হলো না শেখ জামাল হলো না। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ১২০ মিনিট দাপিয়েও শেষ অবধি টাইব্রেকারের ভাগ্য পরীক্ষায় ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের শেখ জামালের। পেনাল্টি শুট আউটে ৪-৩ গোলে কলকাতা মোহামেডানের কাছে হেরে উনিশ বছর আগেরই পুনরাবৃত্তি করে এলো ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের সারা জাগানো এই দল। নাটকীয় এক ম্যাচে ভাগ্যের কাছে অসহায় শেখ জামালের জন্য নতুন ইতিহাস হয়ে রইল মরিচীকাই।
এই ম্যাচে শেখ জামাল কী খারাপ খেলেছে? একথা বলাটা অন্যায় হবে। পুরো ম্যাচে একাধিপত্য ছিল ধানমন্ডির ক্লাবটিরই। কিন্তু ফুটবল যেখানে গোলের খেলা, সেখানে গোল করে প্রথমে এগিয়ে গিয়ে সেই গোলটি ধরে রাখতে না পারার ব্যর্থতাই শেষ পর্যন্ত পুড়িয়ে মারলো মামুনুলদের। সনি নর্দের এক দুরন্ত ফ্রি-কিকে খেলার ২৫ মিনিটের সময় এগিয়ে গিয়েও সেই গোলটি শেখ জামাল ধরে রাখতে পারেনি রক্ষণের একটি ক্ষমাহীন ভুলে। রক্ষণভাগের ভুলের সুযোগে প্রথমার্ধের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে মেহরাজউদ্দিনের গোলে খেলায় ফিরে আসে কলকাতা মোহামেডান।
খেলায় ফিরে এসে উজ্জীবিত মোহামেডান দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে শেখ জামালের ওপর কিছুটা চাপ তৈরি করেছিল। কিন্তু নিজেদের গুছিয়ে শেখ জামাল ম্যাচে ফিরে আসে পুর্ণ উদ্যমেই। একদিক দিয়ে সনি নর্দে আর অন্য দিক দিয়ে এমেকা ও ওয়েডসন, সঙ্গে ছিলেন মামুনুল ও সোহেল রানা। কলকাতার মোহামেডানকে পুরোপুরিই চেপে ধরে জামাল। চাপ সৃষ্টি করলেও গোল বের করতে না পারার ব্যর্থতাই শেষ অবধি ‘ব্যয়বহুল’ হয়ে দেখা দিলো বাংলাদেশের ফেডারেশন কাপ জয়ীদের।
ম্যাচের ৮১ মিনিটে রেফারির একটি বাজে সিদ্ধান্তে লাল কার্ড দেখেন সনি নর্দে। নিজের বাজে সিদ্ধান্ত বুঝতে পেরেই কিনা একই ঘটনায় তিনি মোহামেডানের লুসিয়ানোকে লাল কার্ড দেখিয়ে পরিস্থিতির ভারসাম্য তৈরি করেন। তবে নর্দের লাল কার্ড যে শেখ জামালকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে—একথা নিশ্চিতভাবেই বলে দেওয়া যায়।
তীব্র উত্তেজনা পূর্ণ ম্যাচটিতে দুই দলই এই মুহূর্তে খেলছে দশজন নিয়ে।
আগেই বলা হয়েছে,দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই ছিল শেখ জামালের আধিপত্য। তবে কলকাতা মোহামেডানও ছোটখাট গোলের সুযোগ তৈরি করেছে। দ্বিতীয়ার্ধে সবচেয়ে সেরা সুযোগটা পেয়েছিলেন ওয়েডসন। খেলার যোগ করা সময়ে প্রায় একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে ঢুকে মোহামেডানের গোলপোস্টের ওপর দিয়ে মারেন ওয়েডন। সনি নর্দেও একবার গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন। সুযোগ পেয়েছিলেন সোহেল রানা ও মামুনুল ইসলামও।
অতিরিক্ত সময়েও ছিল জামালের প্রাধান্য। এই সময়ও ওয়েডসন একটি সুযোগ নষ্ট করেন। তাঁরই একটি গোল অফসাইডের অজুহাতে বাতিল করে দেন রেফারি।
টাইব্রেকারে জামালের পক্ষে পেনাল্টি মিস করেন আলী, লিংকন ও দিদারুল। গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলামের বদলে টাইব্রেকারে জামালের গোলবারে দাঁড়ানো জিয়াউর রহমান একটি পেনাল্টি ঠেকালেও বারে লাগে কলকাতার একটি শট। মোহাম্মদ লিংকন নিজের পেনাল্টিটি গোলে পরিণত করলেই আইএফএ শিল্ডে হাত দিতে পারতো জামাল। কিন্তু লিংকন পেনাল্টি মিস করে দুর্ভাগ্যের সূচনা করেন। দিদারুলের শেষ পেনাল্টিটি মোহামেডানের গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিলে ৪৩ বছর পর আইএফএ শিল্ড নিজেদের করে নেয় কলকাতা মোহামেডান।