সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ

0
107

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ

৪ জুন শনিবার রাত নটার দিকে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩০ কিলোমিটারের মতো দূরে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় বিএম ডিপো নামের একটি কন্টেইনার টার্মিনালে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।চল্লিশের মিনিটের মাথায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ মালবাহী কন্টেইনারগুলো দুমড়ে মুচড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। বিস্ফোরণের সময় দমকল বাহিনীর কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ করছিল। অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে ।বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় ‘আগুনের ঘটনায় আহত ২০০ জনের বেশি।তাদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।আহতরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহরের অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি  হয়েছে। দমকল বিভাগ জানিয়েছে, আগুন নেভাতে গিয়ে তাদের নয়জন সদস্য নিহত হয়েছে। আরও তিনজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

ডিপোতে আমদানি – রপ্তানিমুখি প্রচুর মালবাহী কন্টেইনার ছিল। যার মধ্যে রাসায়নিক পদার্থও ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর আগে রপ্তানি পণ্য এবং আমদানি হয়ে আসা মাল খালাস হওয়ার পর ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ হিসাবে কন্টেইনার রাখার জন্য ডিপোটি ব্যবহৃত হয়।

বিস্ফোরণের সময় পাঁচ কিলোমিটারের মতো দূরত্বে কাঁপুনি অনুভূত হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে। এতে আশপাশে ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি।ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে ।আগুন নেভাতে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে দমকল কর্মীরা যোগ দিয়েছেন। সহায়তা করছে সেনাবাহিনী সদস্যরা।

এই কন্টেইনার ডিপোতে যে রাসায়নিক-ভর্তি কন্টেইনার ছিল দমকল বাহিনীর কর্মকর্তাদের সেটা জানা ছিল না। ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামের একটি রাসায়নিক থাকার কারণে সেখানে এতো বড় বিস্ফোরণ ঘটেছেবলে নিশ্চিত হয়েছে ফায়ার সার্ভিস।আগে জানতে পারলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। প্রয়োজনে ফোম ব্যবহার করা যেত ।

বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া প্রত্যক্ষভাবে ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আর এর দূরবর্তী প্রভাব পড়েছে ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়।বিস্ফোরণে বাতাসে ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে । স্থানীয় মানুষজনকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যে রাসায়নিক এখন আশপাশের ড্রেনে ছড়িয়ে পড়েছে। রাসায়নিক যেন আশপাশে জলাধার ও সমুদ্রে আরো ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে কাজ চলছে। বালুর বস্তা দিয়ে ড্রেন আটকে দেয়া হয়েছে।

 ভয়াবহ এমন বিস্ফোরণ আগে কখনও দেখেনি চট্টগ্রাম। বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় হতবাক হয়েছে ফায়ার সার্ভিসও। সবাইকে এভাবেই অবাক করার নেপথ্যে ছিল হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বোঝাই ৩৩টি কনটেইনার। এসব কনটেইনারে প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন রাসায়নিক পদার্থ ছিল। আগুনের সংস্পর্শে এলে এসব রাসায়নিক তীব্র দাহ্য হয়ে উঠে। এর সঙ্গে পানি যোগ হলে এটি ভয়াবহ বিস্ফোরকে পরিণত হয়।

২৬ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। সেখানে কয়েক হাজার কন্টেইনার ছিল।এসব কন্টেইনারে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছাড়াও আরো কিছু রাসায়নিক ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও সেখানে রপ্তানির জন্য গার্মেন্টসের তৈরি পোশাকও ছিল বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

ডিপোতে ২০ ফুট দীর্ঘ মোট চার হাজার ৩১৮টি কনটেইনার ছিল। এর মধ্যে আমদানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার ছিল ৫৫৭টি। রপ্তানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার ছিল ৮৬৭টি। খালি কনটেইনার ছিল ২ হাজার ৮৯৪ টিইইউএস। বিএম কনটেইনার ডিপোর মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আক্তার খান বলেন, রাসায়নিক থাকা কনটেইনারগুলো আরও আগে রপ্তানির কথা ছিল। কিন্তু জাহাজিকরণে ঝামেলা হওয়ায় এগুলো ডিপোতে রাখা হয়। এভাবে ডিপোতে রাসায়নিক রেখে বছরের পর বছর তা রপ্তানি করা হয় দেশের বাইরে। আগুনের ঘটনা না ঘটলে এভাবে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতো না ডিপোতে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নীল রঙের বেশ কিছু পতাস্টিকের কনটেইনার। কিছু ফেটে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। কিছু গলে গেছে। এসব কনটেইনারের গায়ে লেখা হাইড্রোজেন পারঅপাইড। কনটেইনারের ওপর স্টিকারে বড় করে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ‘হাইড্রোজেন পার অপাইড ৬০ শতাংশ’। ৩০ কেজির ওই কনটেইনারের স্টিকারেই লেখা রয়েছে ‘দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এবং তাপ পেলে বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে।

কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের ডিএনএ পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ৬ জুন সোমবার সকাল থেকে স্থাপন করা অস্থায়ী বুথে ডিএনএ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেখানে নিহতের স্বজনরা তাদের নমুনা দিচ্ছেন। দুঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছে প্রতিষ্ঠাটি ।