বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সংস্কার প্রস্তাব
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজের সঙ্গে ১৩ দফা সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।
সম্প্রতি ইউজিসি ভবনে এক বৈঠকে সমিতির বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আগারগাঁও ইউজিসি ভবনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে ইউজিসি নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে চেয়ারম্যানকে জানানো হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতের উন্নয়নে সংস্কার করা হলে সম্ভাবনাময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ধারাবাহিক সাফল্যের পাশাপাশি বিদ্যমান কিছু সমস্যার যথাযথ সমাধান এবং সরকারি সহযোগিতা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং সুনাম বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি দেশের জাতীয় উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে অধিক সক্ষম হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।
এ সময় ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির ট্রেজারার মঈন উদ্দিন চিশতী, সদস্য কাইয়ূম রেজা চৌধুরী, ফরিদ হাবিব, তামারা আবেদ, জাভেদ হোসেন আলোচনায় অংশ নেন। সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে ১৩ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির নেতারা বলেন, উল্লিখিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা হলে দেশের বেসরকারি উচ্চশিক্ষা খাত আরও শক্তিশালী হবে এবং বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। সমিতি সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার মাধ্যমে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে সভার উল্লেখ করা হয়।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অদ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, পরিবর্তী সময়ে নতুনভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কাজ করবে। যার সুফল সবাই পাবেন। উল্লিখিত সমস্যাবলির বেশিরভাগের যৌক্তিক সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কাজ শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান তথা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
১৩ দফার প্রস্তাবনা
১. অলাভজনক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স রহিতকরণ: ক্রয়কৃত উপকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, জমি ক্রয় এবং ক্যাম্পাস ভাড়ার ওপর আরোপিত সব ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রত্যাহার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২. পিএইচডি প্রোগ্রাম ও গবেষণার অনুমোদন: সক্ষম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর অনুমতি প্রদান এবং গবেষণার অ্যাকাডেমিক ক্রেডিট অন্তর্ভুক্ত করা।
৩. দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষা ও স্বল্পমেয়াদী বিশেষায়িত কোর্স চালুর অনুমোদন: শিল্প ও অ্যাকাডেমিয়ার মধ্যে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে পাঠ্যক্রম তৈরি এবং স্বল্পমেয়াদী কোর্স চালু করা।
৪. গবেষণায় অর্থায়ন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য সরকারি তহবিল বরাদ্দ এবং উৎকর্ষতা অর্জনকারী শিক্ষকদের স্বীকৃতি প্রদান করা।
৫. র্যাঙ্কিং ও গুণগত মান নিশ্চিতকরণ: অ্যাকাডেমিক মান উন্নয়ন ও স্বীকৃতির জন্য একটি স্বচ্ছ র্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রণয়ন করা।
৬. প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস: নতুন প্রোগ্রাম, শিক্ষক নিয়োগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের প্রক্রিয়া সহজ করা।
৭. সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা: সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।
৮. স্বায়ত্তশাসন ও অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন ও অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা প্রদান করা।
৯. ইউজিসি’র আধুনিকীকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি: ইউজিসি’র কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
১০. ভিসি, প্রোভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করা: যোগ্যতাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করার প্রস্তাব।
১১. উচ্চশিক্ষাকে অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা: শিক্ষার উন্নয়নে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা।
১২. শাখা ক্যাম্পাস ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি প্রদান।
১৩. ক্যাম্পাস নির্মাণে সহায়তা: ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য সরকারি খাস জমি বরাদ্দ এবং স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা।