হালিমা আদেন: প্রথম হিজাবী সুপারমডেল

0
554

হালিমা আদেন প্রথম হিজাবী সুপারমডেল

পরিমিত ফ্যাশনের ট্রেইলব্লেজার হিসাবে অভিহিত। মুসলীম নারী সোমালি আমেরিকান, সুপার মডেল হালিমা আদেনকে দেখে অনেক মুসলীম নারী এই পেশায় আসার সাহস পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালে হঠাৎ করেই তিনি মডেলিং ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। হেডস্কার্ফ পরা মডেলিং ছেড়ে দিয়েছেন । এই ঘোষণা সবাইকে চমকে দিয়েছিল। কিন্তু কেন তিনি মডেলিং ছেড়ে দিলেন?

হালিমা আদেন প্রথম হিজাবী সুপারমডেল, যিনি হিজাব পরে ‘ভোগ’-এর প্রচ্ছদ কন্যা হয়েছিলেন। প্রথম সুপার মডেল বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনারদের জন্য তিনি র‍্যাম্পেও হেঁটেছেন হিজাব পরেই। এবং গত বছর তিনি ক্যাটওয়াকে হাঁটা ছেড়ে দেন – এই আশায় যেন অন্য মুসলিম নারীদেরকে তাদের ধর্মবিশ্বাস আর কাজের মধ্যে কোন একটিকে বেছে নেবার মত কঠিন কাজটি করতে না হয়।

বিখ্যাত ডিজাইনার টমি হিলফিগার এর আগে হালিমাকে নিয়ে বেশকিছু কাজ করেছেন। সম্প্রতি বিবিসি তাদের একটি সাক্ষাৎকার নেয়। আর সেখান থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছে, আবারও কি তাহলে র‍্যাম্পে ফিরছেন সোমালি-আমেরিকান এই মডেল?

ডিজাইনার টমি হিলফিগার বলছেন, “আমার মনে হয় ফ্যাশন শিল্পের জন্য এটা একটা বার্তা যে তাদের জেগে উঠতে হবে। কারণ আমার মনে হয় অন্য ব্র্যাণ্ড এবং ডিজাইনাররা বলছিল, আমরা কী কোন ভুল করলাম?”

টমি হিলফিগার এর আগে হালিমাকে নিয়ে বহু ফ্যাশন প্রচারাভিযানে একসাথে কাজ করেছেন। সম্প্রতি বিবিসি তাদের একটি সাক্ষাৎকার নেয়। তাতে তারা এই শিল্পে বর্ণবাদ ও বৈষম্য মোকাবিলার নানা দিক নিয়ে কথা বলেন।

“এটা শুনলে আমি খুব বিপন্ন বোধ করি যে কিছু লোক বা স্টাইলিস্ট আছে – তারা আপনি যা বা আপনি যেভোবে চলেন – তা পাল্টে দিতে চায়” – হালিমাকে বলছিলেন টমি হিলফিগার।

ফ্যাশন জগতে বহু সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে টমি হিলফিগার ২০২০ সালে দেড় কোটি ডলার দেবার অঙ্গীকার করেছিলেন। প্যারিস ফ্যাশন উইকের সময় তিনিই হালিমাকে প্রথম ক্যাটওয়াকে তোলেন।

স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড ম্যাগাজিনে হালিমা আদেনই প্রথম মডেল হিসেবে বুরকিনি পরেছিলেন। শুধুমাত্র তার জন্য এই সুইমস্যুট বানিয়েছিলেন টমি হিলফিজার। “আমার মনে আছে তোমার জন্য আমরা একটা বিশেষ সাঁতারের পোশাক বানিয়েছিলাম” – বলছিলেন টমি।

“বুরকিনি পরাটা ছিল এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা” – বলেন হালিমা। “ফ্রান্সের মত কিছু দেশে পাবলিক সুইমিংপুলে এবং সমুদ্রসৈকতে এই বুরকিনি নিষিদ্ধ করা হয়। কাজেই স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডের ওই সুইমস্যুট প্রকাশের মধ্যে দিয়ে আমরা নিশ্চিতভাবেই একটা বার্তা দিয়েছিলাম, একটা নাড়া দিতে পেরেছিলাম।”তবে এই সীমাবদ্ধতা ভাঙা এবং বদ্ধমূল ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার এই যাত্রাপথ মোটেও সহজ সরল ছিল না।

হালিমা আদেন  বলেন- “আমি চাই মেয়েরা জানুক যে হালিমা তাদের সবার জন্য একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল”।”আমি আমার কেরিয়ার ত্যাগ করেছি – যাতে তারা যে কোন জায়গায় কথা বলতে জড়তা বোধ না করে।”এখন ফ্যাশন জগতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো পথ খুঁজছে – যাতে হালিমাকে যে চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল তা যেন অন্য মুসলিম মডেলদের ক্ষেত্রে না হয়।

হালিমা বলছিলেন, “আমি এমন এক জায়গায় পৌঁছেছিলাম যেখানে আমি নিজেকে যেভাবে দেখি তার থেকে অনেক দুরে সরে যাচ্ছিলাম। আমার হিজাব ক্রমশ ছোট হয়ে আসছিল”।”একবার আমি একটা শুটিং করছিলাম সেখানে আরেকটি মুসলিম মেয়ে ছিল যে হিজাব পরতো। ওরা আমাকে আমার পোশাক পরিবর্তনের জন্য আলাদা একটা কুঠরি দিল, কিন্তু ওই মেয়েটিকে বললো, একটা বাথরুমে গিয়ে পোশাক বদলাতে। তো যখন আমি দেখলাম যে আমাদের প্রতি সমান আচরণ করা হচ্ছে না – সেটা আমার একেবারেই ভালো লাগেনি।”

আরেকদিন তাকে পোশাক বদলাবার জন্য এমন একটা জায়গা দেয়া হলো যেখানে যেতে হলে পুরুষদের পোশাক পরিবর্তনের জায়গাটার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।”এতে আমি খুবই অস্বস্তিকর একটা পরিস্থিতিতে পড়ে গেলাম,” বলছিলেন হালিমা।

মুসলিম নারীকে যেন ধর্মবিশ্বাস এবং কাজের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়ার মত কঠিন সিদ্ধান্ত না নিতে হয় সে জন্যই তিনি মডেলিং ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মুসলিম নারীরা যাতে এই পেশায় সহজেই কাজ করতে পারেন, কথা বলতে পারে্ন এজন্যই হালিমা তার ক্যারিয়ার ত্যাগ করেন। হালিমার খবর শুনে যেন মডেলিং জগতের টনক নড়ে এটাই চেয়েছিলেন এই মডেল।

তিনি বলেন, ‘শুধু র‍্যাম্পে বৈচিত্র নিয়ে কী হবে। মেকআপ আর্টিস্ট, স্টাইলিস্ট, টিমের বাকি সদস্যে বৈচিত্র থাকলে তবেই নানা ধরনের মানুষ এখানে কাজ করতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, আমি এমন একটা পেশা বেছে নিয়েছিলাম যেখানে আমার সবসময় মনে হত, খুব সরু একটি দড়ির উপর দিয়ে হাঁটছি আমি। এমনকি মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরাও আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন।

তবে হালিমার এই চেষ্টা হয়তো সফল হতে যাচ্ছে। ফ্যাশন জগতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো চেষ্টা করছে হালিমাকে যেমন চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল অন্য মুসলিম মডেলকে যেন এমন পরিস্থিতে না পড়তে হয়।

হালিমা মনে করেন, সত্যিটা সকলের সামনে এলে তার মতো আরও অনেকে মনে জোর পাবেন। এই ভাবনা থেকেই মডেলিং ছাড়ার দুই বছর পর মুখ খুললেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here