সশস্ত্র ড্রোন পাল্টে দেবে যুদ্ধের ধরণ

0
494

সশস্ত্র ড্রোন পাল্টে দেবে যুদ্ধের ধরণ

সম্প্রতি আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার যুদ্ধ থেকে দেখা যায় মনুষ্যবিহীন আকাশযান বা বিভিন্ন ধরনের ড্রোনই আর্মেনিয়া এবং আর্মেনিয়ার প্রকৃতির বাহিনীগুলোকে ধরাশায়ী করেছে।

এই যুদ্ধে সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা যায়, আজারবাইজান এ যুদ্ধে আর্মেনিয়ার ২৪১টি যুদ্ধ ট্যাংক তথা টি-সেভেন্টি টু এস এবং টি-নাইনটি, ৫০টি বিএমডি পদাতিক যুদ্ধ যান, ১৭টি মোটরচালিত আর্টিলারি সমরাস্ত্র, ৯টি রাডার, ২টি স্মারস এমএলআর সিস্টেম, ৭০টি গ্রাড এমএলআর সিস্টেম এবং ট্রাকসহ অসংখ্য সমরযানকে ধ্বংস করতেও সক্ষম হয়েছে। আর্মেনিয়ার ৪টি এস-থ্রি হান্ড্রেড ডিফেন্স সিস্টেমকে পুরোপুরি অকার্যকর করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি, তিনটি টিওআর ট্র্যাক এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম, ৪০টি ওএসএ নাইন কে থ্রি থ্রি ট্যাকটিকাল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং ৫টি কেইউবি টুকে ওয়ান টু মধ্যম পাল্লার ডিফেন্স সিস্টেমও এবার আজারবাইজানের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে। যারফলে, আর্মেনিয়ার সবগুলো এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

প্রতিরোধ করা তো দূরের কথা। আজারবাইজান সেনাবাহিনী বিভিন্ন নজরদারিমূলক ড্রোন এবং আক্রমনকারী ড্রোন থেকে তোলা যেসব ভিডিও পোস্ট করেছে তাতে দেখা যায়, আজারি এসব ড্রোন আক্রমন করার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আর্মেনিয়ার রাডার বা ডিফেন্স সিস্টেম একটি ড্রোনকেও সনাক্তই করতে পারেনি।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের আবকাইক এবং খুরাইসে দুটো বিশালাকৃতির ড্রোন ও ক্রুস মিসাইল দিয়ে হামলা চালানো হয়। তখনও সৌদি আরবের কোনো এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এগুলোকে সনাক্ত করতে পারেনি। ড্রোনগুলো আকাশসীমায় প্রবেশ করা থেকে শুরু করে আক্রমন পর্যন্ত সময়ে একবারও এগুলোকে সনাক্ত ও প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি।

রাশিয়াও সিরিয়া অভিযান পরিচালনা করার সময় খেমেইমিম বিমান ঘাটিতে একই ধরনের হামলার মুখোমুখি হয়। একাধিকবার এমন হয়েছে যে, মনুষ্যবিহিন ড্রোনগুলো নির্বিঘ্নে এসে এ ঘাটিতে হামলা চালিয়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে। সেদিন ১০টি ড্রোন একসাথে বিপুল পরিমান বিস্ফোরক নিয়ে রাশিয়ার খেমেইমিম বিমান ঘাটিতে হামলা চালায়। একই সময়ে আরো তিনটি ড্রোন তারতুসে থাকা রাশিয়ার নৌ বাহিনীর ঘাটিতেও আক্রমন করে।

এ ধরনের ড্রোনগুলো বা ইউএভিগুলোতে জ্বলন্ত রকেট ইঞ্জিন থাকে না।এ গুলো কম্পোসিট এবং কেভলার দিয়ে নির্মিত। এখানে মেটাল কিছু নেই। এ ড্রোনগুলো ছোটাকৃতির ইন্টারনাল কমবাস্টন ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয় যা একেবারে ফিউসলেগের ভেতরে অবস্থিত। এ ড্রোনগুলো যদিও আকৃতিতে বড়ো, কিন্তু এর রাডার সিগনেচার খুবই ছোট হওয়ায় এ ড্রোনগুলোকে সনাক্ত করা যায় না। ছোট ড্রোনগুলোকে সনাক্ত করার মতোও রাডার আছে। কিন্তু পুরনো এয়ারডিফেন্স সিস্টেমে সেই রাডারগুলো থাকে না। আধুনিক সময়ের রাডারগুলো অতীতের রাডারের তুলনায় একটু ভিন্নভাবে কাজ করে। নতুন এ রাডারে হাই রিসোলিউশনে স্ক্যান করার ক্ষমতা আছে। তাছাড়া এ রাডারগুলোতে কম্পিউটারের অ্যালগোরিদম থাকায় তারা ভিন্ন ভিন্ন ড্রোনের বেলায় ভিন্ন সিগনেচার ডাটা গ্রহণ করতে পারে।

রাডার ছাড়াও  সনাক্ত করার আরো উপায় আছে। ড্রোন থেকে পাঠানো তথ্যর মাধ্যমে ড্রোনকে সনাক্ত করা যায়। কখনো কখনো অপটিকাল সেন্সর দিয়ে ড্রোনকে খুঁজে বের করা যায়। আর ড্রোন চলতে গিয়ে যদি আওয়াজ বেশি হয় তাহলেও ড্রোনকে ধরে ফেলা সহজ। সা¤প্রতিক সময়ে যেসব ড্রোন সনাক্তকরণ পদ্ধতি আছে তাতে এসব কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। সেইসাথে উন্নতমানের সফটওয়্যারও দেয়া হয়েছে। এসবগুলো পদ্ধতি মিলে ড্রোনকে ট্র্যাক করা এবং ক্ষতিকর ড্রোনগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া সম্ভব ।কোনো বাহিনীর কাছে ভালোমানের ড্রোন থাকলে আগামী দিনগুলোর যুদ্ধে বা সংঘাতে তারা যে বাড়তি সুবিধা পাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

bdviews