ভারতকে হারাতেই চায় বাংলাদেশ

0
1052

“বাংলাদেশ যদি ভারতকে আগামীকাল (২৬ ফেব্রুয়ারি) হারিয়ে দেয়, তবে এটিকে অঘটন বলে ধরা হবে বলে মনি করি না। কারণ বাংলাদেশ এর আগেও ভারতকে হারিয়েছে। আর নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভারতকে আরো হারাবে।” ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নে এমনই উত্তর দিয়েছেন ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের তিন জয়ের দুটির নায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। চলমান এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বুধবার ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তার আগে মঙ্গলবার সকালে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সময় উপরের মন্তব্য করেন মাশরাফি। ভারতের সাথে বাংলাদেশ সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিলো দুই বছর আগে, এশিয়া কাপের সর্বশেষ আসরে। ম্যাচটিতে ধোনির ভারতকে পাঁচ উইকেটে হারানোর সুখস্মৃতি আছে মুশফিকদের।

এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে মোট ৯টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জয় মাত্র একটি ম্যাচেই। বাকি আটটিতে হারতে হয়েছে। সব মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে মোট ২৪টি ওয়ানডেতে মাত্র তিনটি জয় বাংলাদেশের। বাকি ২১টিতেই হার। একটা সময় তো এমন ছিলো যে, ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা মানেই হার। কিন্তু সে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে ২০০৪ সালের ২৬-ই ডিসেম্বরের পর থেকে। ওই দিনেই প্রথমবার বাংলাদেশ প্রমাণ করে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন যতোই ভয়ানক হোক না কেনো, তাদেরও হারানোর সক্ষমতা আছে বাংলাদেশের। মাশরাফির অলরাউন্ড পারফর্মে ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতে ১৫ রানে। বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২৩০ রানের লক্ষ্য পূর্ণ করতে গিয়ে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন মুখ থুবড়ে পড়ে ২১৪-তেই।

২০০৪ সালে র‍্যাঙ্কিংয়ের প্রায় তলানিতে পড়ে থাকা বাংলাদেশের ভারতকে হারানোটাকে বিশ্ব আখ্যায়িত করেছিলো অঘটন হিসেবে। কিন্তু তারপর অনেক জল গড়িয়েছে গঙ্গা-পদ্মায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটেও শুরু হয়ে গেছে পালা বদলের দিন। যে দিনে লাল-সবুজের ঝাণ্ডা ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা দৃঢ়তায় তুলে ধরেছেন একঝাঁক তরুণ তুর্কি। যারা প্রায় বলে কয়েই ২০০৭-এর বিশ্বকাপে হারিয়ে দিয়েছিলেন ভারতকে। যে হারের জেরে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে যেতে হয়েছিলো ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দলটিকে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে ম্যাচ বাড়তি মনোযোগ পেয়েছে ক্রিকেট বিশ্বের। সমান্তরালে বেড়েই চলেছে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের পারফর্ম করার সক্ষমতা। একে একে বাংলাদেশের কাছে হার মেনেছে অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড। সে সময়ে প্রায় সমশক্তির দল জিম্বাবুয়ে তো হারিয়েছে বাংলাদেশের সাথে লড়াই করার যোগ্যতাও। যদিও আফ্রিকান দেশটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে খুব একটা সুখকর ফলাফল আনতে পারেননি মুশফিকরা।

বাংলাদেশের দিন বদলের হাওয়া ভারতের গায়ে সর্বশেষ লেগেছে গত এশিয়া কাপের চতুর্থ ম্যাচে। শচিন টেন্ডুলকারের অবিস্মরণীয় শততম সেঞ্চুরির ম্যাচটিতে বাংলাদেশ পেরিয়েছিলো ভারতের দেওয়া ২৯০ রানের লক্ষ্য। তামিম, জহুরুল ও নাসিরের তিন হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতে নেয় ইনিংসের চার বল বাকি থাকতেই। একাদশ এশিয়া কাপের ওই আসরে শ্রীলঙ্কাকেও ধরাশায়ী করেছিলেন মুশফিকরা। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে দুই রানের ‘ট্যাজেডি’তে এশিয়ান ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। কিন্তু ফাইনালের ব্যর্থতা পুরো আসরে বাংলাদেশের দুর্দান্ত খেলাকে আড়াল করতে পারেনি। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তম সংস্করণ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রতাপ-ই বরং বেড়েছে এশিয়া কাপের ওই হারে।

এশিয়া কাপে নতুন একটি বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ের আগে জয়ের ক্ষুধায় রয়েছে দুদলই। সর্বশেষ আটটি ওয়ানডের ছয়টিতেই হেরেছে ভারত। বাংলাদেশও সীমিত ওভারের সর্বশেষ পাঁচটি ম্যাচেই হেরে গেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তবে শ্রীলঙ্কার আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজে টানা তিনটি ওয়ানডেতে জিতেছিলেন মুশফিকরা। এশিয়া কাপ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে দুদলের অধিনায়কই জানিয়েছেন, একটি জয়-ই বদলে দিতে পারে সাম্প্রতিক ব্যর্থতার চিত্র।

২৬ ফেব্রুয়ারি ম্যাচের আগে দল নিয়ে অস্বস্তি আছে দুদেশেরই। মুশফিক দলে পাচ্ছেন না তার তুরুপের প্রধান ত্রাশ সাকিবকে। ভারতের বিপক্ষে জেতা সর্বশেষ ম্যাচে তিনিই ছিলেন সেরা খেলোয়াড়। নেই তামিম ইকবালও। শেষ ম্যাচে তিনি খেলেছিলেন ৭০ রানে ম্যাচজয়ী ইনিংস। শতভাগ ফিট নন মাশরাফিও। মুশফিককে তাই ভরসা রাখতে হচ্ছে শুভ-এনামুলদের মতো তরুণদের কাঁধেই। ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির অস্বস্তিও কম নয়। চোটগ্রস্ত হয়ে ধোনির না থাকায় হঠাত আসা অধিনায়কত্বের চাপ তো আছেই, সাথে সামাল দিতে হবে প্রধান ব্যাটসম্যানের দায়িত্বও।

বুধবারের ম্যাচে ভারতের তুরুপের তাশ হয়ে উঠতে পারেন শেখর ধাওয়ান। ৩৫টি ওয়ানডে খেলে ইতোমধ্যেই তিনি করে ফেলেছেন পাঁচটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলেছিলেন তিনি। আবার বাংলাদেশের মাটিতে খেলার সুযোগ পেয়ে নিশ্চিতভাবেই জ্বলে উঠতে চাইবেন ধাওয়ান। এ ছাড়া রহিত শর্মাও জ্বলে উঠতে পারেন।

এ ম্যাচে বাংলাদেশের ভাগ্য অনেকখানিই নির্ভর করবে ওপেনিং জুটির উপর। শুভ-এনামুলের ওপেনিং জুটিতেই বোঝা যাবে কী হবে ম্যাচে। এ ছাড়া আলো ছড়াতে পারেন পরীক্ষিত পারফর্মার নাসির, গাজী ও রাজ্জাকরা। একই সাথে অনেক কিছু নির্ভর করছে ফতুল্লার রহস্যময় উইকেটের দিকেও। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের উদ্বোধনী ম্যাচে যেভাবে ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলালো ফতুল্লার উইকেট, তাতে এশিয়া কাপে আরো কিছু নাটক মঞ্চস্থ হতেই পারে নারায়ণগঞ্জের স্টেডিয়ামে।

ভারতের বিপক্ষে তিনটি জয়ের প্রতিটিতেই দলে ছিলেন মাশরাফি। এবারও তিনি আছেন। শতভাগ ফিট না থাকায় তার খেলা নিয়ে সংশয় থাকলেও, এ কথা নিশ্চিত দলকে উজ্জীবিত করতে মাশরাফি অতুলনীয়। একাদশে না থাকলেও তাই আগামীকালের ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারেন ভারতের বিপক্ষে তিন জয়ের তিনটিতেই দলে থাকা মাশরাফি। সে ক্ষেত্রে হয়তো নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারেন এশিয়া কাপে না থাকা ধোনি; বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের সম্ভাব্য হারে দলে না থাকায়। আগের তিনটি হারেই তিনি ছিলেন ভারতীয় দলে!