শ্বাসরুদ্ধকর আতঙ্কে বিশ্ববাসী:ব্যবসা-বানিজ্যে ধস

0
869

অর্তকিত এক হামলায় লন্ডভন্ড পৃথিবী । চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস। এ এক নতুন অপ্রত্যাশিত যুদ্ধ। কে দায়ী কে জানে, তবে এই যুদ্ধের জন্যও মানুষদেরই দায়ী করছেন অনেকেই। যুদ্ধবাজদের প্রতিই সকলের দৃষ্টি । তাঁদের ধারনা যুদ্ধবাজ নেতারাই ‘জীবাণু’ অস্ত্র হিসেবে এই ভাইরাসটি তৈরি করেছেন। যা এখন বুমেরাং হয়েছে । আবার কারো কারো  মতে এটি একটি মহামারি এবং এটি প্রকৃতির প্রতিশোধ। যে কারনেই হউক, এই প্রানঘাতি ঘাতক নিঃশব্দে জেঁকে বসেছে মানুষের ওপর। ঝুঁকির মুখে মানবতা, ব্যহত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি, অবরুদ্ধ পৃথিবী ।

ব্যাপকভাবে সংক্রমিত নাহলেও বাংলাদেশেও দেখা দিয়েছে এই রোগের প্রকোপ।প্রযুক্তিতে, ধনে, মানে উচ্চ শিখরে যে সমস্ত দেশ তারাও হিমসিম খাচ্ছে এই ভাবরিাস প্রতিরোধে । সেখানে বালাদেশের অবস্থা কেমন তা সহজেই অনুমেনিয় । মন্ত্রিরা যাই বলেন না কেন । পৃথিবী ব্যপি র্আথিক মন্দার দিকে ধাবিত । হুমকির মুখে পড়েছে উৎপাদন শিল্প, পর্যটন শিল্প।এই ধাক্কায় বিভিন্ন খাতের কয়েক কোটি কর্মসংস্থান হারিয়ে যেতে পারে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান একে অপরের উপর নির্ভরশীল। যারফলে ব্যবসা-বানিঝ্যে এর চেইন পতিক্রিয়া দেখাদিবে ।

এখন সবার আগে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে নিজের নিরাপত্তা। একজন অন্যজনকে এড়িয়ে চলছে। দেখা হলে হাত মেলাচ্ছে না। কুশল বিনিময় করছে না। একজনের বাড়িতে অন্যজন যাচ্ছে না। আক্রান্ত দেশগুলোতে খুব দরকার না হলে কেউ বাইরেও বের হচ্ছে না। যারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে, তাদেরকেও পালাতে দেওয়া হচ্ছে না। পৃথিবীজুড়ে এখন শ্বাসরুদ্ধকর আতঙ্ক।এই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। এক দেশ অরেক দেশের উপর জারি করছে নিষেধাজ্ঞা  ।

প্রতিটি দেশ তার নিজস্ব স্বকিয়তা ঐতিহাসিক স্থাপনাসমৃদ্ধ , প্রতিটি দেশটিজুড়ে রয়েছে দর্শনীয় বহু স্থাপনা।পর্যটন খাতে এসব থেকেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করে দেশগুলি । দর্শনীয় স্থাপনা দেখতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এক দেশ থেকে অরেক দেশ ভ্রমন করে ।কিন্তু এই সঙ্কটে দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা, নন্দনীয় স্থপনা ও স্মৃতিসৌধগুলো  কিছুদিনের জন্যে জন্য এখন বন্ধ ।রাজনৈতিক  অস্থিরতা থাকলেও একটা অংশ পর্যটকদের ভীড় সবসময় লেগেই থাকে । রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও উল্লেকযোগ্য সংখ্যক পর্যটক দেখা যায় । যা এখন শুন্য কোটায় ।

পর্যটন খাতের ওপরই নির্ভরশীল এমন অনেক দেশ অছে যেখানে করোনা ভাইরাসের তেমন সংক্রমিত নাহলেও সেখানেও এখন পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। কয়েক সপ্তাহের জন্য নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর মেয়াদ যে বাড়ানো হবে না তা কিন্তু বুঝারও উপায় নেই । সরকার প্রধানগন বলেন, এই মুহূর্তে দেশকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি দেখে এবং অবস্থা বিশ্লেষণ করে তবে ব্যবস্থা ।  এই স্বঘোষিত নিষেধাজ্ঞায় এ পর্যন্ত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানা যায় ।

পর্যটকদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে এভারেস্টের দেশ নেপাল। মাউন্ট এভারেস্টে সব ধরনের অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেছে দেশটি। এর আগে চীন তাদের পাশ থেকে এভারেস্টে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়। গত দুই দশক ধরে চীনের অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। আর চীনের এই এগিয়ে চলার পেছনে বড় ভ’মিকা রেখেছে পর্যটনশিল্প। দেশটির পর্যটন অনেকটা অ্যাডভেঞ্চারধর্মী। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক এশিয়ান, ইউরোপিয় ও আমেরিকান পর্যটকদের ঢল নেমেছিল চীনে। কিন্তু হঠাৎ করেই দেশটিতে দেখা দেয় রহস্যময়ী এই রোগ। সংবাদমাধ্যমে এর খবর ফলাও করে প্রচার হতে থাকে। সেইসঙ্গে বাতিল হতে থাকে পর্যটকদের শিডিউল। একটার পর একটা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আসতে থাকে দেশটির ওপর।

এর আগে ২০০২ ও ২০০৪ সালে সার্স আক্রমণের সময় চীনে জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ২৫ শতাংশ কমে যায়। তখন হংকংয়ে জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ৪১ শতাংশ কমে। তবে এখন অন্য অনেক দেশ চাপ সামলাতে বেকায়দায় থাকলেও চীনের অবস্থা উন্নতির দিকে। দেশটিতে আক্রান্ত’র সংখ্যা কমছে।

চীনের সঙ্গে যে দেশগুলোর যোগাযোগ ভালো সেগুলোর একটি সিঙ্গাপুর। ছোট্ট এই দেশটি কেবল চীন নয় বিশ্বের অনেক দেশের পর্যটকদের তালিকার প্রথম সারিতে থাকে। এ কারণেই শুরুর দিক থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা নিয়েছিলো সিঙ্গাপুর। পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল হলেও আপদকালে দেশটির দরজা পর্যটকদের জন্য সঙ্কুচিত করে দেওয়া হয়। এতে পর্যটনে প্রবৃদ্ধি কমে যায় ২৫ শতাংশ।

পর্যটক আকর্ষক দেশ থাইল্যান্ড। ওই দেশটিও এবার প্রায় ১০৯.৩ বিলিয়ন থাই বাট লোকসানের মুখে পড়ছে। হুমকির মুখে পড়েছে দেশটির অভ্যন্তরিণ পর্যটন শিল্পও।

জানুয়ারির ২৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া চীনের নববর্ষ উদযাপনের সময় থেকে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ পর্যটনে এ লোকসানের সম্মুখিন হয়। ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, দেশটির ৪ বিলিয়ন বাণিজ্যিক ক্ষতি বা লোকসান হয়েছে।

ভাইরাস আতঙ্ক ব্যাপকভাবে কাঁপাচ্ছে ফিলিপাইনকে। দেশটির রাজধানী ম্যানিলার সীমানায় অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। ম্যানিলা এখন অবরুদ্ধ। রাজধানী থেকে কেউ বের হতে পারছে না। কাউকে ঢুকতেও দেওয়া হচ্ছে না। এই যখন অবস্থা, তখন বাইরের পর্যটক ফিলিপাইনে প্রবেশ করবে, এমনটা কল্পনা করাও দুঃস্বপ্ন।

অন্যদিকে অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে চীনের পর্যটন ক্ষতির ফলে ২০২০ সালের প্রথম চার মাসের বিশ্ব সেবা খাতে আয় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর চীনের সাথে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় বড় ধরণের লোকসানের হিসেব কষছে। সব মিলিয়ে বিশ্ব পর্যটন শিল্পে বড় ধরনের একটি বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

বিপর্যয় দেখা দিয়েছে মালয়েশিয়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের মতো করে চেষ্টা করছে। তবে সবার পদক্ষেপ একইরকম। ভারত-পাকিস্তানের মতো বৈরি সম্পর্কের দেশও পরিস্থিতি মোকাবেলায় এক সুরে কথা বলছে। এর মধ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলো ঐকমতে পৌঁছেছে। সার্কের অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা ভালো থাকলেও বিদেশি পর্যটক একেবারেই আসছে না বললেই চলে। আর বাংলাদেশিরাও সীমানা পেরিয়ে বাইরে কোথাও যাওয়ার সাহস করছে না। এতে চরম সঙ্কটে পড়েছে দেশিয় পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

ক্যান্সেল হচ্ছে হোটেল বুকিং, ট্যুার অপারেটরদের ট্যুর প্যাকেজ। বাংলাদেশে বেশিরভাগ বিদেশি পর্যটক আসেন সুন্দরবনের আকর্ষণে। এদের জন্য সুন্দরবনে থাকে প্রমোদতরীর ব্যবস্থা। বিদেশি পর্যটকদের নিয়ে সুন্দরবনের ভেতরে কয়েকদিন অবস্থান করে তরীগুলো। কিন্তু বৈশ্বিক সঙ্কটের মুখে হুমকিতে পড়েছে সুন্দরবনকেন্দ্রীক এই খাত।

এছাড়া বিশ্বের বৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারও এখন পর্যটকশূন্য। রাজধানী ঢাকার হোটেলগুলোতে বিদেশি অতিথির সমাগম দেখা যাচ্ছে না। এতে সঙ্কটে পড়েছে ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো। এর ধাক্কা লেগেছে এয়ার লাইনসে। সঙ্কটের শুরুর সময় থেকেই বিমানে যাত্রীসংখ্যা কমে আসছিলো। এখন বাড়তে শুরু করেছে ফ্লাইট বাতিল বা স্থগিতের সংখ্যা।