ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে ৬টি কোর্স

0
640

ভারতের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পাঠ্যসূচিতে পূর্ণাঙ্গভাবে  অন্তর্ভুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিকদের বই নিয়ে ছয়টি পূর্ণাঙ্গ কোর্স চালু করেছে। 

এত উদার হয়ে বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে ভাবেনি ভারতের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার সাহিত্য চর্চা, শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের পক্ষপাত আর বৈষম্য মুছে ফেলার দুয়ার খুলে গেল বলে মনে করছেন দুই বাংলার সাহিত্যকরা।

এর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের লেখা অন্তর্ভূক্ত করা হলেও এবারই প্রথম এভাবে পূর্ণাঙ্গ ছয়টি কোর্স চালু করা হলো। বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের মধ্যে  শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও সেলিনা হোসেনের লেখা ।

জানা গেছে, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হওয়া কোর্সগুলো হলো- বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, গল্প এবং স্মৃতিকথা, মুক্তিযুদ্ধ ও আত্মজীবনী। কোর্সের সূচিতে কবিতার বই নির্বচিত করা হয়েছে তিনটি। এগুলো হলো- শামসুর রাহমানের ‘বন্দী শিবির থেকে’, নির্মলেন্দু গুণের ‘হুলিয়া’ এবং শামীম রেজার ‘যখন রাত্রির নাইমা আসে সুবর্ণনগরে’।

পাঠ্যসূচিতে নির্বাচিত উপন্যাসও তিনটি। এগুলো হলো- আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’, সেলিনা হোসেনের ‘যুদ্ধ’ এবং শহীদুল জহিরের ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’।

নাটকের কোর্সেও রাখা হয়েছে তিন আলোচিতজনের তিনটি বহুল আলোচিত নাটক। এগুলো হলো- সৈয়দ শামসুল হকের ‘নুরুলদীনের সারাজীবন’, সেলিম আল দীনের ‘নিমজ্জন’ এবং সাঈদ আহমেদের ‘কালবেলা’।

গল্পের কোর্সে নেওয়া হয়েছে শওকত আলীর গল্প ‘উম্মুল বাসনা’, হাসান আজিজুল হকের ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ এবং প্রশান্ত মৃধার ‘যুধিষ্ঠিরের সঙ্গী’।

এছাড়া স্মৃতিকথা, মুক্তিযুদ্ধ ও আত্মজীবনী কোর্সে নেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ এবং মইদুল হাসানের ‘মূলধারা ’৭১’।

বাংলাদেশের সাহিত্য ভাণ্ডার প্রায় সবদিক দিয়েই সমৃদ্ধ হলেও ভারতের বা পশ্চিমবঙ্গের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোর্স চালুর চিন্তা করেনি। দুই বাংলার সাহিত্য জগতে এই যুগান্তকারী উদ্যোগ বাস্তবায়নের নেপথ্যে এই ঐতিহাসিক সেতুবন্ধনের কাজটি যিনি করেছেন,তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলা বিভাগের প্রধান কবি অধ্যাপক ড. নিখিলেশ রায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের বিভাগে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের এক বিপুল ভাণ্ডার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পাঠক কিংবা বাংলা সাহিত্যের ভারতের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সে বিষয়ে কোন আগ্রহ নেই। বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে খুব বেশি খবরাখবর এখানকার পাঠকরা, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার ছাত্র-ছাত্রীরা রাখে না।  বাংলাদেশের সাহিত্য না পড়লে বাংলা সাহিত্যকে পরিপূর্ণভাবে জানা সম্ভব নয়। অথচ কী বিপুল এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার ওখানে। তা না জানা হলে বাংলা সাহিত্যকে খণ্ডিতভাবে জানা হয়! অনেক আগে ড. নিখিলেশ রায় সিলেবাস কমিটির সদস্য হিসেবে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসটি রাখার জন্য প্রস্তাব করেছিলেন। নাক উঁচু করে সঙ্গে সঙ্গে তা নাকচ করে দেন সদস্যরা ।

৩৩১ একর জমির উপর ১৯৬২ সালে ভারতের শিলিগুড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতি বছর ৩৬ হাজারের বেশি স্নাতক ও দেড় হাজারের বেশি স্নাতকোত্তর ও গবেষক ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এটি।