আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি

0
55

আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি

ইরানের পবিত্র খোমেইন নগরীতে জন্ম আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির আসল নাম সৈয়দ আলী,তিনি ইরাক ও ইরানের বিখ্যাত হাওজা মাদ্রাসাগুলো থেকে ইসলামের সর্বোচ্চ স্তরের শিক্ষা অর্জন করেছেন।
তাঁর উপাধি ‘আয়াতুল্লাহ’—যা একজন প্রাজ্ঞ ফিকাহবিদ, মুজতাহিদ এবং আল্লামা-সমতূল্য মর্যাদার প্রতীক।
খামেনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৯ সালে ইরানের পবিত্র নগরী মাশহাদে। তিনি ছিলেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি’র শিষ্য, যিনি ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের মাধ্যমে দেশটির প্রো-ওয়েস্ট রাজতন্ত্রকে উচ্ছেদ করেন ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৮১ সালে খামেনি একটি হামলার শিকার হন, যাতে তার ডান হাত স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে যায়। খোমেনির মৃত্যুর পর ১৯৮৯ সালে, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পর থেকে খামেনি ইরানের সীমান্ত ছাড়িয়ে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে মনোযোগ দেন। অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স নামে পরিচিত একাধিক মিত্র গোষ্ঠী গড়ে তোলেন যা লেবানন থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত।
তিনি নবী মু*হাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ৩৮তম বংশধর। তাঁর বংশানুক্রম নবীর দৌহিত্র ইমাম হু*সাইন (রাঃ)-এর সন্তান ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) এর মাধ্যমে সংযুক্ত। তাঁর মাথার কালো পাগড়ি সেই নবুয়ত-সম্পৃক্ত বংশধারার প্রতীক হিসেবেই পরিগণিত।
আয়াতুল্লাহ খোমেনি শিয়া মাজহাবের কিছু প্রচলিত ও বিতর্কিত বিষয়ে এমন কিছু ফতোয়া প্রদান করেছেন, যা শুধু শিয়াদের মাঝে নয় সুন্নী মুসলমানদের মাঝেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তাঁর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে: সাহাবায়ে কেরামদের গালি না দেওয়া, মহররমে নিজ দেহে রক্ত ঝরানো থেকে বিরত থাকা, এবং সব মাজহাবের মুসলমানদের একত্রে একই মসজিদে নামাজ পড়ার প্রতি উৎসাহ দেওয়া যা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী অবদান।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হলেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি। গত প্রায় চার দশক ধরে তিনি শুধু ইরানের ভেতরের পরিবর্তনের সাক্ষী নন, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির অবস্থানও রূপান্তর করেছেন নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও আন্দোলন দমন করেছেন।
সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে খামেনি ইরানের সরকার, বিচার বিভাগ, সামরিক বাহিনী, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এবং কুদস ফোর্স–এর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখেন।
আধুনিক ইরানের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা রাজনীতিক ও ধর্মীয় নেতার নাম আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ১৯৮৯ সালে সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির ইরানের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও কূটনৈতিক নীতিনির্ধারণের কেন্দ্রে রয়েছেন।
আলি খামেনির জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৯ এপ্রিল ইরানের মাশহাদ শহরের এক ধর্মীয় পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং মাশহাদ ও ইরাকের পবিত্র নগরী নাজাফের বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষালাভ করেন। পরে তিনি ইরানের কওম শহরে স্থায়ী হন এবং আয়াতুল্লাহ হুসাইন বুরুজেরদি ও আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির শিষ্যত্বে অধ্যয়ন করেন।
ষাট ও সত্তরের দশকে তিনি শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনবিরোধী গোপন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এর ফলে বহুবার গ্রেফতার হন ও শাহের গোপন পুলিশ সংস্থা সাভাকের হাতে নির্যাতিত হন। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে শাহের পতনের পর ইরানে নতুন রাজনৈতিক কাঠামো গঠিত হয়। এই সময় খামেনি দ্রুত নতুন শাসনব্যবস্থার অভ্যন্তরে উচ্চপর্যায়ের ভূমিকা গ্রহণ করেন। তিনি ইসলামি বিপ্লবী পরিষদের সদস্য, উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য ছিলেন।
১৯৮১ সালে একটি হত্যাচেষ্টায় গুরুতর আহত হন। একটি মসজিদে বক্তৃতাকালে টেপ রেকর্ডারে লুকানো বোমা বিস্ফোরণে তার ডান হাত স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। একই বছরের আগস্টে ইরানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলি রাজায়ী ও প্রধানমন্ত্রী জাভাদ বাহোনার নিহত হলে খামেনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন এবং নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করেন। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত খামেনেয়ী ইরানের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তৎকালীন ও প্রথম সর্বোচ্চ নেতা রুহুল্লাহ খোমেনীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে খামেনেয়ী ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ইরানের রাষ্ট্রপ্রধান, সামরিক বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ, ফরমান জারিকারী এবং অর্থনীতি, পরিবেশ, পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় পরিকল্পনা প্রভৃতি খাতে সরকারি নীতিনির্ধারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহীতা। মুসলিম জাতিকে ঐক্যের পথ দেখান।
ফোর্বস সাময়িকী ২০১২ সালে তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ২১ জন ব্যক্তির তালিকায় স্থান দেয়।