-পরবর্তী রুয়ান্ডার ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে দেশটি ২০০১ সালে একটি নতুন জাতীয় সংগীত চালু করা হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা: দেশটি ১৯৯৭ সালে আগের দুটি জাতীয় সংগীত থেকে কিছু অংশ নিয়ে নতুন একটি জাতীয় সংগীত তৈরি করে। আফ্রিকান ও ইংরেজি ভাষায় গানটি রচিত। তবে আফ্রিকান ভাষার অংশটি বর্ণবাদ আমলে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীতের অংশ হওয়ায় এর সমালোচনা করেন অনেকে। নেলসন ম্যান্ডেলা সেটি রিকনসিলিয়েটরি ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণবাদ-পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকার সংগীত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
রাশিয়া: ২০০০ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভ্লাদিমির পুতিন দায়িত্ব নেয়ার পর ১৯৯০ সালের আগে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীত ফিরিয়ে আনেন। তবে গানের কথায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৯০ সালে যে জাতীয় সংগীত গ্রহণ করা হয়েছিল তাতে কোনো কথা না থাকায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অ্যাথলিটরা এর সমালোচনা করেছিলেন।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত লেখা হয়, তাও বাংলাদেশের জন্য নয় | গানের কিছু শব্দ বাক্যের ব্যবহার করেন যা মুসলমানের ধার্মিক বিশ্বাসের পরিপন্থি । তাছাড়া গানের কোথাও ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি নাই। রবীন্দ্রনাথ যখন এই কবিতা লেখে স্বাভাবিকভাবে ‘বাংলা’ বলতে বাংলাদেশকে বুঝান নি, তার এই বাংলা বলতে কবিতা লেখার সময় ভারতের বাংলা পশ্চিমবঙ্গকে বুঝায়। রবীন্দ্রনাথ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী (মাঝে মাঝে বাংলাদেশে বেড়াতে ও খাজনা তুলতে আসতো)
যে সঙ্গীত আমাদের স্বাধীনতার জন্য লেখা হয়নি, লেখা হয়েছে এমন একজনের দারা যে বাংলাদেশী না, যে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে এই সঙ্গীত লেখে নাই, আর আমরা আমাদের দেশের সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দিলাম তার এই পশ্চিম বাংলাকে নিয়ে লেখা কবিতাকে,
এই গানটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা ভাষা আন্দোলন কোন চেতনা এর মধ্যে নাই। উল্লেখ্য জাতীয় সংগীত, জাতীয় হচ্ছে রণ সঙ্গীত, যা শুনলে দেশকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার চেতনা জাগ্রত হবে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে তার বিপরীত ।
উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই নিজেদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের কাজ করেছে । অনেক দেশেই স্বাধীনতার বহু পরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করেছে। এদের মধ্যে সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া, কানাডা, মায়নামার, নেপাল, জার্মানি উল্লেখযোগ্য। এত বড় বড় দেশ যদি জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করতে পারে, তবে বাংলাদেশ কেন পারবে না ?? সময় এসেছে পরিবর্তনের। এর আগে তিন বার জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের আলাপ সরকারি পর্যায়েও হয়েছে।