সেল্ফ আইসোলেশনে থাকা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার পরই পাল্টে গেছে কানাডার পুরো দৃশ্যপট। নজিরবিহীন মমত্ববোধের এ বক্তব্যটি এখন বেশ আলোচিত হচ্ছে। সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবার পর্যন্ত কানাডার সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কানাডার প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা থেরেসা ট্যামের রবিবারের বক্তৃতাটাই যেন পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে অস্থির করে দিল। পুরো রাষ্ট্রই নড়েচড়ে বসে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে হিমশিম খাওয়া বিশ্ব পরিস্থিতি আতঙ্কিত নাগরিকদের সামনে তিনি দাঁড়িয়েছেন নির্ভরতার প্রতীক হয়ে। ট্রুডো যখন এ কথাগুলো বলছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল বিদেশ বিভুঁইয়ে আটকেপড়া সন্তানের পিতা, সন্তানের মঙ্গল ভাবনায় উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন।
জাস্টিন ট্রুডো তার বক্তৃতায় নিজের কিংবা তার সরকারের কোনো কৃতিত্ব দাবি করেননি। তিনি চিকিৎসকদের, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রশংসা করেছেন, প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা থেরেসা ট্যামের নাম নিয়েই তাকে বাহবা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শেষে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরাও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা কেউই একটিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নাম উচ্চারণ করেননি, তিনি কী কী করছেন তার বিবরণ দেননি। প্রত্যেকেই স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ও বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা করেছেন। মন্ত্রীদের কথায় মনে হচ্ছিল কানাডার করোনাভাইরাসবিরোধী লড়াইয়ের মূল নেতাই বোধ হয় প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা থেরেসা ট্যাম।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে মানবজাতি, আর এই মানবজাতীর মহানুভবরা কেউ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ফন্দি করছেন, আর কেউ আদর্শের ফুলঝুড়ি ছাড়ছেন । প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঠেকাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষন শুধু আবেগ-আর আশার বাণী নয় । বক্তব্যটি নিছক কোনো সরকারপ্রধানের ভাষণ নয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ে সরকারপ্রধানের বক্তব্য যদি নাগরিকদের মনে আস্থা তৈরি না করে, ভরসা না জাগায়, তাহলে তিনি কীসের নেতা! ট্রুডোর বক্তৃতাটা কেবল একজন নেতার বক্তৃতাই ছিল না, এটি ছিল দুর্যোগকালে পরিবারের প্রধান অভিভাবকের বাকি সদস্যদের বুকে আগলে রাখার মতো ব্যাপার। একজন দায়িত্ববান কতর্ব্যরত মানুষের অঙ্গীকার ….!!!
জনগণের উদ্দেশে হৃদয়গ্রাহী ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর ভাষন….
প্রিয় কানাডাবাসী৷
আমি জানি, আজ আপনারা সবাই একটা কঠিন সময় পার করছেন ৷ আশা করি এই বিপদ আমরা কাটিয়ে উঠবো তবে সেই জন্য আপনাদের সাহায্য আমার দরকার।
আপনাদের জন্য আমি আজ প্রধানমন্ত্রী, জনগনের সেবা ও নিরাপত্তা দেয়া আমার প্রধান কাজ, আমি চাইলে নিজে ঘরে বন্দি থাকতে পারতাম, তবুও রিক্স নিয়ে আপনাদের খোজ খবর নিচ্ছি, বের হচ্ছি, । কারন আপনারাই আমার অক্সিজেন। আপনারা সুস্থ থাকলেই আমি সুস্থ। আপনাদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে কিছুই নেই।
আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনার ১ মাস নিজ বাসায় অবস্থান করুন। শুধু মাত্র মেডিসিন+ প্রয়োজনীয় খাবার+ পানীয় দোকান গুলো খোলা রাখবেন৷ তবুও সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি নাগরিকের বাসায় ১ মাসের যাবতীয় সব ধরনের খাবার পানি মেডিসিন মাস্ক আমরা পৌছে দিচ্ছি। তাছাড়া আপনাদের যখন যা লাগে আপনাদের দেয়া নাম্বারে যোগাযোগ করবেন, আপনাদের বাসায় সব কিছু পৌছে দেয়া হবে। তবুও বের হবেন না।
ভয় নেই কাউকে অনাহারে মরতে হবে না। আপনারা নিজ বাসায় অবস্থান করুন৷ সচেতন থাকুন। আপাতত আমাদের দেশ লক ডাউন করে দিচ্ছি।।পরিস্থিতি ঠিক হলে আবার খুলে দিব। আমার উপর আপনারা আস্থা রাখুন।
আপনারা যারা অফিস আদালত কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজে নিয়োজিত ছিলেন, আপনাদের কারো কাজে যেতে হবে না। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অফিস কারখানা বন্ধ ঘোষনা করলাম।।
ভয় নেই, আপনাদের সবার একাউন্টে আপনাদের মাসিক বেতনের টাকা পৌছে যাবে। শুধু তাই নয় আপনারা যারা বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন, সেই ভাড়াও সরকার বহন করবেন। এসব নিয়ে একটুও চিন্তিত হবার কারন নেই। আপনাদের ভালো রাখাই আমার কাজ। যারা সরকারের নিয়ম মানবে তাদের এক কালিন অতিরিক্ত অর্থ পুরস্কার দেয়া হবে।
করোনা আজ পুরা দুনিয়ার এক আতংকের নাম। আপনাদের সবার সহযোগিতা দরকার। আপনার কেউ ঘর থেকে বের হবেন না।।বাসায় থাকুন এবং সচেতনার সাথে থাকুন। আশা করি শীঘ্রই আমরা এই সংকট কাটিয়ে উঠবো। এই জন্য প্লিজ আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন।
আশা করি আমরা সবাই ভাল থাকবো….
ধন্যবাদ সবাইকে….
জাষ্টিন ট্রুডো।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে ৮১৯ জনসহ মোট মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৯৮০ জনের। এর মধ্যে উৎপত্তিস্থল চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৩৭। চীনের বাইরে মারা গেছে ৪ হাজার ৭৪৩ জন।
এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৯ জন। এর মধ্যে ৮২ হাজার ৭৬৩ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮৯৪। দেশটিতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৯ হাজার ৬১৪ জন। এছাড়া চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৫ জন মানুষ।
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ১ লাখ ৭ হাজার ৬০৬ জন আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ১৯০ জনের অবস্থা সাধারণ (স্থিতিশীল অথবা উন্নতির দিকে) এবং বাকি ৬ হাজার ৪১৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আক্রান্তের অনুপাতে মৃত্যুর হার ৯ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৯১ শতাংশ।