সন্ত্রাসবাদ দমনে জিরো টলারেন্স ও রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজানের পর জোরালো পদক্ষেপ নেয়ায় বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে ৬ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড পিস প্রকাশিত ‘গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স’ বা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে (আইইপি) ৮২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩১তম।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে তুলনামূলক সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে। গতবছর বাংলাদেশে মোট ৩১টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে, যাতে প্রাণ হারান ৭ জন। ২০১৭ সালের তুলনায় গত বছর সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা কমেছে ৭০ শতাংশ। এতে হলি আর্টিজান হামলার পর সরকারের নেয়া পদক্ষেপের উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, হলি আর্টিজান হামলার পর ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল নিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে ভাবতে হয়েছিল। হলি আর্টিজানের হামলায় ৭ জাপানি ও ইতালির নাগরিক নিহত হওয়ার পর প্রথম ছয় মাস ব্যবসায় সেক্টরে সেই হামলার বেশ প্রভাব পড়েছিল। যা দেশটিকে একপ্রান্তে ঠেলে দেয়।
এ হামলার তিন বছরে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ দমনে নানা পদক্ষেপ নেয়। সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল দেশের সামগ্রিক অবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় বাংলাদেশ দারুণভাবে এই লড়াইয চালিয়েছে। যার ফলে সন্ত্রাসবাদের বৈশ্বিক সূচকে দেশটির এমন উন্নতি।
প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০১৭ সালে যে আটটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন হামলা চালিয়েছিল তার মধ্যে পাঁচটিই ২০১৮ সালে বাংলাদেশে কোনো হামলা চালায়নি। তাদের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটও (আইএস) রয়েছে।
বাংলাদেশের বিপরীতে সন্ত্রাসবাদের তালিকায় প্রথম স্থানে থাকা আফগানিস্তানে ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে। যার ফলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রথম স্থানের নামটি আফগানিস্তানের। ২০০৮ সালে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলায় যে নিহতের সংখ্যা ছিল তা বেড়েছে ৬৩১ শতাংশ।
বিশ্বের প্রতি বিশটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মধ্যে ১৬টিই হয় আফগানিস্তানে। ২১০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র আর তালেবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হলেও সেই বছরও তালেবান ভয়াবহ সব হামলা চালায়। আফগানিস্তানের পরেই ৭,৩৭৯ মৃত্যু নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছ ইরাক। এরপর যথাক্রমে নাইজেরিয়া, সিরিয়া, পাকিস্তান ও সোমালিয়ার অবস্থান।
বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে ভারতের অবস্থান এখন সপ্তম। ২০১৮ সালে দেশটিতে ৭৪৮টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে ৩৫০ জন এবং আহত হয়েছেন। ৫৪০ জন। ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতে ৮ হাজার ৪৭৩ জন মানুষ প্রাণ হারান। সেই সংখ্যা কমলেও তালিকায় দেশটির অবস্থান প্রথম দশেই ঘোরাফেরা করছে।
তবে ২০১৯ সালে প্রকাশিত বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের ওই তালিকায় যে হিসাব দেয়া হয়েছে তাতে বলা হচ্ছে, সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে ২০১৮ সালে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৫২ জনে। ২০১৪ সালে বিশ্বে সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ৩৩ হাজার ৫৫৫ জন মানুষ নিহত হয়। যা ৫৩ শতাংশ কমেছে।
তবে গোটা বিশ্বের পরিস্থিতি এক নয়। বিশ্বের ৯৮টি দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলার সংখ্যা আরও কমেছে। বিপরীত দিকে ৪০টি দেশে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা আরও বেড়েছে। তবে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ এখনো সন্ত্রাসী হামলার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১৮ সালে বিশ্বের ১০৩টি দেশে অন্তত একটি সন্ত্রাসী হামলা এবং ৭১টি দেশে অন্তত ১ জন নিহত হয়েছে।