আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’র (চসিক) নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, বেশ কয়েকটি কারণে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদককে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের একাধীক নেতা-কর্মী জানান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার মঞ্চ থেকে প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে নামিয়ে দেওয়া, নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল জিইয়ে রাখা, অর্ধশতাধিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে কোনোটিরই ঠিকঠাকভাবে দায়িত্ব পালন না করা, নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব ও স্নায়ুদ্বন্দ্ব, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন না হওয়া, গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ধীরগতি এবং দল থেকে সরকারকে আলাদা করা। এসব কারণে হেভিওয়েট প্রার্থী, ওয়ার্ডে প্রভাব, নিজস্ব বলয় সৃষ্টি, ওপরমহলের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ থাকার পরও নৌকার মনোনয়ন পেলেন না বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, গত অক্টোবরে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত প্রতিনিধি সভার মঞ্চ থেকে চট্টগ্রাম নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে নামিয়ে দেন নাছির। একই সঙ্গে আরো দুই নেতা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এবং নগর আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক আহমেদুর রহমান সিদ্দিকীকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তারা মঞ্চে ওঠেন বলে দাবি মেয়র নাছিরের। মূলত এ বিষয়টির জন্যই বেশ সমালোচনায় পড়েন নাছির।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘটনার সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না। মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামিম ছাড়াও একাধিক এমপি, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা। এতে বিব্রত হন নেতারা। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন ও নাছিরের দ্বন্দ্ব পাকাপোক্ত। তবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল রাজনীতিতে আসেন। তিরি দ্বন্দ্ব না করলেও নাছির বিষয়টিকে বারবারই সামনে টেনে আনেন বলে জানা যায়।
চসিক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরুর পরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে নতুন কেউ মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। ১৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
২০১৫ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটির সর্বশেষ নির্বাচনে প্রায় ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির এম মনজুর আলমকে হারান আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনিসহ এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ২০ জন। তাদের মধ্য থেকে ১৬ জনকে শনিবারের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে ডাকা হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলের সমর্থনের জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন ৪০৫ জন। কাউন্সিলর পদে দল সমর্থিত একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টায় আবার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রামে সিটি নির্বাচনে মোট ওয়ার্ড ৪১ এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড ১৪টি।
