আয়কর রিটার্ন: যা মনে রাখা আইনের কারণে জরুরি

0
167

আয়কর রিটার্ন: যা মনে রাখা আইনের কারণে জরুরি

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যাদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন রয়েছে তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। সেটি না করলে জরিমানা করার বিধান রয়েছে। তবে, রিটার্ন দাখিল করলেই যে আয়কর দিতে হবে তা নয়। কারো আয় যদি করযোগ্য না হয় তাহলে কর দেবার প্রয়োজন নেই, শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে। আয়কর রিটার্ন দাখিল করা জটিল কোন বিষয় নয়। তবে কিছু বিষয়ে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তা না হলে আইনগত ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইনকাম ট্যাক্স আইন অনুযায়ী বেশ কিছু আয়, করের আওতায় পড়ে। যেমন চাকরি থেকে পাওয়া বেতন, ব্যবসা থেকে আয়, বাড়িভাড়া থেকে পাওয়া অর্থ, কোন সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তর ফলে প্রাপ্ত অর্থ, জামানতের সুদ (সঞ্চয়পত্র, বন্ড, ব্যাংকের সুদ ইত্যাদি), কৃষি হতে আয়। আর আছে ‘অন্যান্য’ যার মধ্যে পড়তে পারে অনেক কিছু।
সম্পদের স্বচ্ছ বিবরণ: ব্যক্তিগত আয়, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার,  এবং অন্যান্য স্থাবর সম্পদের বিবরণ আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। যদি  কোন সম্পদের বিবরণ রিটার্নে তুলে না ধরা হয়, তাহলে সেটি বৈধ থাকবে না এবং আইনগত ঝামেলায় পড়োর সম্ভাবনা থাকে। সম্পদের স্বচ্ছ বিবরণ না দিয়ে অনেকে বড় ধরনের ভুল করে। সেক্ষেত্রে সম্পদ গোপনের অভিযোগে পরবর্তীতে আয়কর দাতাকে নানা ধরনের আইনগত ঝামেলা পোহাতে হয়।
সঠিক কাগজপত্র দাখিল: যখন আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হয় তখন তার সাথে কিছু প্রমাণ এবং কাগজপত্র দিতে হয়। চাকরিজীবী হলে বেতন এবং সুযোগ-সুবিধার বিবরণ, ব্যাংকে টাকা জমা থাকলে সুদ থেকে পাওয়া টাকার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা হলে সেটির ফটোকপি এবং মুনাফা বাবদ পাওয়া টাকার সার্টিফিকেট দিতে হবে। এজন্য সব ধরনের কাগজপত্র সর্বক্ষণ কপি করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
ফরম পূরণ: চাইলে নিজের রিটার্ন ফর্ম নিজে পূরণ করে জমা দেওয়া যায় অথবা একজন ভালো আয়কর আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া যায় । ভালো আয়কর আইনজীবী থাকাটাও জরুরি। অনেক সময় আইনজীবীদের ভুলের কারণে করদাতা ঝামেলায় পড়তে পরেন। আইনজীবী আয়, ব্যয় এবং সম্পদের পরিমাণ কিভাবে তুলে ধরছেন সেটি খেয়াল করা উচিৎ। আয়কর আইনজীবীদের কারণে অনেক সময় আয়কর বিভাগ এবং করদাতাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা যদি নিজেই নিজের রিটার্ন দাখিল করতে পারে, তাহলে সেটি সবচেয়ে ভালো ।
প্রথমবার ক্ষেত্রে সতর্কতা: যারা প্রথমবার রিটার্ন জমা দিবে তারা ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে সতর্কতা দরকার । সম্পদের বিবরণ দাখিলের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, কোন কিছু লুকানোর চেষ্টা না করা। অনেকে মনে করে, প্রথমবার সব সম্পত্তির বিবরণ না দিয়ে ধাপে-ধাপে প্রতিবছর সেগুলো দেখানো হবে। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। বিষয়টি যদি আয়কর কর্তৃপক্ষের নজরে আসে তাহলে আইনগত ঝামেলায় পড়তে হবে। কারন পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে যে কোন ফাইল অডিট হতে পারে। সেক্ষেত্রে গরমিল পাওয়া গেলে বড় অংকের জরিমানা হতে পারে ।
আয়-ব্যয়ের সংগতিপূর্ণ দাখিল: আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আয় এবং ব্যয়ও দেখাতে হবে। আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকাটা জরুরি। জীবনযাত্রার ব্যয়, আয়ের সাথে যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তাহলে আইনগত ঝামেলায় পডোর সম্ভাবনা থাকে।
কৃষি আয়: কৃষিখাত থেকে কোন আয় থাকলে সেটি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। কৃষি জমি থেকে শস্য বা মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিবছর যে আয় হয়, সেখান থেকে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকার উপর কর দিতে হবে। যদি কৃষি একমাত্র আয়ের উৎস হয়ে থাকে কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।
বাড়ি ভাড়া আয়: যদি বাড়িভাড়া দিয়ে কোন আয় হয় তাহলে সেটি আয়কর রিটার্নে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।সেক্ষেত্রে যে অংশটি ভাড়া দিয়েছেন, সেটির আয়তন কত তা উল্লেখ করতে হবে। বাড়িভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ২৫ হাজার টাকার বেশি আয় হলে বাড়ির মালিককে সেটি ব্যাংক হিসেবে জমা রাখতে হবে। সেটি না করলে জরিমানা করার বিধান রয়েছে।