আমাদেরও যেতে ইচ্ছে হলো লেক পাহাড়ের গাঁ

0
931

প্রতিবারই যাওয়ার জন্য সব আয়োজন শেষ হয় তবে শেষ মুহূর্তে কোন এক অদৃশ্য কারণে আর যাওয়া হয় না। এইবার টাকা নেওয়ার সময় সিদ্ধান্ত হলো টাকা অফেরতযোগ্য হবে। অর্থাৎ ছোটবেলার স্বভাবশুলভ আচরণের মত.. গেলে… যাবে.. না গেলে, টাকা শেষ। এক কথায় টাকা দিয়ে ফেলেছিলাম, মনে একটা দূঢ় বিশ্বাস ছিল এবার সফরটা সফল করতেই হবে । এই আনন্দ সফর নিয়ে ধাপে ধাপে অনেক সভা হলো । এরপরও কেমন জানি মনে হচ্ছিল…সন্দিহান ছিলাম যাওয়া হবেতো । গত বছর কক্সবাজার যাওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেছিলাম, গাড়ি, হোটেল, কোরাস ড্রেস সব ঠিক, যেদিন যাবো সকালে আমরা ক’জন ব্যাগ গুছিয়ে শার্টিং সূটিং হয়ে এলাম; গাড়ি অফিসের সামনে দাঁড়ানো আছে, জুম্মার নামাজ পড়ে বের হবো , ঠিক সে মুহূর্তে খবর এলো সফর বাতিল। মনটা খুব খারাপ, এরমধ্যে আমাদের দল থেকে ২জন সিদ্ধান্ত নিলো বের যখন হয়েছি যাবই যাব , কিন্তু আমরা কাউকে ছেড়ে যেতে রাজি হলাম না। ওরা দু’জন চলে গেলো। হাত পা ছেড়ে দিলাম আর মনে হয় কখনো সফরে যাবার নাম নেবোনা । মন বলে কথা তবুও শত অভিমানের পর কথায় কথায় সফরে যাবার জন্য পিসপাশ হতো । এইবার আর হাল ছাড়িনি… সেই কানাকানির থেকেই ১৬ তারিখের সফরের সফলতা । অতপর সাউদার্ন পরিবার বনভোজনের একটা অধ্যায় রচিত হলো । সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যাত্রা সফল হলো তাই সবার মুখে হাসি । বিশেষ করে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ক্রীড়া বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ চৌধুরী, হেলাল ভাই, মুন্না ভাই, আলম ভাই, আরশাদ ভাই ও মিজানভাইসহ অনেকের আন্তরিক সহযোগিতা এবং ফাউন্ডার স্যার, ইসরাত ম্যাডাম ও রেজিস্ট্রার স্যারের অনুপ্রেরণায় দীর্ঘ দিনের লালিত ইচ্ছার পূর্ণতা পেলো।

আয়োজক কমিটির খুব ইচ্ছে ছিল আমাদের সকলের প্রিয় শ্রদ্ধেয় প্রতিষ্ঠাতা স্যার সফরসঙ্গী হবেন কিন্তু হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করার কারণে যেতে পারেন নি । আর সেই অপ্রত্যাশিত কারণে আমরা প্রিয় ড. ইসরাত ম্যাডামকেও মিস করলাম । আমাদের রেজিস্ট্রার স্যার শুরু থেকে আমাদের সাথে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। স্যার কথা রেখেছেন, সপরিবারে আমাদের সফরসঙ্গী হলেন। স্যারের পরিবারকে পেয়ে আমরা প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পেলাম। ফাউন্ডার স্যারের অনুপস্থিতি আমাদের যাত্রাকে মর্মাহত করলো তবে রেজিস্ট্রার স্যার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে যখন আমাদের মাঝে সংযুক্ত হলেন তখন মনটা কিছুটা শান্ত¦না পেলো।

সকাল ৭ টা…এক এক করে সহযাত্রীরা প্রিয় সাউদার্ন এর আঙিনায় পা রাখছে । সবার মাঝে অন্যরকম এক আনন্দভাব লক্ষ্য করছি, মুখে হাসি ও প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস । সাড়ে সাতটায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো। পথে পথে কিছু সহকর্মীকে নিতে হবে, সেভাবে চালককে নির্দেশনা দিচ্ছেন আয়োজক কমিটির সবচেয়ে কর্মদক্ষ ব্যক্তি আমাদের প্রিয় আলম ভাই। সর্বশেষ মঞ্জু ভাইকে নিয়ে আমাদের হাউসফুল যাত্রা শুরু । সফরের শুভ কামনায় কিছু ভাব ব্যক্ত করলেন সিনিয়ররা। তারপর শুরু হয়ে গেলো প্রতিভা বিকাশের ঝড়, কার আগে কে এ নিয়ে শুরু হয়ে গেলো দৌঁড়। গান, কবিতা, বক্তব্য, প্যারোডী, নাত, তেলাওয়াত একের পর এক প্রতিভার ফুলঝুরি। দুষ্টুমী আর রম্যরসে বাসে জমিয়ে রাখলেন আরশাদ সাহেব , তিনি নিজেও হাসেন আবার হাসাতেও পারেন। অনেক গুণে গুণান্বিত আরশাদ সাহেব স্ত্রী সাথে থাকায় যেন আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে প্রতিভার বিস্ফোরণ ঘটালেন। আমাদের চির সবুজ সাইফুল ভাই অল ইন ওয়ান অর্থাৎ একের ভিতর সব। কথায় গানে নাচে সব কিছু রয়েছে ভাঁেজ ভাঁেজ, শুধু একটু নাড়া দেওয়া, এর পর একের পর এক পরিবেশনার মাতিয়ে রাখলেন সবাইকে। ওনি আমাদের গুরুজন তবে একটা কথা না বলে পারছিনা, সাইফুল ভাই যখন নাচেন তখন চোখের সামনে বাংলা সিনেমার বিখ্যাত নায়িকা ময়ুরীর ছবি ভেসে ওঠে। কারণটা অবশ্যই শরীরের গঠনে । হেলাল ভাই গম্ভীর প্রকৃতির, সহজে কথা বের হয় না আর যদি হয় মনে হবে বাস স্টেশন থেকে ৩ নং বাস বের হচ্ছে । গানের পরিবেশটা সুন্দর হয়ে উঠে ছিলো মীর ভাবীর আঞ্চলিক গানের মধ্য দিয়ে, গানের গলা মাশাল্লাহ। গাড়ী বেশ দ্রুত বেগে রাঙামাটির পাহাড়ী আঁকাবাঁকা পথে এগিয়ে যাচ্ছে, দু’পাশে সবুজ গাছ গাছালি, যতই সামনে এগুচ্ছি ততই মনে হচ্ছিল নতুন নতুন স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করছি, একেকটা চোখের পলক যেন নতুন কোনো গল্পের পটভূমি। প্রকৃতির কোলে চড়ে পাহাড়ী ঝর্ণার গা ঘেঁষে চলে এলাম ফিসারি ঘাট। এইবার নামার পালা। মানে নতুন কিছু স্পটে যাওয়ার জন্য বোটে ওঠবো। আরশাদ সাহেব প্রস্তুত সেলফি তুলবে, সবাই একই ফ্রেমে । ফিসারি ঘাটের দৃশ্য দেখে খুব একটা মন ভরলো না তবে হ্রদের পানি ও আকাশের মিশে থাকার দৃশ্য দেখে নয়ন জুড়িয়ে গেলো। চার দিকে সবুজ পাহাড়ের সমারোহ। আকাশের একটু মন খারাপ তাই মেঘলা ভাব করে আছে। তাই ক্যামরায় ধারণ করা ছবিতে কেমন জানি বিসন্নভাব। কিছুক্ষণ পর আমাদের আনন্দ দেখে আকাশ আর মুখ কালো করে থাকতে পারলো না অর্থাৎ মেঘলা ছেড়ে সূর্যের আলোয় আলোকিত পুরো লেক। দ্বিতল বোটের উপরে সবার জন্য নাস্তা বিতরণ হচ্ছে, আমাদের আলম ভাই কিন্তু খুব সময় সচেতন লোক খাবারের ক্ষেত্রে তিনি এক মিনিটও দেরি করতে রাজি না। সবার হাতে নাস্তার প্যাকেট যাত্রা সুবলং এর দিকে , যান্ত্রিক বোটের ভট ভট শব্দ আজ আর বিরক্তির কারণ মনে হচ্ছে না বরং তা আনন্দের উপকরণ হয়ে ওঠলো। সবার চোখে মুখে আনন্দের ঝলক, বিরক্তের লেশমাত্র নেই । এদিকে ধুম পড়ে গেছে ছবি তোলা নিয়ে, যে যার মত করে নিজেকে সাজিয়ে বিভিন্ন ঢঙে সেলফি নিচ্ছে।

বিশাল লেকের জলরাশি যেন প্রকৃতির অপরূপ রূপে সেজেছে। সবুজ পাহাড়ের সাথে লেকের পানির বন্ধন যেন ভালোবাসার কথায় ব্যক্ত করছে আমাদের মনে। পাথরের পাহাড়্ দেখে পবিত্র কোরআনের সূরা নাবা’র একটি আয়াতের কথা হৃদয়কে স্পর্শ করলো। যে আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পাহাড়কে ভূমির পেরেক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ’র সৃষ্টি যে কত সুন্দর সেটার নিদর্শন হলো পাথরের পাহাড়, স্তরে স্তরে সাজানো পাহাড়ের উপর সবুজ গাছ গাছালি আস্তরণের দৃশ্য দেখে কেউ বলতে পারবেনা তিনি কোন কিছু অনর্থক সৃষ্টি করেছেন । বোট চলছে.. জেলেদের দল মাছ ধরায় ব্যস্ত , আবার কেউ কেউ বিশ্রাম নিচ্ছে তবে পাখিদের যেন কোন বিশ্রাম নেই, বুনো হাঁস আপন মনে মাছের খোঁজ করছে, বকের সারি উড়ে উড়ে কী যেন বলছে। হঠাৎ চোখে পড়লো দুর্গম পাহাড়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়া পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের। চাকরীর কারণে কত নতুন নতুন জায়গায় যেতে হয় তাদের। পাহাড়ের ঢালে ঢালে পাহাড়ীদের ঘরগুলো দেখে যে কারো ইচ্ছে হবে যেন একরাত থাকি তাদের সাথে। অবশেষে শুভলং ঝর্ণায়… বিশাল আকৃতির একটা পাথর যেন দাঁিড়য়ে আমাদের স্বাগত জানাতে তবে বর্ষাকাল না হওয়ায় ঝর্ণার পানির দেখার সুযোগ হলো না। রাঙামাটি সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে শুভলং ঝর্ণা , এটার উচ্চতা ৩০০ ফুট । সেই ৩০০ ফুট উপর থেকে পানি পড়ার দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে । ছবি তোলার হিড়িক পড়ে গেছে সবার উপর ।

এদিকে দুপুরের খাবার এর সময় হয়ে গেছে, যেতে হবে চাং পাং রেস্টুরেন্টে, আরশাদ সাহেব আমাদের এক ছাত্রের সহযোগিতায় খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। রাঙামাটি সদর থেকে কাচা লং নদী পার হয়ে চাং পাং রেস্টুরেন্ট। নদীর তীর থেকে প্রায় ২০০ ফুট উঁচুতে রেস্টুরেন্টটি, বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি, সীমানার অর্ধেকটা ফাঁকা, ওঠতে একটু কষ্ট হলেও উপরে বাতাসের বেগ আপনার মনকে প্রশান্ত করে দেবে। খাবার সামনে এলো কাতাল মাছ, বনমোরগের মাংস, টমেটোর সালাদ, ডাল, সাদা ভাত। সবাই এমনিতে ক্ষুধার্ত আর সামনে এমন মুখরোচক খাবার দেখে জিবে জল এসে গেল। আনুষ্ঠানিকতার কথা বাদ দিয়ে মুখে দিলাম। সত্যি বলতে রান্নাটা খুব চমৎকার, পেট পুরে খেলাম তবে দেশি মুরগীর মাংস একটু কম সিদ্ধ হয়েছিল । রেস্টুরেন্টের পাশে চায়ের ও তাঁতের দোকানের সামনে আনারস ও ডাব বিক্রি হচ্ছে। ডাবের পানি ও আনারস বেশ সুস্বাদু। এবার লক্ষ্য ঝুলন্ত ব্রীজ। যথারীতি নাম ডেকে নিশ্চিত করা হলো সবাই বোটেই আছে , অতপর বোট ছাড়লো , শুরু হলো শিশুদের প্রতিযোগিতা। বিচারক রেজিস্ট্রার স্যার, সাইফুল ভাই, মীর স্যার এবং সহযোগিতায় ছিলেন আলম ভাই । ছোট বাচ্চাদের মধ্যে কেউ কেউ লজ্জায় মাথা লোকাচ্ছে। একে একে সকলকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করানো গেল , একটা বিষয় না বললেই নয় আরশাদ সাহেবের ছেলে সাআদ মাশাল্লাহ সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করে সবাই মুগ্ধ করলো, এহসান মামার ছেলেও মাশাল্লাহ। সাইফুল ভাইয়ের ছেলে ইলহাম পাহাড়ী গান গেয়ে সবাই চমকে দিলো। এবার বড়দের জন্য র‌্যাফল ড্র এর আয়োজন, পরিবার নিয়ে যারা এসেছেন তাদের দিয়ে শুরু। এরপর আমরা যারা সিঙ্গেল এসেছি তারা অপেক্ষা করছি প্রথম পুরস্কারের আশায়। আমি কখনো কোন প্রাইজ পাইনি তাই ১ম পুরস্কার যে আমার কপালে জুটবেনা এটা মানসিকভাবে নিশ্চিত ছিলাম । বোট চলছে মাঝে মাঝে চর, সবুজ গাছপালা , গরুর পাল নিয়ে রাখালের ছুটে চলার দৃশ্য আমাদের বিমোহিত করে। প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে দেখতে কখন যে ঝুলন্ত ব্রীজে চলে এলাম ঠেঁরও পাইনি। সময় আসলেই তার নিয়মে চলে যাচ্ছে কিন্তু আমরা মনে হয় সে তালে চলতে পারছি না। উল্লেখ্য, রাঙামাটি শহরের শেষ প্রান্তে, কর্ণফুলী হ্রদের কোল ঘেষে ১৯৮৬ সালে গড়ে উঠেছিল পর্যটক হলিডে কমপ্লেক্স । সেখানে রয়েছে মনোরম পর্যটন মোটেল । পর্যটন মোটেল এলাকাটি ডিয়ার পার্ক নামে পরিচিত। দৃশ্যমান হ্রদের বিস্তীর্ণ জলরাশি আর দূরের নীল উচু নীচু পাহাড়ের সারি তৈরি করেছে এক নৈসর্গিক আবহ । আমার মনে হয় বাংলাদেশের এমন কেউ নেই যে এই ঝুলন্ত ব্রীজ দেখেনি, সেটা ছবি হোক কিংবা বাস্তবে। আমি এই প্রথম রাঙামাটি এসেছি ব্রীজটা দেখবো বলে । এর মূল আকর্ষণ হলো তার অবস্থানটা, চার পাশের দৃশ্য আর মনোরম পরিবেশই ব্রীজটাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এর দৈর্ঘ্য ৩৩৫ ফুট। পাহাড়ের ঊপর ছোট ছোট দোকানের বহর সাজিয়ে বসেছেন পাহাড়ি নারীরা , বাংলা ভাষা বলার ভঙ্গিটা একটু অন্য রকম । খুব মজা করে কথা বলে তারা , খুব সহজে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে । আমাদের সাখাওয়াত ভাই এক জনের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল ।

ঝুলন্ত ব্রীজের চার পাশে রয়েছে অডিটোরিয়াম , পার্ক , পিকনিক স্পট আরও অনেক কিছু কিন্তু দুর্ভাগ্য যে সময় স্বল্পতার কারণে সব দেখার সুযোগ হয়নি । ব্রীজের আশে পাশে সারি করে বাঁধা আছে স্পিটবোট, দেশি নৌকা যেগুলো সেখানকার পরিবেশ আরোও সুন্দর করেছে । এখানে বেশ কিছু সময় কাটালাম এবং সবাই যার যার মত করে ছবি তুললো। অনেকটা শেষ বিকেল এবার পলওয়েল পার্ক এর পথে যাত্রা শুরু করলাম । এই পার্কটির একটি বিশেষ কাহিনী রয়েছে। সেটা অনেকে জানে ,তার পর ও একটু জানিয়ে রাখি ২০১৪ সালের ১৯ শে মার্চ আমেরিকান প্রবাসী সালাউদ্দিন স্বস্ত্রীক রাঙামাটি বেড়াতে আসেন এবং লেকে নৌ ভ্রমণে বের হন। হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে সালাউদ্দিনের স্ত্রী নৌকা থেকে পড়ে যায় । স্ত্রীকে বাঁচাতে সালাউদ্দিনও পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুজনে নিখোজ হন। ডুবুরিরা প্রায় তিন দিন পর ২২ মার্চ পরষ্পরের আলিঙ্গনরত অবস্থায় ভাসমান লাশ উদ্ধার করেন । মৃত্যু তাদেরকে আলাদা করতে পারেনি । ভালবাসার এমন বিরল দৃশ্য রাঙামাটিসহ পুরো দেশকে শোকাহত করে। মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী ওই স্থানে গড়ে ওঠেছে পলওয়েল ন্যাচার পার্ক , এটি দেশের প্রথম নির্মিত “লাভ পয়েন্ট” এই পার্কের বিশেষ আকর্ষণ হলো বিশাল আকৃতির লাভ নকশা, কথিত আছে এই লাভ নকশাতে প্রেমিক প্রেমিকা ভালবেসে তালা ঝুলালে ভালবাসা নাকি বাড়ে ও দৃঢ় হয় । ছবি তোলার বিশেষ একটা জায়গা এটা । এই স্থানের একটু দূরেই রিজার্ভবাজার একটু যাওয়ার আশা থাকলেও সময়ের অভাবে যাওয়া হয়নি। পলওয়েল পার্ক এন্ড ক্যাফেটেরিয়া আছে যেখানে আপনি চাইলে চা কফিসহ নাস্তা সেরে নিতে পারেন। অনেক হলো এবার বাড়ি ফেরার পালা, সূর্যাস্তের লাল দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে রাত এর আগমন । মাঝ নদী থেকে এমন দৃশ্যটা অপূর্ব ছিল, দেখার মতো, মনে হচ্ছে পাহাড়ের ঐ পাশেই সূর্যি মামার দেশ । সূর্যের রক্তিম আলো আচড়ে পড়ছিল হ্রদের পানির উপর, দূর থেকে মনে হচ্ছিল কেঊ যেন লাল রঙ ছিটিয়ে দিয়েছে নদীতে । সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে জেলে ভাইদের মাছ ধরার হিড়িক পরেছে, ছোট ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে কেঊ জাল ফেলছে কেউবা জাল তুলছে, অপূর্ব দৃশ্য । ঝাকে ঝাকে বক, বুনু হাস নিজ গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে । সব মিলিয়ে এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি ।

আর দেরি নয় এইবার বাড়ি যেতে হবে, যথারীতি আলম ভাইয়ের জন গণনা শুরু হয়ে গেলো। সবাই বাসে ওঠেছে কি না। আলম ভাই এর দক্ষ পথ নির্দশনায় আমাদের যাত্রাটা খুব সুশৃঙ্খল হয়েছিল । আলম ভাইয়ের ঘোষণা এলো সবাই উপস্থিত। গাড়ি ছেড়ে দিলো চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশ্যে। সবাই একটু ক্লান্ত কিন্তু আমাদের আরশাদ ভাই এই ক্লান্তিকে ভুলে মাইক্রোফোণ হাতে ডাক দিল পিকনিকে এসে এইভাবে চুপ থাকলে কি হয়! সবাই সজোরে বলে ওঠলো না না না। এইবার ভাব প্রকাশের পালা, সফর কেমন হলো এ নিয়ে অনুভূতি জানাবেন, ব্যক্ত করবেন প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি। একে একে সবাই নিজের মতো করে অনুভূতি ব্যক্ত করলেন, শুধু একটি শব্দ খুশী । আবার সবার দৃষ্টি ছিল মীর ভাবীর দিকে , গান গাইতে হবে , শুরু হচ্ছে অনুরোধের আসর, গাইবেন আপনাদের প্রিয় শিল্পী মীর ভাবি। পাহাড়ি এলাকাগুলো যেমন সুন্দর তেমনি নামেও রয়েছে আলাদা বৈচিত্র।

আমি যেতে যেতে ভাবছিলাম উপজাতিয় জাদুঘর, পেদা টিং টিং, টুক টুক, ইকো ভিলেজ, যমচুক, নির্বাণপুর বন গবেষণা কেন্দ্র, রাজবন বিহার, ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজবাড়ি, সাজেক ভ্যালি , বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানগুলোর কথা যেখানে আমাদের যাওয়া হয়নি । মনে মনে আবার রাঙামাটি আসার পরিকল্পনা করতে করতে শহরে এসে গেলাম । দেহ এলো ঘরে কিন্তু হৃদয় পড়ে রইলো লেক পাহাড়ের গাঁয়ে…..

লেখক: কবির মুহাম্মদ আশরাফুল্লাহ
এডমিন অফিসার, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি