নারী যত স্বাবলম্বী হবে সমাজ তত দ্রুত এগিয়ে যাবে: প্রধানমন্ত্রী

0
404

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নারী যত স্বাবলম্বী হবে একটা সমাজ তত দ্রুত এগিয়ে যাবে। নারীরা বিভিন্ন সময় প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন। তবে আমরা সেগুলো প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। যারা নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায় তাদেরকে মানুষ বলতে ইচ্ছে করে না। এ নির্যাতন বন্ধে পুরুষদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।’

আজ রোববার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি আন্দোলনে নারীরা ভূমিকা রেখেছেন। এ পথ দেখিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। তিনি যদি নারীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা না করে দিতেন তাহলে নারীরা এ পর্যন্ত আসার সুযোগ পেত না। নারী দিবস মার্চ মাসে। মহান স্বাধীনতার মাস এটি। সংবিধানের মধ্যে জাতির পিতা নারীদের অধিকার দিয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী নারী হিসেবে নিজের মায়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে ছিলেন আমার মা। তিনি আমাদেরকে মানুষ করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। মা যদি দায়িত্ব না নিতেন তাহলে বাবা দেশ গঠনের জন্য কাজ করতে পারতেন না। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ ভাষণের বিষয়ে মা বাবাকে বলেছিলেন, তোমার মনে যা আছে তুমি তাই বলবে। আমার বাবা ঐ দিন ভাষণে মনের কথা বলেছিলেন। কোন কাগজ ছিল না, কোন নোট ছিল না। সেই ভাষণ এখন ইউনোস্ক স্বীকৃতি দিয়েছে।’

নারী অধিকারে জাতির পিতার অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই তিনি নারীদের জন্য সমান অধিকারের কথা বলেছেন। সে সময়ে এ কাজটা বেশ কঠিন ছিল। তিনি বলতেন, মেয়েদের জন্য শুধু অধিকারের কথা বললে হবে না। তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। একটা মেয়ে যদি বাসায় ফেরার সময় আঁচলে দশটা টাকা নিয়ে আসতে পারে তাহলে তাকে কেউ অবহেলা করতে পারবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগই এক মাত্র সংগঠন যেখান বলা হয়েছে, নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা। নারী যত স্বাবলম্বী হবে একটা সমাজ তত দ্রুত এগিয়ে যাবে।’

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে নারীদের উপর বর্বর নির্যাতনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী নারীদের উপর নির্মম নির্যাতন করেছিল। এ কাজে তাদেরকে সহযোগিতা করেছিল স্বাধীনতার দোসররা। তারা হানাদারদের হাতে মেয়েদের তুলে দিতেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পন করলে নির্যাতিত মেয়েদেরকে উদ্ধার করা হয়। তখন জাতির পিতা নারীদের পুনঃবাসনের জন্য বোর্ড গঠন করেছিলেন। নির্যাতিত নারীদের সম্মাননা দিয়েছিলেন, বীরঙ্গনা উপাধীর মাধ্যমে। তখন অনেক বাবাই নির্যাতিত মেয়েকে ফেরত নেয়নি। সে সময় জাতির পিতা তাদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আমার মা তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। অনেক বাবাই মেয়েকে পরিচয় না দিলে বিয়ের সময় কাবিননামায় জাতির পিতা নিজের নাম লিখে তাদের বিয়ে দিয়েছিলেন।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘মেয়েদের অধিকার নিশ্চিত করতে জাতির পিতা সরকারী চাকরিতে ১০ ভাগ কোটার ব্যবস্থা করেছিলেন। সব ক্ষেত্রে যেন মেয়েরা অধিকার পায় তার ব্যবস্থা করেছিলেন। সে সময় বিচার বিভাগে নারীকে নিয়োগ দেওয়া হতো না। জাতির পিতা আইন করে নারীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিলেন। সংবিধানে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করে ছিলেন।’

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে নারীদের জন্য বিভিন্ন কাজ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সরকারে এসে দেখলাম অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের অবস্থান নেই। আমি তখন বিভিন্ন বাহিনীতে নারীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করি। আমরা বাবার নামের পাশে মায়ের নামকেও পরিচয়ে যুক্ত করি। এখন প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত মেয়েদেরকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। খেলাধুলায় নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমাদেরকে অনেক প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছিল। নারীরা আজ খেলাধুলায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বয়ে আনছে। হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টে নারী বিচারক ছিলেন না। ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করে নারী বিচারক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছি।’

এ সময় নারীদের অধিকার ও উন্নয়নের জন্য তার সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।