তালেবান ও যু্ক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক চুক্তি

0
475

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ১৮ বছরের আফগান যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে ঘটাতে কাতারে তালেবানের ও যু্ক্তরাষ্ট্রের   মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ এতে করে এখন আফগানিস্তানের ভেতরের পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনার পথ খুলল৷

শনিবার ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০ কাতারের রাজধানী দোহায় এই চুক্তি সই হয়৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তালেবানের দোহা মুখপাত্র সোহাইল শাহীন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ওয়াশিংটন থেকে দোহায় নেমে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আলে সানির সঙ্গে বৈঠক করেন পম্পেও। কাবুলে মার্কিন দূতাবাস এক টুইটার বার্তায় বলেছে, আফগানিস্তানের জন্য স্মরণীয় একটি দিন শনিবার। অন্যদিকে, আমেরিকার ইতিহাসের এটি হচ্ছে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, এই চুক্তির ফলে আফগানিস্তানে মোতায়েনযুক্তরাষ্ট্র সৈন্যদের ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাহার করে নেবে আমেরিকা। তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না তা নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন।  ২০০১ সালে সংঘাত শুরু হবার পর থেকে তালেবানের প্রধান দাবিগুলোর এটি ছিল অন্যতম একটি ৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে এখন ১২,০০০ মার্কিন সেনা রয়েছে৷ সেখান থেকে ৮,৬০০ জনকে প্রত্যাহার করবে তারা৷

দীর্ঘসময় ধরে যুদ্ধ চলা দেশটিকে ঘিরে এমন সমঝোতায় আসতে পারা নিয়ে দু’পক্ষই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে৷শুক্রবার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘যদি তালেবান ও আফগান সরকার তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারে, তাহলে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে আমরা আমাদের সেনাদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারি৷”তিনি যোগ করেন, ‘‘এই প্রতিশ্রুতিগুলো একটি নতুন শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করে যেখানে আল কায়েদা, আইএসআইএস এবং এমন কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নেই৷” বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই চুক্তি ট্রাম্পকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনসমর্থন আদায়ে সহযোগিতা করবে৷

 চুক্তি অনুষ্ঠানে আফগান সরকারের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও তাঁর কোনো সরাসরি ভূমিকা ছিল না৷ দেশটির বর্তমান সরকারকে  ‘যু্ক্তরাষ্ট্রের পুতুল’ বলে মনে করে তালেবানরা এবং তাদের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ তৈরি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷

তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, “চুক্তি সইয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে জাতির কল্যাণের জন্য আফগানিস্তানে যেকোনো ধরনের হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে সব যোদ্ধাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, শান্তি চুক্তি এবং সমঝোতার সময় আমেরিকা তাদের অঙ্গীকারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে।” জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, “তালেবান অধ্যুষিত এলাকার আকাশে বিদেশি যুদ্ধবিমান এখনো ধারাবাহিকভাবে উড়ছে; এটা অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং উসকানিমূলক। কিন্তু যোদ্ধারা আমাদের নির্দেশের প্রতি অটল রয়েছে।”

জার্মান সংবাদ মাধ্যমকে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির মুখপাত্র সেদিক সেদিকি বলেন ‘‘তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির জন্য আফগানিস্তান একটি কমিটি তৈরি করেছে”৷

‘‘আমাদের আন্তর্জাতিক মিত্রদের কাছে এর জন্য বারবার দাবি জানিয়ে আসছিল তালেবানরা৷” অবশ্য এই শান্তি প্রক্রিয়ায় তালেবানরা কখনো আফগান সরকারের গুরুত্ব স্বীকার করেনি৷ এখন পর্যন্ত দোহায় মার্কিনিদের সঙ্গে তালেবানরা যত আলোচনা করেছে, তাতে ঘানি সরকারের সক্রিয় কোনো অংশগ্রহণ ছিল না৷

জার্মান সংবাদ মাধ্যমকে  সোহাইল শাহীন বলেন, ‘‘আমরা আফগান সরকারের কাউকে দোহায় আমন্ত্রণ জানাইনি৷ যুক্তরাষ্ট্র যদি আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে, তা আমাদের বিষয় নয়,”  ‘‘যু্ক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া এ চুক্তির কাঠামোর মধ্যে থেকেই আমরা এগোব৷ আর এই কাঠামো পরিষ্কার- চুক্তি স্বাক্ষর হবে৷ এরপর একটা আস্থা তৈরির জন্য সময় দিতে হবে,” শাহীন বলেন৷ ‘‘এই আস্থা তৈরির সময়টুকুতে আফগান জেলে বন্দি আমাদের ৫০০০ সদস্য ও আমাদের কাছে আফগান সরকারের ১০০০ বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে৷ এরপরই কেবল অভ্যন্তরীণ আফগান সংলাপ শুরু হতে পারে৷”

আফগানিস্তানের লাখ লাখ মানুষের আশা- এই চুক্তির ফলে দেশের ভেতরে আমেরিকার দীর্ঘদিনের যুদ্ধ অবসানের পথ তৈরি হবে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে কথিত সন্ত্রাসী হামলার অজুহাতে আমেরিকা আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায়। ১৮ বছর ধরে আফগানিস্তানে মার্কিন হামলায় লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে কিন্তু তালেবানকে দুর্বল করতে পারে নি। ফলে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।