আইসিটি আইন মত প্রকাশের অধিকারের হুমকিস্বরূপ

0
1028

বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন মানবাধিকার-সম্পর্কিত বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা, বিশেষত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নাগরিকের মত প্রকাশের অধিকারের হুমকিস্বরূপ বলে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর জোট হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ ।

আলোচনার মাধ্যমে এ আইনটির প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার আহ্বান জানিয়ে ফোরাম চলমান মামলাগুলোর বিচার-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করারও দাবি জানিয়েছে।

গতকাল রোববার ফোরামের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে সই করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল।
সংশোধিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বেশ কিছু ধারার অস্পষ্টতা নাগরিকদের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনে অপব্যবহূত হতে পারে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বিধিমালায় ৫৭ ধারার অপব্যবহার হতে পারে বলে আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। কিন্তু ওই উদ্বেগকে আমলে না নিয়ে শাস্তির পরিমাণ আরও কঠিনতর করে বেশ কিছু সংশোধনী এনে গত বছরের ৫ অক্টোবর সংসদে আইনটি গ্রহণ করা হয়েছে। সংশোধিত এ আইনে পুলিশকে সরাসরি মামলা করার ও পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সংশোধিত আইনে কিছু অপরাধের অভিযোগকে অজামিনযোগ্য এবং আমলযোগ্য নয় এমন অপরাধকে আমলযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আইনে ৫৪, ৫৫, ৫৭ ও ৬১ ধারায় উল্লিখিত অপরাধগুলোকে আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য উল্লেখ করে সর্বনিম্ন সাত বছর এবং সর্বোচ্চ শাস্তির মেয়াদ ১০ বছর থেকে ১৪ বছর করা হয়েছে।

আইনের এ ধারাগুলো রাজনৈতিক ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে অপব্যবহারের সুযোগ অত্যধিক উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ৫৭ ধারায় উল্লেখ করা মিথ্যা, অশ্লীল, মানহানিকর, উসকানিমূলক, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন কিংবা ধর্মীয় অনুভূতি-এ শব্দগুলো কোন কোন ধরনের কর্মকাণ্ডকে অন্তর্ভুক্ত করবে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায় না। কাজেই নির্দেশনাবিহীন এ শব্দগুলোর উপস্থিতি অবশ্যই আইনের অপপ্রয়োগকে ত্বরান্বিত করবে। এ ছাড়া এ আইনের অধীন অপরাধগুলোকে জামিন অযোগ্য ঘোষণা করায় তা নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করে। এ ধারাগুলো মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্যও হুমকিস্বরূপ, যা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিরও লঙ্ঘন। বাংলাদেশের সংবিধানেও মত প্রকাশের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের আওতায় প্রথম বিচার হিসেবে বর্তমানে সাইবার ক্রাইম অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান-সম্পর্কিত তদন্ত প্রতিবেদনে অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তথ্য বিকৃত করা এবং এর মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এস এম নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সম্প্রতি এ ট্রাইব্যুনাল এ মামলার বিচারের ক্ষেত্রে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া ৫৭ ধারায় আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। একই ধারায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে চারজন ব্লগারের বিচার চলছে।

বিবৃতিতে সুলতানা কামাল বলেন, ‘মানবাধিকারকর্মীরাও জবাবদিহির আওতাধীন কিন্তু এ জবাবদিহি যেন রাষ্ট্র কর্তৃক হয়রানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হয়। এ আইন যেন মানবাধিকারকর্মীদের কাজের ক্ষেত্রে এবং নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে।’