ব্যবসায় সফল হতে বিল গেটস-এর উপদেশ
বিল গেটস এমন একটি নাম যা পৃথিবীর মানুষের নিকট আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি পরিচিত। কেনই বা হবেন না, ফোর্বসের রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি টানা ১৩ বার পৃথিবীর সেরা ধনী ব্যাক্তির খেতাবটি পেয়েছিলেন এবং এখনও তিনি তার অবস্থান ধরে রেখেছেন। বিল গেটসের বর্তমান সম্পদের পরিমান ৮৬ বিলিয়ন ডলার! তার সফল ক্যারিয়ারের যাত্রা মূলত মাইক্রোসফটকোম্পানী দ্বারা শুরু হলেও Xbox ও তার একটি লাভজনক ব্যবসা। এছাড়াও অনেক নামিদামি কোম্পানীতে তার শেয়ার রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিল গেটসের ক্যারিয়ারের শুরুটা সহজ ছিল না।
প্রচন্ড অধ্যবসায়ের সাথে অসাধারণ সৃজনশিলতা, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আর অক্লান্ত পরিশ্রমের কল্যাণে গড়ে তুলেছেন তার সম্পদের বিশাল সাম্রাজ্য। তার সফলতার স্বরূপটা অবলোকন করলে সবাই একবাক্যে বলতে বাধ্য হবে যে, বিল গেটসই বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে সফল এবং বুদ্ধিমান ব্যাবসায়ী। ব্যবসা শুরু করা থেকে তা টিকিয়ে রাখা পর্যন্ত তার রয়েছে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। নতুন উদোক্তাদের জন্য তিনি তার অভিজ্ঞতা থেকে ৭টি উপদেশ দিয়েছেন। যা তাদের দূর্গম পথকে অনেকটাই সহজ করে দিবে। আজ আমরা এই সাতটি উপদেশ নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব।
ঝুঁকি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হনঃ “ব্যবসা কয়েকটি নিয়ম ও প্রচুর ঝুঁকির সঙ্গে একটি টাকার খেলা” -বিল গেটস। আপনি জুয়া খেলার সময় কখনই নিশ্চিত হতে পারেন না যে, সেটি জিতবেন নাকি হারবেন। অনুরূপভাবে আপনি ব্যবসা শুরু করতে গেলেও লাভ লোকশানের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন না।
বিল গেটস যখন মাইক্রোসফট শুরু করেন তখন তিনি টেনশনে থাকতেন এই নিয়ে যে, কর্মীদের মাসিক বেতন দিবেন কীভাবে! সুতরাং বুঝতেই পারছেন উনার ঝুঁকিটা কত বড়মাপের ছিল। পৃথিবীর সবকিছুই অনিশ্চিত, এখনে কিছু পেতে হলে কিছু না কিছু ত্যাগ করতে হবেই।আপনি যদি আপনার চলার পথে উৎসাহ এবং সাহস ধরে রাখতে পারেন তাহলে আপনি সফল হবেনই। কোন কিছুই আপনাকে আটকাতে পারবে না।
সাফল্যের জন্য কখনই দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন নাঃ “সাফল্যের একটি মূল উপাদান হল ধৈর্য্য” – বিল গেটস। আপনি কোন কিছুই সহজে পাবেন না, এর জন্য ধৈর্য্য সহকারে চেষ্টা ও সংগ্রাম করে যেতে হবে। পল এলেন ও বিলগেটস মাইক্রোসফটের যাত্রা শুরু করেছিলেন একটি নড়বড়ে প্রতিষ্ঠান হিসেবে কিন্তু তাদের চেষ্টা ও পরিশ্রমের দরুন বর্তমানে মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য ৫০০০০ কোটি ডলারেরও বেশি। একটি প্রবাদ আছে যে, There are no shortcuts to success. তাই পরিকল্পনা না করে তড়িৎগতিতে কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না। সুনির্দিষ্ট প্ল্যান নিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়ুন আর তাড়াহুড়ো না করে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিন।
আপনি যা তার জন্যই গর্বিত হোনঃ “পৃথিবীর কারো সাথেই নিজেকে তুলনা করবেন না, যদি তা করেন তাহলে আপনি নিজেই নিজেকেই অপমান করছেন” – বিল গেটস। আমাদের বেশিরভাগই হতাশায় ভোগি এই কারণে যে, আমরা অন্যদের মত সফল, সম্পদশালী ওবং বুদ্ধিমান না। আপনি চাইলেই বিল গেটস হতে পারবেন না কিন্তু আপনার এটা জানা উচিত যে, সব মানুষ এক রকম নয় , সবারই ইউনিক কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা অন্য কারো থাকে না।
নিজের এই ইউনিক বৈশিষ্ট্যটি খুঁজে বের করুন এবং এর উপর আস্থা রাখুন সফল আপনি হবেনই। নিজের যত সক্ষমতা আছে তার সবকিছু ব্যবসাতে ঢেলে দিন। ব্যবসাতে প্রতিনিয়ত কলা-কৌশলে পরিবর্তন আনুন। ব্যবসা করতে গেলে আত্মবিশ্বাস সবচেয়ে বড় শক্তি, বিল গেটস এই আত্মবিশ্বাসের দ্বারাই হার্ভার্ড ছেড়ে দিয়ে মাইক্রোসফট গড়তে পেরেছিলেন।
সবসময় নম্র থাকুনঃ “সাফল্য একজন উস্কানি দেওয়া শিক্ষকের মত, যা বুদ্ধিমান লোকদের মাথায় এটি ঢুকায় যে, তারা কখনো ব্যর্থ হবে না” – বিল গেটস। অনেকেই সফলতা পেয়ে নিজেকে আকাশ্চুম্বী মনে করা শুরু করে দেয়। যদি আপনিও তা মনে করেন তাহলে আমি বলব আপনি সফলতার তাৎপর্যই বুঝেন না।
আপনি বিশ্বাস করুন আর না করুন, জীবন হল একটি চাকার মত অর্থাৎ আনপ্রেডিকটেবল। আজ আপনার অবস্থান অনেক উপরে, কাল তলানিতে থাকা অসম্ভব কিছু না। আপনি সফলতার যত উপরেই উঠুন না কেন কোনসময়ই ভুলবেন না আপনি কোথায় ছিলেন। আপনার কর্মীদের সাথে সবসময় ভাল আচরণ করুন এতে তারা আপনার কোম্পানিকে সর্বোচ্চ বেনিফিট দিতে উৎসাহিত হবে। আপনার কোম্পানীকে তারা নিজের মনে করবে।
সবকিছু ইতিবাচকভাবে নিন এবং শিখতে ভালবাসুনঃ “ আপনার সবচেয়ে অসন্তুষ্ট কাস্টমাররাই আপনার শেখার সর্বোত্তম উৎস” – বিল গেটস। ব্যবসার শুরুতে আমরা যদি সমলোচনা বা খারাপ প্রতিক্রিয়া পাই তাহলে আমরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। কিন্তু আপনি যদি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে কাস্টমারদের সমলোচনাই আপনার শেখার সর্বোত্তম স্থান।
বিজনেস স্ট্রেটেজিতে আপনার ভুল কিংবা অসম্পূর্ণতাগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে চিহ্নিত করা যায় কাস্টমারদের কাছ থেকে পাওয়া ফিডফ্যাক হতে। কাস্টমারদের কাছ হতে আসা সমলোচনা এবং খারাপ প্রতিক্রিয়াগুলি ইতিবাচকভাবে নিন এবং এগুলোকে আপনার প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের প্রভাবক হিসেবে ব্যবহার করুন।
ব্যর্থতাকে মেনে নিন এবং এগিয়ে যানঃ “সাফল্যকে উদযাপন করা ভাল ,তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ব্যর্থতা থেকে পাওয়া শিক্ষাকে মনে রাখা”- বিল গেটস। আপনি যখন সফল হবেন তখন সবাই আপনাকে সম্মান করবে, গুরুত্ব দিবে, সাহায্য করতে চাইবে। আপনার জীবন আনন্দে ভরপুর থাকবে। কিন্তু যখন ব্যর্থতায় পতিত হবেন তখন দেখবেন কেউ আপনাকে চিনবেই না, চারিদিকে অন্ধকার দেখবেন। তখন আপনি বন্ধু, শুভাকাংখী কিংবা ব্যবসার কৌশল প্রভৃতির আসল রূপটা বুঝতে পারবেন। ব্যর্থতা আপনাকে যে শিক্ষা দিবে তা আর কোথাও হতে পাবেন না।
আপনি জীবনে সফলতার যত উপরের অবস্থানেই যান না কেন ব্যর্থতা থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলি ভুলবেন না, এই শিক্ষাগুলিই আপনার সফলতার প্রতিটা ধাপ গড়ে তুলতে সহয়তা করবে। আর জীবনে ভুল বা ব্যর্থতা আসবেই, বিল গেটসও প্রথমত Traf O data ব্যবসাতে সফলতার মুখ দেখেননি।
যত দ্রুত সম্ভব নিজেই নিজের বস হোনঃ “যদি তুমি নিজের স্বপ্ন গড়তে না পার, তাহলে অন্য কেউ তার স্বপ্ন গড়তে তোমাকে ভাড়া করবে” – বিল গেটস। বিল গেটস অল্প বয়সেই তার কোম্পানির বস হয়েছিলেন, যা তাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আপনি যেই ব্যবসাই শুরু করতে চান না কেন, দেরি না করে আজই নেমে পড়ুন। যত দেরি করবেন আপনার মনোবল ততই কমে যাবে।
সর্বশেষ কথা হল, উদোক্তাদের পথ সবসময়ই বাধা-প্রতিবন্ধকতায় পরিপূর্ণ হয় বিল গেটসও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। ব্যবসার শুরু্র আগে ব্যবসার বিষয়টি নিয়ে প্রচুর স্টাডি করুন। কী করলে আপনার ব্যবসা্র প্রসার বাড়বে, লক্ষ্যমাত্রার মুনাফা অর্জিত হবে তা খেয়াল করে ব্যবসায়ের সিদ্ধান্তগুলা একে একে নিতে হবে।
বিগত বছরের ভুলগুলির কারণ খুঁজে বের করুন এবং সেগুলো যাতে আর না হয় সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন। আর হ্যাঁ পরিশ্রম, মূলত এর উপরই আপনার ব্যবসার বর্তমান-ভবিষত নির্ভর করবে। বিল গেটস বছরের মাত্র দুইদিন পূর্ণ বিশ্রাম নিতেন তাও আবার সারাদিন বই পড়ে কাটাতেন।