প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন।
রোববার (১৪ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁও কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব নির্দেশনা দেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৫ দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো হচ্ছে :
(১) ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী কেন্দ্রীয় পর্যায় হতে তৃণমূল পর্যন্ত উদ্যাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(২) ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে হবে।
(৩) সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানী বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
(৪) জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
(৫) যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
(৬) গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনে আপনাদের ব্রতী হতে হবে।
(৭) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’র উন্নয়ন ও বিকাশে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে হবে। দৈনন্দিন প্রয়োজনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে জেলার সাধারণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
(৮) তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে।
(৯) শিক্ষার সকল স্তরে নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার হ্রাস এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।
(১০) ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
(১১) কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিতে হবে।
১২) ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং এ ধরনের অনৈতিক কর্মকা- কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
(১৩) দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
(১৪) পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
(১৫) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২’ এবং এ সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনাবলি অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
(১৬) সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলিকে কার্যকর করতে হবে।
(১৭) জেলা প্রশাসকগণ জেলাপর্যায়ে বিভিন্ন কমিটির প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সকল কমিটিকে সক্রিয়, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে হবে।
(১৮) দপ্তরসমূহের বিদ্যমান সেবাসমূহ তৃণমূলে পৌঁছানোর লক্ষ্যে তথ্য মেলা, সেবা সপ্তাহ পালনসহ ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
(১৯) শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য-পরিবহন ও আমদানি-রপ্তানি নির্বিঘ্ন করা এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(২০) বাজার-ব্যবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। ভোক্তা-অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির যে কোনো অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
(২১ নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পাচার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিবাহের মত সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্তি’র জন্য দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।
(২২) নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
(২৩) শিশু-কিশোরদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংস্কৃতিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।
(২৪) প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
(২৫) পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণের পাশাপাশি এ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গগুলির সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া, পর্যটনশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।
(২৬) বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে এই ব্যবস্থা নিতে হবে।
(২৭) জেলার আকার এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে সেই জেলার উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কোন ঢালাও পরিকল্পনা নয়, জেলার চাহিদানুযায়ী এবং তার প্রকৃতি ও পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
(২৮) স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ, জনগণের চাহিদা এবং উন্নত জীবন নিশ্চিত করার বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
(২৯) চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় সরকারের একটি মিনি স্টেডিয়াম করার উদ্যোগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে বিভিন্ন উপজেলায় স্কুল এবং কলেজের খেলার মাঠটিকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেটি কিন্তু উদ্দেশ্য নয়, স্টেডিয়াম বলতে চারদিকে আবার ঘেরাও করে ফেলা নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশটাও ঠিক রাখতে হবে।
(৩০) গৃহহারা, ভূমিহীন এবং ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন- সরকার বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে এসব হতদরিদ্র মানুষকে পুনর্বাসন করছে। কিন্তু আবার নদী ভাঙ্গছে এবং মানুষ গৃহহারা হচ্ছে। কাজেই যখনই এমন হবে তখনই তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। কেউ ভিক্ষা করতে পারবে না। আর সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির তালিকা প্রণয়নকালে প্রকৃত দুঃস্থরাই যেন সহায়তা পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
(৩১) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিজড়া, বেদে ও প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। জলাধার সংরক্ষণের নিমিত্তে খাল খনন ও পুকুর খনন করতে হবে। পরিকল্পিত নগরায়ন ও বনায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসাইন, শেরপুর জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যদের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
এছাড়া, সরকারের সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্পের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্মকে বিকৃত করে যে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করা হয়, সেটা যেন আর না করা হয়। সেজন্য সেখানে প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতোমধ্যে মসজিদের জন্য স্থান নির্ধারণ করে কাজ শুরু করা হচ্ছে, সেটা যাতে ভালভাবে হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
বিএম/এমআর