দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিয়াসী পর্যটকের ঢল নেমেছে। সরকারি ছুটি এবং বছরের শেষ দিন উদ্যাপন করতে পরিবার এবং নিকটজনদের নিয়ে পর্যটকেরা ছুটে আসছেন সেন্ট মার্টিনে। প্রতিদিন প্রায় ৫/৬ হাজার পর্যটক দ্বীপের বিভিন্ন হোটেল মোটেল অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ।
রাত্রিকালীন সমুদ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভোরের নির্মল হাওয়া উপভোগ, দ্বীপের নীল জলরাশি, শৈবাল, প্রবাল এবং জীবন্ত কোরাল দেখতে নদী-সাগর পাড়ি দিয়ে হাজারো পর্যটক এখন সেন্ট মার্টিনে অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে দ্বীপের শতাধিক আবাসিক হোটেল এবং কটেজসমূহ পর্যটকে প্রাণচঞ্চল।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় টেকনাফ বার্মিজ মার্কেটে দেখা যায় উপচে পড়া ভীড়। ছুটি কাটাতে আসা ওসব পর্যটক ডিসেম্বরের শুরু থেকেই হোটেলের কক্ষ বুকিং দিয়ে রেখেছেন।
হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরের শেষ দিন উদ্যাপন করতে আগে থেকে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিনের হোটেল এবং কটেজে বুকিং দিয়ে রেখেছেন। এমনকি হোটেল-কটেজ পরিপূর্ণ হলে আগত পর্যটকরা সৈকতের বালিয়াডিতেই রাত কাটাচ্ছেন।
সেন্ট মার্টিন ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জানান, প্রতি বছর কয়েক হাজার পর্যটক বছরের শেষ দিন উদ্যাপন করতে সেন্ট মার্টিনে ছুটে আসেন। নৌ ভ্রমণ এবং দ্বীপে রাত যাপনের মজাই আলাদা। বিশেষ দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে পর্যটকরাও নিকটজনদের নিয়ে প্রবালদ্বীপে এসে থাকেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পর্যটকদের বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার, কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, এলসিটি কুতুবদিয়া, গ্রীণ লাইন, দোয়েল পাখি, এমভি ফারহান, পারিজাত, আটলান্টিকসহ স্পিড বোটে করে পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিনে এসেছেন। এদের অনেকে দিনে এসে দিনে সেন্ট মার্টিন ছেড়ে চলে এসেছেন। বেশির ভাগ পর্যটক একান্তে বছরের শেষ দিন উদ্যাপন করতে প্রবালদ্বীপে অবস্থান করছেন। রাত্রিকালীন সেন্ট মার্টিনের সৌন্দর্য উপভোগ, বড়ো দিন এবং বছরের শেষ দিন উদ্যাপনে আজও অনেক পর্যটক প্রবালদ্বীপে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন।
রাজশাহী থেকে আগত এক পর্যটক বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে রাতযাপন করার শখ ছিল দীর্ঘদিনের। বছরের শেষ দিন উদ্যাপন করতে পরিবার নিয়ে প্রবালদ্বীপে ছুটে এসেছি।
সেন্ট মার্টিন হোটেল-কটেজ মালিক সমিতি ও দ্বীপ আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান জানান, থার্টি ফাস্ট নাইট উদ্যাপন করতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরা প্রতি বছর সেন্ট মার্টিনে আসেন। এ বছর তার ব্যতিক্রম হবে না। দ্বীপের হোটেল-কটেজ মালিক সমিতি সব সময়ই পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপন করতে ৭ হাজারেরও বেশি পর্যটক দ্বীপে এসেছেন। বছরের শেষ দিনকে স্মৃতিময় করতে এসব পর্যটক মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রবালদ্বীপে অবস্থান করেন। অনেক পর্যটক হোটেল-কটেজে জায়গা না পেয়ে ইতিমধ্যে তাঁবু ভাড়া নিয়েছেন। যারা নিকটজনদের নিয়ে সৈকতের বালিয়াডিতে রাত কাটাবেন।
টেকনাফস্থ ট্যুরিস্ট পুলিশের উপপুলিশ পরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসাইন জানান, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে প্রতিদিন পুলিশ কাজ করছে। বিশেষ দিন পর্যটকরা যেন উদ্যাপন করতে পারেন সেজন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশি তত্পরতা অব্যাহত আছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাইফ জানান, সেন্ট মার্টিনে পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে অবস্থান করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দ্বীপে অবস্থানকারী পর্যটকদের সুবিধার্থে প্রশাসনের বাড়তি নজরদারির পাশাপাশি সেখানকার জনপ্রতিনিধিদেরও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া আছে।