বাড়ি থেকে অফিসের কাজ

0
664

বাড়ি থেকে অফিসের কাজ:

সরওয়ার জাহান

করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের জীবনযাত্রা, শিক্ষা ও কাজের পদ্ধতিতে আমূল পরির্বতন এসেছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বর্তমানে বেশির ভাগ অফিস বন্ধ। নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করছে। বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করতে হচ্ছে। বিষয়টি অনেকের কাছে নতুন হলেও কাজের ধরন অনুযায়ী অনেক নির্ভরশীল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বাড়ি থেকেই অফিসের কাজ সেরে ফেলেন। আমাদের দেশে এর জনপ্রিয়তা না হলেও করোনার এই সময়ে, ঘরে বসে কাজ করতে প্রায় সবাই বাধ্য হয়ে পড়েছেন। গৃহবন্দী হলেও চলমান জীবনকে তো বন্দী করে রাখা যায় না।

প্রযুক্তির বিশ্বে আমাদের দেশেও ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঘরে বসে কাজের যেমন নতুনত্ব রয়েছে, তেমনি আত্ম-অনুপ্রাণিত না হলে সবই এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। অফিসে বসে কাজ করা আর বাসায় বসে কাজ করার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। তবে যাদের সরাসরি গ্রাহকদের সাথে কাজ করতে হয়, তাদের অবশ্যই অফিসে আসতে হয়। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বিষয়টি আনন্দের মনে হলেও বাসা থেকে অফিসের কাজে মনোযোগ রাখা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়।

সময় নষ্ট করা শহুরে জ্যাম ঠেলে ভালো কাপড় পরে অফিসে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলেছে এ কথা সত্য। বাসায় নিজের চির পরিচিত ও আরামদায়ক পরিবেশে অফিসের কাজ করার অভিজ্ঞতা অনেকের জন্যই নতুন। ফলে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে অনেককেই। বিষয়টি আবার অনেকের কাছে এক প্রকার স্বপ্ন পূরণের মতোই। তবে কাজের চাপ সেই একই আছে, বরং মনে হবে আগের চেয়ে আরো বেশি।

সপ্তাহের পর সপ্তাহ বাসায় থেকে এবং বাসা থেকে না বেরিয়ে কাজ করা দুঃস্বপ্ন মনে হতে পারে। অনিশ্চিত এ সময়ে বাড়িতেই তৈরি করতে হবে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ এবং মানতে হবে দূরে বসেই দলগতভাবে কাজ করার সব নিয়মকানুন। বাড়িতে বসে কাজ করার সুবিধা যেমন, সমস্যাও কিন্তু কম নয়! হোম অফিস হলে সকালে অফিসের জন্য আলাদাভাবে তৈরি হওয়ার ঝামেলা নেই, যেমন খুশি পোশাকেই থাকা যায়! বসের কোনো নিযন্ত্রণ নেই, বিরক্তিকর সহকর্মী নেই, কত আরাম! বাড়িতে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করা যায়। হোম অফিস করার সময় প্রিয়জনদের ফোন করতে পারেন, বাসা পরিষ্কার করতে পারেন, খুশি মনে পরিবারকে সময় দেয়া এবং সহধর্মীকে কাজে সহযোগিতা করা এই মুহূর্তে বেশ উপকারী।

হোম অফিসের বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছেÑ বাসায় আপনি যা ইচ্ছা তাই খেতে পারছেন, ফলে ওজন বাড়ছে; যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই সুখকর নয়! এ দিকে বাইরে ঝলমলে সুন্দর রোদ সেখানে লোভনীয় পরিবেশ রেখে ঘরের ভেতরে বসে অফিস করা বেশ কঠিন। আরেক দিকে পাশের বাসায় নানা কাজ চলছে, দেয়ালে ড্রিল মেশিনের বিকট শব্দে অফিসের কাজে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। তা ছাড়া বাসার থাকার ফলে যেমন নিজের শিশুদের দেখাশোনা করা যায়, আবার তাদের নিয়ে ঝামেলাও সইতে হচ্ছে। বাসার বাইরে বের না হওয়ায় অনেকে বিরক্ত হচ্ছেন, ফলে শরীর-মন দুটোই খারাপ করছে। সঙ্কটকালীন অফিসে শেখার সুযোগ কমে যাওয়া, হতাশা, উদ্বেগের মতো কারণগুলো মানুষের কার্ডিওভাসকুলার এবং ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করতে পারে। এ সময় অফিসের কাজগুলো সুসম্পন্ন করার জন্যই কিছু টিপস দরকার ।

মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ঘরে বসে কাজ করা একটি অন্যতম দিক হলো ঘরের স্বাভাবিক পারিপার্শ্বিকতা থেকে নিজেকে কিছুটা হলেও আলাদা করে নেয়া। পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দিতে হবে যেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ডাকাডাকি করা না হয়, শিশুদেরও সামলে রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে।’ ঘরে নিজের কাজের জায়গা আলাদা করতে পারলে এবং কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারলেই প্রকৃত অর্থে ঘরে বসে কাজ করার সুবিধাগুলো উপভোগ করতে পারবেন।

এই অনিশ্চিত সময় অথবা এ ধরনের পরিবেশে কাজ করতে সবাইকে একে অপরের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, বাড়িয়ে দিতে হবে সহায়তার হাত। বাড়িতে বসে সারা দিনের কাজের রুটিনটি আগে ঠিক করে নিতে হবে। কী করা দরকার, কী চাইছেন, কাজের ভিত্তিতে কোন কাজগুলো আগে করা প্রয়োজন এবং কতক্ষণ তার জন্য সময় দিতে হবে তা ঠিক করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না কাজের তালিকায় বিরতির সময়।

বাড়িতে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অফিস থেকে দরকারি সব কিছু বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা দরকার। ইন্টারনেট এখন জীবিকার অংশ। বাসায় কাজ করার জন্য প্রয়োজন হবে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট রাউটার, কম্পিউটার, অফিসে ব্যবহার করেন এমন নানা প্রকারের হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার, হেডফোন ও স্টেশনারি। বাসার একটি নিরিবিলি স্থানকে নির্বাচন করুন।

খেয়াল রাখুন জায়গাটি যেন মশামুক্ত হয় এবং জানালা ও ফ্যান থাকে। যে টেবিলটিতে বসে কাজ করবেন সেখানে প্রয়োজনীয় বই, কাগজপত্রের ফাইল ও কলম গুছিয়ে রাখুন। কাজের পরিবেশ তৈরির জন্য মন ভালো রাখার জন্য কাজের জায়গার আশপাশে ফুলের টব বা বাসার ভেতরের গাছ রাখলে ভালো লাগবে। বিশুদ্ধ বাতাসেরও জোগান দেবে। কাজের জায়গাটি নিজের মতো গুছিয়ে রাখলে একগুঁয়েমি লাগবে না।

ঘরের অলস মনমানসিকতা নিয়ে কাজ করতে বসলে কাজের গতি কমবেÑ এটিই স্বাভাবিক। প্রতিদিনের কাজগুলোকে ভাগ করে নিলে কাজে মনোনিবেশ বাড়বে। সবসময় অফিসের যাওয়ার সময় যেভাবে দিন শুরু হয় সেভাবেই শুরু করলে অফিসের ভাবটা থাকবে। অর্থাৎ সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত কাজগুলো সেরে ফেলা। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস করা। সকালে খোলা আকাশে পায়চারী এবং রোদে কিছুক্ষণ থাকা। সকালের বাতাস শরীরে জন্য খুবই উপকারী। এরপর সকালে গোসল করে ঠিকঠাকমতো নাশতা সেরে, পোশাক পরে কাজ শুরু করে অফিসের কাজের মতোই ভাবতে হবে। এতে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হবে। অফিসের উপস্থিতির সময়ে সহকর্মীদের সাথে কুশলবিনিময় বা কথাবার্তায় ব্যয় করা। এ সময়ে সবচেয়ে বাজে অভ্যাস হচ্ছে, প্রায় সবাই রাত জেগে থাকে, সকালে যেহেতু অফিস নেই তাই দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা। মাঝে মধ্যে হতে পারে তবে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাওয়া খুবই ক্ষতিকারক।

সময়ের কাজ সময়ে শেষ করে বাসার ও অফিসের কাজে শৃঙ্খলা খুবই জরুরি। নিজে নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। যেহেতু কোনো নির্ধারিত অফিস সময় নেই, এ কারণে বেশি কাজ করা এবং সব কিছু ভালোভাবে করা অনেক সহজ। যদি কাজটি সঠিক সময় আরম্ভ এবং সম্পূর্ণ করা হয় খুবই ভালো লাগবে। সন্ধ্যাটা থাকবে পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে (বাস্তবিক অথবা অনলাইন) অথবা নিজের কোনো শখের কাজ করে কাটানোর।

বাড়িতে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অফিস থেকে দরকারি সব কিছু বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা দরকার। ইন্টারনেট এখন জীবিকার অংশ। বাসায় কাজ করার জন্য প্রয়োজন হবে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট রাউটার, কম্পিউটার, অফিসে ব্যবহার করেন এমন নানা প্রকারের হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার, হেডফোন ও স্টেশনারি। বাসার একটি নিরিবিলি স্থানকে নির্বাচন করুন।

খেয়াল রাখুন জায়গাটি যেন মশামুক্ত হয় এবং জানালা ও ফ্যান থাকে। যে টেবিলটিতে বসে কাজ করবেন সেখানে প্রয়োজনীয় বই, কাগজপত্রের ফাইল ও কলম গুছিয়ে রাখুন। কাজের পরিবেশ তৈরির জন্য মন ভালো রাখার জন্য কাজের জায়গার আশপাশে ফুলের টব বা বাসার ভেতরের গাছ রাখলে ভালো লাগবে। বিশুদ্ধ বাতাসেরও জোগান দেবে। কাজের জায়গাটি নিজের মতো গুছিয়ে রাখলে একগুঁয়েমি লাগবে না।

ঘরের অলস মনমানসিকতা নিয়ে কাজ করতে বসলে কাজের গতি কমবে- এটিই স্বাভাবিক। প্রতিদিনের কাজগুলোকে ভাগ করে নিলে কাজে মনোনিবেশ বাড়বে। সবসময় অফিসের যাওয়ার সময় যেভাবে দিন শুরু হয় সেভাবেই শুরু করলে অফিসের ভাবটা থাকবে। অর্থাৎ সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত কাজগুলো সেরে ফেলা। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস করা। সকালে খোলা আকাশে পায়চারী এবং রোদে কিছুক্ষণ থাকা। সকালের বাতাস শরীরে জন্য খুবই উপকারী। এরপর সকালে গোসল করে ঠিকঠাকমতো নাশতা সেরে, পোশাক পরে কাজ শুরু করে অফিসের কাজের মতোই ভাবতে হবে। এতে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হবে। অফিসের উপস্থিতির সময়ে সহকর্মীদের সাথে কুশলবিনিময় বা কথাবার্তায় ব্যয় করা। এ সময়ে সবচেয়ে বাজে অভ্যাস হচ্ছে, প্রায় সবাই রাত জেগে থাকে, সকালে যেহেতু অফিস নেই তাই দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা। মাঝে মধ্যে হতে পারে তবে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাওয়া খুবই ক্ষতিকারক।

সময়ের কাজ সময়ে শেষ করে বাসার ও অফিসের কাজে শৃঙ্খলা খুবই জরুরি। নিজে নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। যেহেতু কোনো নির্ধারিত অফিস সময় নেই, এ কারণে বেশি কাজ করা এবং সব কিছু ভালোভাবে করা অনেক সহজ। যদি কাজটি সঠিক সময় আরম্ভ এবং সম্পূর্ণ করা হয় খুবই ভালো লাগবে। সন্ধ্যাটা থাকবে পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে (বাস্তবিক অথবা অনলাইন) অথবা নিজের কোনো শখের কাজ করে কাটানোর।

অফিসে বসে সামনাসামনি মিটিং করার চেয়ে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে সময় বেশি লাগে। প্রায় দেখা যায় ভার্চুয়াল মিটিংয়ে প্রথম ১০-১৫ মিনিট চলে যায় কে অনলাইনে, কে অনলাইনে নেই, কে শুনতে পারছে, কে শুনছে নাÑ এসব ঠিক করতে করতেই। মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা কম থাকলে ভালো। অংশগ্রহণকারীরা মিটিংয়ের টুলস ডাউনলোড করেছে কি না তা আগে থেকেই ঠিক করে নিতে হবে।

যেখানে যে পরিবেশ হোক না কেন তা যেন পেশাদার হয়। বাস্তবতার আলোকে আমাদের দেশে অপ্রত্যাশিত অনেক সমস্যা থাকে, যেমনÑ দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও প্রযুক্তিগত। তাই মিটিং করার আগে নোট করে রাখা, আগে থেকেই বিষয়বস্তু পাঠিয়ে দেয়া। আলোচনা সংক্ষিপ্ত করে সরাসরি বিষয়ের ওপর নজর রাখা। প্রয়োজন ছাড়া মিটিংয়ে মাইক্রোফোন নিঃশব্দ করে রাখা খুবই জরুরি। অবশ্যই মনে রাখতে হবে বাসাটাই অফিস, সরাসরি মিটিং চলছে কোনো ধরনের শিশুদের শব্দ, চেঁচামেচি সুন্দর তো লাগবেই না, বরং সহকর্মীদের হাসির পাত্র হতে হবে বা উচ্চপদস্থ কেউ থাকলে অনেকের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে ।
এই মহাদুর্যোগকে অভিশাপ মনে না করে সচেতনভাবে প্রযুক্তির দক্ষতা বাড়ানোর উপযুক্ত সময়। যেমন অনলাইন ফাইল শেয়ারিং, আপলোড, ড্রাইভে আপলোড প্রভৃতি। কম্পিউটার পর্দা পরিচ্ছন্ন করে রাখুন। কারণ ফাইল শেয়ারিংয়ের সময় কম্পিউটার পর্দায় ব্যক্তিগত ছবি, ফাইল যেন অন্যরা না দেখে। কাজের সুবিধার জন্য অনলাইন কোলাবরেশন টুলস এবং চ্যাট গ্রুপ সেটআপ থাকলে অনেক সুবিধা হয় কাজ করতে। যে প্লাটফর্ম ব্যবহার হোক না কেন সহকর্মীরা যেন তথ্যগুলো ঠিকমতো পায়, তার দিকে নজর দিতে হবে। কল, ভিডিও কনফারেন্স, ই-মেইল ও চ্যাট থ্রেডগুলো রেকর্ড, শেয়ার করা যায় এবং এ থেকে নানা রকম ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। যদি ব্যক্তিগত কিছু শেয়ার করা দরকার, তবে ব্যক্তিগত চ্যানেলের মাধ্যমে যেন তা হয়। ক্যামেরা বা মাইক্রোফোনটি ভুলে চালু করে যেন না থাকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

দলগতভাবে যারা কাজ করে তারা প্রতিদিন লগ-ইন করার সময় এবং লগ-অফ করার আগে কাজের অগ্রগতি ও আগামীকালের করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে ই-মেইল করা, মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে সহকর্মীদের সাথে হালকা জোকস শেয়ার করে মনকে উজ্জীবিত করে রাখা।

বাড়িতে থেকেই যেহেতু কাজ, অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকালে ভালো। পুষ্টিকর নাশতার জোগাড় রাখা এবং সচেতনভাবে পরিমিত খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ানো সঙ্গে হালকা ব্যায়াম শরীরকে ভালো রাখবে। চেয়ারে বসেই অনেক হালকা ব্যায়াম আছে, যেমন প্রতি তিরিশ মিনিট কাজের পর পাঁচ মিনিট পায়চারী করা। দুই-তিন মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করে রাখা, ঘাড়কে ডানে-বামে ঘুরানো, হাত দুটোকে উপরে নিছে, ডানে বামে নড়াচড়া করা। পায়ের গোড়ালিকে ঘুরানো ইত্যাদি। দুপুরের খাবার ও নাশতার সময় নির্দিষ্ট সময়ে করার চেষ্টা করতে হবে।

ভার্চুয়াল আলোচনায় সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে প্রকাশভঙ্গি বোঝা না যাওয়ায় ভুল বোঝাবুঝির অনেক অবকাশ থাকে। নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সহকর্মীরা অফিস পরিবেশের অংশ। অফিসের কাজ ঘরে বসে করার যতই অভ্যাস থাকুক না কেনো তাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়া খুবই সহজ। আবার যাদের এই অভ্যাস নেই, তারা নিঃসঙ্গতা অনুভব করতে পারেন, যা পরোক্ষভাবে কাজের গতি ও মনোযোগ কমিয়ে দিতে পারে। চোখের আড়াল মনের আড়াল বলেও একটা বিষয় থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে ‘ভিডিও কল’ করে কর্মকর্তা-সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ অত্যন্ত কার্যকর। এই মহামারীতে ভয় নয়, সচেতনতাই দিতে পারে স্বাভাবিক জীবনযাপন। আর বর্তমান পরিস্থিতি বা ঘরে বসে অফিস করার কারণে কেউই আশপাশে নেই। কাজের ফাঁকে সামান্য হাস্যরস, রসিকতা, আড্ডাগুলোও নেই। ফলে নিঃসঙ্গতা মনোযোগ নষ্ট করতেই পারে। তাই সহকর্মীদের সাথে স্কাইপ, হোয়াটস অ্যাপ প্রভৃতিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ করে নিজেকে এবং অন্যকে সতেজ রাখা অন্যতম উপায়। সহকর্মীদের সাথে ‘ইনফরমাল’ হোয়াটস অ্যাপ কিংবা ফেসবুক চ্যাটিং গ্রুপগুলো কাজে লাগানোর এটাই মোক্ষম সুযোগ। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো হলে ‘ভার্চুয়াল পার্টি’ও আয়োজন করা যেতে পারে। যেখানে ভিডিও কলেই হতে পারে সহকর্মীদের আড্ডা। বিষয়গুলো অদ্ভুত মনে হতে পারে, তবে মনে রাখতে হবে পরিস্থিতিই এমন অদ্ভুত। তাই সময়ের সাথে মানিয়ে নিয়ে তা উপভোগ করতে পারলেই মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকা যাবে।

নিঃসঙ্গ পরিবেশ পরিস্থিতি যে বিপজ্জনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চার দিকেই খারাপ খবরের ছড়াছড়ি। উত্তরণের আশার আলো এতই ক্ষীণ যে, নিরাশ হয়ে পড়া যেন খুবই সহজ। তার ওপর আছে প্রিয়জনদের দুশ্চিন্তা, ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা। তবে ভেঙে পড়া চলবে না, ঘরে থেকেই পুরো পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ রাখার ব্যবস্থা হাতের কাছেই আছে। অবসর সময়ে দূরের পরিবার পরিজন, বন্ধুদের সাথে আলাপ করতে পারলে ভালো লাগবে । ‘মেসেজিং’য়ের পরিবর্তে ‘ভিডিও কল’ মানসিকভাবে বেশি উপকারী।

‘লকডাউন’র প্রভাবে প্রতিদিন সব ব্যবসা খাত প্রচণ্ড ক্ষতির শিকার হচ্ছে। অনেকেই চাকরি হারাচ্ছেন, কারো কাজের চাপ বাড়ছে, বেতনভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এ অবস্থায় কর্মকর্তাদের উচিত তার কর্মীদের কাছে পূর্বাভাস প্রকাশ করা, নৈতিকতা বজায় রাখা। ‘বস’ হিসেবে নয়, একজন দলনেতা হিসেবে চিন্তা করা। শুধু কাজ চাপিয়ে না দিয়ে কর্মীদের মানসিক অবস্থাও বিবেচনায় আনতে হবে, তাদের কাজের স্পৃহা ধরে রাখতে অনুপ্রেরণা জোগাতে হবে।

আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে অধীনস্থদের এক ধরনের দূরত্ব থাকে। অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাশভারী থাকেন বিবিধ কারণে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেক বেশি কাজের চাপে থাকেন। তাদের অনেক কিছুই সামাল দিতে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সঙ্গত কারণে অনেক কিছুই করতে পারেন না, বলতে পারেন না। ইতিবাচক অনেক রসিকতা সবারই পছন্দ। সুতরাং কাজের ফাঁকে তাদের চাঙ্গা রাখা সবার দায়িত্ব । কারণ তারাই অগ্রজ এবং দলপতি, তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লে সব প্রতিষ্ঠানের ওপরই তার প্রভাব পড়বে। তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে ইতিবাচক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। হতাশাগ্রস্ত না হয়ে, এ সময়কে দুঃস্বপ্ন না ভেবে সবাই সচেতন হই অন্যকে সচেতন করি। সময় নষ্ট না করে আনন্দচিত্তে সহজভাবে সবাই একসাথে কাজ করি। নতুন পরিবর্তিত প্রযুক্তির পৃথিবীর জন্য নিজেকে প্রস্তুতি করি।

 লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, সাদার্ন ইউনিভার্সিটি ও টেকসই উন্নয়নকর্মী