তরুণ সমাজের শারীরিক পরিবর্তন ও কিছু ভুল ধারণা – ভুবন সর্দার

0
2212

তরুণ সমাজের শারীরিক পরিবর্তন ও কিছু ভুল ধারণা – ভুবন সর্দার

১২/১৩ বৎসর বয়স থেকেই ছেলেমেয়েদের শারীরিক গঠনের দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। শরীরের পরিবর্তন বেশ জোরালো প্রভাব ফেলে কিশোর-কিশোরীদের মনে। নানা-রকম জিজ্ঞাসা, চিন্তা আচ্ছন্ন করে তোলে তাদের মনকে। মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সাপোর্ট থাকলেও ছেলেদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কোন সাপোর্ট নেই। বরং পড়তে হয় নানা রকম বিড়ম্বনায়। মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন কে মা-বাবা স্বাভাবিক মনে করেন, কিন্তু ছেলেদের এই পরিবর্তনের কোন দিক র্নিদেশনা না পাওয়ায় তরুণ ছেলেরা যৌনজীবন নিয়ে ভুল ধারণা নিয়ে বিপথে যায় আবার অনেকে মানসিক সমস্যায়ও পড়ে। সর্বোপরি যৌনজীবন নিয়ে ভুল ধারণা বিয়ে ভীতির কারণও হয়ে উঠে। তরুণরা পা বাড়ায় কু-সংস্কারের পথে আর ফায়দা লোটে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।

তরুণদের অকাল যৌনতা আমাদের দেশে পশ্চিমা দেশের মত নয়। আমাদের দেশে তরুণদের যৌনতার বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ ও অল্পবয়সে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার কারণে যৌন দুর্বলতা হতে পারে তবে তা বিয়ে ভীতিতে আক্রান্ত হওয়ার নয়। তরুণদের শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগেরই কোন যৌন সমস্যা নেই। তবে মাদক সেবন, ঝুঁকিপূর্ণ যৌন নিষ্ক্রিয়তা যৌন দুর্বলতা হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌনজীবন নিয়ে ভুল ধারণা, মানসিক সমস্যা এবং যৌনজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতা তরুণদের ভীতির প্রধান কারণ।

তরুণদের যৌন দুর্বলতা একটি অশান্তির নাম। পুরুষদের মধ্যে যৌন সংক্রান্ত সমস্যা নতুন কিছু নয়। অতীতের তুলনায় তরুণ প্রজন্মের মাঝে বিপথগামীতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের তুলনায় এখন অল্পবয়সীরা বেশিমাত্রায় যৌনতায় লিপ্ত হচ্ছে। আর তরুণ পুরুষদের যৌন সংক্রান্ত সমস্যা আমাদের দেশে যত না বাড়ছে তার চেয়ে অপচিকিৎসা ক্ষতি ডেকে আনছে অনেক বেশী। মনে রাখতে হবে বছরের পর বছর ধরে যে অপচিকিৎসায় দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠি যৌন সংক্রান্ত ব্যাপারে নিজেদের ভয়ানক ক্ষতি ডেকে আনছে তার অধিকাংশই তরুণ। রাস্তাঘাটের আশেপাশে গজিয়ে উঠা হারবাল-আয়ুুর্বেদ, ভেষজ ও নানা কবিরাজি চিকিৎসার নামে  তরুণদের যে শুধু বিভ্রান্ত করা হচ্ছে তাই নয়, বহু এ্যালোপ্যাথিক ডাক্তারও তরুণদের যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে অজ্ঞতা ও দুর্বলতার সুযোগে রোগি বানিয়ে দিচ্ছে।

যৌন সমস্যা ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম এর মতে তরুণ পুরুষদের যৌন সমস্যার অধিকাংশই মানসিক। যার চিকিৎসার আদৌ প্রয়োজন নেই। শারীরিক সমস্যায় যোগ্য চিকিৎসকের উপযুক্ত চিকিৎসা-পরামর্শের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। অযথা হারবাল-আয়ুুর্বেদ, ভেষজ, কবিরাজি এবং উত্তেজক এ্যালোপ্যাথিক ঔষধ সেবনে যৌন জীবন বিপর্যস্ত হতে পারে। এক এক দেশের মানুষের শারীরিক গঠন এক এক রকম। দেশের সামাজিক অবস্থার কারণে এই সময় তরুণরা যৌনতার বিভিন্ন রম্য গল্প বিভিন্নজন থেকে শুনতে ভালবাসে এবং তরুণরা যা শুনতে চায় তাই শুনে। আর এই গল্পগুলো আসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ বিক্রিত রুচির মানুষদের কাছ থেকে অথবা ফেসবুক, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো থেকে। এই বয়সে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ নিয়ে চিন্তা করতে বেশ ভালই লাগে। অনভিজ্ঞ মানুষদের কাছ থেকে অথবা ফেসবুক, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে রম্য গল্প শুনে পড়ে বা দেখে প্রায় সকলে নিজেকে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মনে করে। সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে ছেলে মেয়েদের মধ্যে তেমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে না। গড়ে উঠলেও পারিবারিক বা সামাজিকভাবে তা ভালো চোখে দেখে না। এতে তরুণ-তরুণীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই যৌন বিষয়ে অবাদ আলোচনা করতে না পারায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এ বিষয়ে ভীতি কাজ করে। আর এই অনভিজ্ঞ তরুণরা যখন দাম্পত্য জীবন শুরু করে তার জন্য অনেক কিছুই নতুন। যৌন জ্ঞান না থাকায় বিবাহিত জীবনে অনেকে নিজেকে দুর্বল মনে করে কিন্তু বাস্তবতায় তা হচ্ছে সাধারণ বিষয়। গল্প শুনে পড়ে বা দেখে যা জেনেছে বাস্তব একটু ভিন্ন হওয়ার কারণে এই টগবগ তরুণ যৌন পরিপক্কতা থাকা সত্ত্বেও হীনমন্নতায় ভোগে। আর এই জায়গা থেকেই শুরু হয় মানসিক দুঃচিন্তা। তাই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিজ্ঞাপনের ছটায় বিভ্রান্ত হয়ে বিষয়টি নিয়ে মন-মানসিকতাকে দুর্বল করা ঠিক নয়। এ বিষয়ে একটু সচেতন থাকলে, এ সংক্রান্ত কোনো সমস্যাই হওয়ার কথা নয়। নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, দুধ, ডিম এবং মধু খাবার মেনুতে থাকলে যৌন দুর্বলতা আসার কোনো সুযোগই থাকবে না। তবে কোনো প্রকার দুর্ঘটনা বা রোগ-ব্যাধির কারণে যৌন দুর্বলতা বা যৌন সংক্রান্ত কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। কিন্তু ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে হরহামেশাই প্রতারিত করা হচ্ছে তরুণ যুবকদের। ডাক্তার নামধারী এক শ্রেণীর অসাধু লোক চিকিৎসার নাম করে যৌন রোগের ভয় দেখিয়ে তরুণদেরকে প্রতারিত করছে। অথচ দেখা যায় অনেকেরই কোনোপ্রকার সমস্যায় থাকে না। আবার কারো কারো সমস্যা থাকলেও এটা খুব সামান্য যা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অল্প দিনের মধ্যে  দূর হয়ে যায়।