জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নতুন গতি

0
32

জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নতুন গতি

ডেস্ক: পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি রাষ্ট্রবিহীন ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠীর নাম রোহিঙ্গা । ২০১৬-১৭ সালে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের পূর্বে অনুমানিক ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে বসবাস করত। অধিকাংশ রোহিঙ্গা ইসলাম ধর্মের অনুসারী যদিও কিছু সংখ্যক হিন্দুধর্মের অনুসারিও রয়েছে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে। ১৯৮২ সালের বার্মিজ নাগরিকত্ব আইন  পাশ হয় ৷ সে আইন অনুযায়ী তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছে। আর  তাতেই নাগরিকত্ব হারায় মুসলিম প্রধান রোহিঙ্গারা৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, ১৯৮২ সালের আইনে “রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা অর্জনের সম্ভাবনা কার্যকরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ৮ম শতাব্দী পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া সত্ত্বেও, বার্মার আইন এই সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে তাদের জাতীয় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছে। তাদেরকে আন্দোলনের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা এবং সরকারি চাকুরীর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হন ৷ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত পরিস্থিতিতে কয়েক দশক ধরে বৈষম্য ও নির্যাতনের পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা শুরু হওয়া গণহত্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার শিকার হয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নামে বাংলাদেশে। মিয়ানমার পুরোপুরি তাদের দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বিতড়িত করতে চায়। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় মানবিক বাংলাদেশ ৷

বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয় শিবির হিসেবে খ্যাত কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জনসংখ্যার চাপে থাকা ছোট্ট দেশটিতে প্রায় ১৩ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাস করছে। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো আরাকানে চলমান সাম্প্রতিক সংঘাতের জেরে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে ক্যাম্পে ঠাঁই নিয়েছে আরও ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা।

আট বছরে বহুবার তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। একদিকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা অনিশ্চিত, অন্যদিকে তাদের খাবারের জন্য সহায়তা কমানোর কথা বলা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব গত র্মাচ ১৩,২০২৫ চার দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন । জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার সারাদিন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সময় কাটান । জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়টি গতি পাবে সর্ব মহেল এটাই আশা। এই সফরে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিকে বিশ্ব মানচিত্রে অগ্রাধিকারের জায়গায় নিয়ে যাবে। ঝুলে থাকা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া হয়েতো আবার শুরু হবে । কারণ তারা বাড়ি ফিরতে চায়, মিয়ানমার তাদের মাতৃভূমি। জাতিসংঘ মহাসচিব থেকে যে প্রতিশ্রুতি এসেছে এবং মিয়ানমারের বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের সুযোগ এসেছে বলে প্রতীয়মান হয়। আর  এই সংকটের একমাত্র সমাধান নিরাপদ,মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন ।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর এদেশের মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা একটা ডেটলাইন দেওয়ার ফলে এই সময়ে মধ্যে একটা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশা রয়েছে । আগামী সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন হওয়ার কথা । সেখানেও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়া হতে পারে । প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলার না থাকলেও অনেকেই আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। রোহিঙ্গারা আত্মবিশ্বাসী হতে পেরেছে। যা তারা কখনো শুনেনি বা কেউ তাদেরকে জনসমক্ষে বলেনি।

বাস্তবতা হলো “মিয়ানমারের পরিস্থিতিতি এখনও ভয়াবহ, রাখাইনেও একই পরিস্থিতি”। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে যতখন কোনো উদ্যোগই দেখা যাবে না ততখন কিছু বলা বা ধারনা করা কঠিন। কারন , প্রত্যাবাসন যদি প্রতি মাসে ১০ হাজার জন যায়, তাহলে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে পাঠাতে কত বছর লাগবে? তাছাড়া রোহিঙ্গাদের পূর্ণবাসন আরেকটা বড় ইস্যু। আরাকানে রোহিঙ্গাদের যে বসতবাড়ি ছিল সেগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বানানো হচ্ছে ইকনোমিক জোন। এই প্রত্যাবাসের সঙ্গে জিও পলিটিক্স জড়িত। চীন ও মিয়ানমারকে রাজি করাতে হবে। পাশাপাশি আরাকান এখন বিদ্রোহীদের দখলে। ফলে তাদেরও সম্মতি প্রয়োজন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নতুন গতি এসেছে এতে কোন সন্দেহ নাই। জাতিসংঘের মহাসচিবের সফর বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, কারণ এটি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নতুন একটি গতি তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে।

১. জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের গুরুত্ব

জাতিসংঘের মহাসচিবের সফর সাধারণত বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বা মানবিক সংকট মোকাবিলার জন্য একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। এই সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আরও গভীর মনোযোগ দিতে পারে এবং সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত করবে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থার উন্নতির জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবের সফর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

– রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া: যেহেতু মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চল থেকে ব্যাপক সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, জাতিসংঘের মহাসচিবের সফরের মাধ্যমে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য একটি নতুন উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে মিয়ানমারের সরকারের সাথে আলোচনা করার মাধ্যমে।

– মানবিক সহায়তা ও তহবিলের সংস্থান: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘ মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছে, তবে এই সাহায্য কার্যক্রমকে আরও ত্বরান্বিত করার জন্য প্রয়োজন আরও তহবিলরে ব্যবস্থা করা। এই সফরের মাধ্যমে সাহায্য চেয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উত্সাহিত করতে পারেন।

– বাংলাদেশের ভূমিকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে এবং এই শরণার্থীদের সুরক্ষার জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের সফর বাংলাদেশের অবদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানে সহায়ক হতে পারে, যা দেশের প্রতি সম্মান এবং সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

২. রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নতুন গতি

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধান পেতে হলে, মিয়ানমারের সাথে সমঝোতা, আন্তর্জাতিক সমর্থন, এবং শরণার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

– দ্বিপাক্ষিক আলোচনা: মিয়ানমার সরকারের সাথে চলমান বৈঠক এবং আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন সম্ভব করা যেতে পারে। জাতিসংঘ মহাসচিব এই পর্যায়ে একটি *মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারেন।

– আন্তর্জাতিক চাপ ও চাপের কৌশল: জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করতে পারে। এটি একটি বিশ্বব্যাপী চাপ সৃষ্টি করবে, যাতে মিয়ানমার সরকার নিজেদের বাধ্যবাধকতা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।

– বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে। বিশেষ করে, আশ্রয় নেয়া দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা এবং সমন্বিত কার্যক্রম প্রয়োজন।

– বিশ্বের নজর এবং অবদান: জাতিসংঘের মহাসচিবের সফরের ফলে এই সমস্যা বিশ্বব্যাপী আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার আগ্রহ এবং বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ বৈঠকের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের গুরুত্ব তুলে ধরা হবে, যা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

৩. সমস্যার স্থায়ী সমাধান

রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান পেতে হলে শুধুমাত্র মিয়ানমারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে নয়, বরং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান সন্ধান করা জরুরি। জাতিসংঘের মহাসচিবের সফর একদিকে যেমন সংকটের গুরুত্ব বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সহায়তা করবে, তেমনি অন্যদিকে মিয়ানমারকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।

ভৌগোলিক রাজনীতিতে ধীরে ধীরে গুরুত্ব বাড়ছে বাংলাদেশ। সামগ্রিক উন্নয়ন, বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের জন্যই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভৌগোলিকভাবে ভারত ও চীনের মাঝখানে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় উভয় পরাশক্তিই বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতিতেও বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। যে কারণে বাংলাদেশ ঘিরে প্রভাবশালী দেশগুলোর আগ্রহ কম নয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমাজের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং তার আলোকে বাংলাদেশের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতির কারণে আমরা পিছিয়ে আছি। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশ হতে পারে আঞ্চলিক ভূরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগে বঙ্গোপসাগরের ভূমিকা, ভূরাজনৈতিকভাবে বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের প্রয়োজনীয়তা, চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক পথ মালাক্কা প্রণালি, ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের সংযোগ, ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যের স্থিতিশীলতা, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং সর্বোপরি দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যবর্তী দেশ হিসাবে এশিয়ার রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ রয়েছে বলেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি উদীয়মান শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ।

চীনকে সম্পৃক্ত করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বড় পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া চীন সবসময় জাতিসংঘে মিয়ানমারের পাশে থেকেছে। আরাকান সহ মিয়ানমারে চীনের ব্যাপক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থও রয়েছে। চীন যদি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এই সংকট সহজে সমাধান হতে পারে। চীনের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বাণিজ্য মালাক্কা প্রণালী দিয়ে হয়। এই এলাকায় যদি কোন অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী হয়, যুক্তরাষ্ট্র বা তার আঞ্চলিক মিত্ররা ওই প্রণালী বন্ধ করে দিলে চীনের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে একটি নতুন গতি সৃষ্টি করতে পারে। এটি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, এবং মানবিক সহায়তা প্রসারের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। রোহিঙ্গা ইস্যু বিশ্বব্যাপি যে স্থবিরতা এসেছে তা কাটিয়ে তোলার জন্য এখন যা প্রয়োজন তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের সব প্রতিবেশীকে কাজে লাগিয়ে সেখানে সহিংসতা বন্ধে চাপ সৃষ্টি করা৷ একইসঙ্গে সংলাপের একটি কর্মপন্থা তৈরি করা, যা মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সমাধান আনবে ৷ যা স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহায়তা করবে ৷ মিয়ানমারের ভেতরে মানবিক সহায়তা পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারলে তাদের প্রত্যাবাসন সফল হতে পারে ৷ মানবিক সহায়তা বাংলাদেশ থেকে পাঠানোর চ্যানেল তৈরি করা ৷ তবে জাতিসংঘ থেকে যে প্রতিশ্রুতি এসেছে এবং মিয়ানমারের বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের সুযোগ এসেছে বলে প্রতীয়মান হয়। এর মাধ্যমে বিশ্বের একযোগিতায় এই সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব হতে পারে, এবং বাংলাদেশের ভূমিকা ও সহানুভূতির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর চোখ এখন বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশকে কূটনৈতিক দক্ষতায় একটি সুনির্দিষ্ট ইতিবাচক অবস্থানে অবশ্যই থাকতে হবে । পরিবতর্নশীল ভূরাজনীতির সঙ্গে বিশ্বব্যাপী আন্তর্দেশীয় সম্পর্কের হিসাবনিকাশের সমীকরণ ক্রমেই জটিল হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন দেশে স্থিশিলতা এবং দক্ষ জনবল।