কপিরাইট আইন ২০২১: নীতিগত অনুমোদন

0
380

কপিরাইট আইন ২০২১: নীতিগত অনুমোদন

বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে খসড়া কপিরাইট আইন ২০২১, নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং চার বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।এই আইন বাস্তবায়ন জোরদার করার জন্য টাস্কফোর্স গঠন এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এদিকে চলচ্চিত্র পরিচালক এবং সঙ্গীত শিল্পীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ।

২০০০ সালে বাংলাদেশে কপিরাইট সংক্রান্ত যে আইন করা হয় সেখানে লোক সংস্কৃতি এবং লোক জ্ঞান সম্পর্কে কোন বিধান ছিল না। কপিরাইট আইন ২০২১ সালের এ আইন মন্ত্রীসভায় নীতিগত অনুমোদন হয়েছে সেখানে আলাদা একটা অধ্যায় রাখা হয়েছে লোকজ ঐতিহ্য সম্পর্কে।এবারের আইনে শাস্তি বাস্তবায়নের উপর বেশ জোর দেয়া হয়েছে।

আইনে বলা হয়েছে যে কোন শিল্পকর্ম প্রথম প্রকাশের পর ৬০ বছর পর্যন্ত কপিরাইট থাকবে। তবে তাকে কপিরাইট অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে তার শিল্পকর্মে।তা না হলে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। এদিকে শাস্তির বিধান সবচেয়ে বেশি রাখা হয়েছে সিনেমার ক্ষেত্রে।

পরিচালকের অনুমতি ছাড়া সিনেমা কপি বা নকল করলে আগে চার বছরের কারাদণ্ডের বিধান ছিল। নতুন আইনে সর্বোচ্চ চার বছরের জেল এবং ৫লক্ষ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী অপরাধী উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য বেশ কিছু বিষয় কপিরাইটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আগের ঐ আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে ক্রিয়েটিভ কাজে যারা জড়িত আছেন তারা অনেক সমালোচনা করেছিলেন।নতুন এই খসড়া আইন যখন সংসদে পাশ হবে তখন যাতে সেটা শিথিলভাবে বাস্তবায়ন না করে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করেন সেই প্রত্যাশা করছেন অনেকেই । নতুন এই খসড়া আইন নিয়ে বেশ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন ছোট-বড় শহরের অনেক দোকানে গেলেই প্রকাশ্যে একশো বা দুইশো টাকার বিনিময়ে মোবাইলের মেমোরি ভর্তি করে গান, ভিডিও, চলচ্চিত্র নেয়া যায়। যিনি নিচ্ছেন, তিনি জানেন না যে, এভাবে গান বা ভিডিও নিয়ে তিনি আসলে কপিরাইট আইন ভঙ্গ করছেন। আর যে বিক্রেতা টাকার বিনিময়ে এগুলো দিচ্ছেন, তিনিও জানেন না যে, কতটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ তিনি করছেন।

বাংলাদেশে কপিরাইট আইন রয়েছে ২০০০ সাল থেকে, কিন্তু সেই আইনের শক্ত প্রয়োগের অভাবে অহরহ আইন ভঙ্গের ঘটনা ঘটছে। ফলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এগুলোর নির্মাতারা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজনের একাউন্টে তার তোলা একটি চমৎকার দেখে সেটা ডাউনলোড করে নিজের মোবাইলের ওয়ালপেপার তৈরি করলেন একজন। সরল মনে এই কাজটি করলেও আসলে এর মাধ্যমে তিনি কপিরাইট আইন ভঙ্গ হয়।

মৌলিক সৃষ্টিকর্মের মালিকানা বা সত্ত্বাধিকারী নিশ্চিত করাই হচ্ছে কপিরাইট।সাহিত্য বা যেকোনো লেখা, শিল্পকর্ম, সংগীত, চলচ্চিত্র, স্থাপত্য, আলোকচিত্র, ভাস্কর্য, লেকচার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, নকশা অর্থাৎ যা কিছু মৌলিকভাবে তৈরি করা হবে, সবকিছুই কপিরাইটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। কপিরাইট থাকলে বিনা অনুমতিতে সেগুলো ব্যবহার, পুনর্মুদ্রণ, অনুবাদ, প্রকাশ ইত্যাদি করা হলে এই আইনের আওতায় শাস্তি ও জরিমানা হতে পারে। একটি চলচ্চিত্র কেউ অবৈধভাবে ডাউনলোড করে বা বন্ধুর কাছ থেকে নিয়ে দেখলেন, তার মানে তিনি সেটির কপিরাইট লঙ্ঘন করলেন। বাংলাদেশেও কোন ব্যক্তি যদি কপিরাইট দপ্তরে আবেদন করে নিজের স্বত্বাধিকার তালিকাভুক্ত করতে হবে, তাহলেই ভবিষ্যতে কপিরাইট দাবি করা যাবে।

কপিরাইটেরও নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। যেমন সাহিত্য কর্মের জন্য কবি বা লেখকের মৃত্যুর পর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত কপিরাইট থাকে। তবে চলচ্চিত্র বা আলোকচিত্রের ক্ষেত্রে প্রকাশিত হওয়ার পরবর্তী বছর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত কপিরাইট থাকবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কপিরাইটের মেয়াদ ৬০ বছর, তবে কখন থেকে সেই মেয়াদ শুরু হবে, বিভিন্ন ক্ষেত্র ভেদে সেটি আলাদা হতে পারে।

বাংলাদেশে কপিরাইট আইন প্রথম তৈরি হয় ১৯৭৪ সালে। প্রযুক্তিতে অনেক পরিবর্তন হওয়ায় সিডি, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদির কারণে সৃষ্টিশীলতা ও কপিরাইট ধারণারও বদল হয়েছে। পরবর্তীতে ২০০০ সালে নতুন একটি কপিরাইট আইন করা হয়, যা পরে ২০০৫ সালে সংশোধন হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র আর সঙ্গীতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কপিরাইট লঙ্ঘন হচ্ছে।  শিল্পীর অনুমতি ছাড়া বিভিন্নভাবে তাদের গান ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আইনের লঙ্ঘন। সাহিত্যের ক্ষেত্রে হলেও সেটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে”। কিন্তু গীতিকার সুরকারের অনুমতি ছাড়া এখন অনেকক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হচ্ছে মূল সঙ্গীতকে। রিংটোন, ওয়ালপেপারে সেট হচ্ছে অর্থাৎ ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে মূল মালিকের অনুমতি ছাড়াই। ফলে এর নির্মাতার বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

পাইরেসি বইয়ের বিশাল একটি বাজার তৈরি হয়েছে ঢাকার নীলক্ষেত এলাকায়। কম্পিউটার মার্কেটগুলোয় বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ সফটওয়্যারও পাইরেসি করা, যা কপিরাইটের লঙ্ঘন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব বই বা সফটওয়্যার বিদেশী হওয়ায় কেউ কপিরাইট আইনে অভিযোগ করেননা বলে এগুলোর ব্যাপারে কোন ব্যবস্থাও নেয়া হয়না।