সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ আর নেই

0
1060

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর নেই (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)।

রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

এরশাদ রক্তে সংক্রমণসহ লিভার জটিলতায় ভুগছিলেন। এছাড়া সাবেক এই রাষ্ট্রপতির অস্থিমজ্জা পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে পারছিল না।

আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ২৭ জুন সকালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অসুস্থবোধ করলে তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে জাপা চেয়ারম্যানকে দুই দফা সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। অসুস্থ থাকায় নির্বাচনের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেননি তিনি।

গত ৪ জুলাই দুপুরে এরশাদকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সেদিনই চিকিৎসক সূত্রে জানানো হয়েছিল, তার শারীরিক অবস্থা একেবারেই খারাপের দিকে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছিলেন তিনি। সৃষ্টিকর্তার বিশেষ রহমত ছাড়া তার এ যাত্রায় বেঁচে যাওয়াও যে কঠিন সে বিষয়েও আভাস দিয়েছিল চিকিৎসক দল।

একই দিন সন্ধ্যায় সাবেক রাষ্ট্রপতির শারীরিক অবস্থার অবনতি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করছে না বলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও এইচএম এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের।

গত ২২ জুন সকালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করার পর এরশাদের ফুসফুস ও কিডনিতে সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ে।

এরপর ২৭ জুন পুনরায় অসুস্থবোধ করলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে সিঙ্গাপুর নেয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে দেশেই রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এক নজরে এরশাদ :

১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ। পরে তার পরিবার রংপুরে চলে আসে। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন তিনি।

১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন।

১৯৭৩ সালে এরশাদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিয়োগ করা হয়।

১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনীপ্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের অব্যবহিত পরে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) হিসেবে দেশ শাসন করেন। এরপর তিনি রাষ্ট্রপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণ করে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

১৯৯১ সালে জেনারেল এরশাদ গ্রেপ্তার হন এরশাদ। কারাগারে থেকেই ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। ওই নির্বাচনে রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি। বিএনপি সরকার তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন।

১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ছয় বছর জেলে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের আমলে তিনি জামিনে মুক্ত হন।

২০০০ সালে তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে মূল ধারার চেয়ারম্যান হন তিনি।

২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। এরপর তিনি ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সাংসদ হন।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও রংপুর-৩ আসন হতে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। চলতি জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।

বিএম/এমআর