ঝকঝকে পোস্টার আর স্লোগানে কাউকে নেতা বানাবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
এই সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সকালে দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়েছিল। দুপুরে ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেওয়ার সময় বিভিন্ন নেতার নামে স্লোগান চলে, যা শুনে বিরক্তি প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে। এটা বাড়াবাড়ি হয়েছে। স্লোগান দিয়ে নেতা বানানো যাবে না। বিলবোর্ডে সুন্দর সুন্দর ছবি দিয়ে নেতা হওয়া যায় না। ঝকঝকে পোস্টারের ছবি কাউকে নেতা বানাবে না। মস্তানি করে নেতা হবার দিন শেষ।
তিনি বলেন, নেতা হবে দলের নিয়ম শৃঙ্খলা অনুযায়ী। নেতা হবেন ত্যাগীরা, যারা দলের দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়েছে। সুখে-দুঃখে দলের সঙ্গে ছিল, তারাই হবে নেতা।
তিনি আরও বলেন, পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, খারাপ লোককে দল ভারী করার জন্য আওয়ামী লীগে আনবেন না। আমাদের বহু লোক রয়েছে। খারাপ লোকের প্রয়োজন নেই। বুয়েটের আবরার হত্যাকারীর মতো কর্মী আমাদের দরকার নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কথায় কথায় মারামারি করে, এমন লোক আমাদের দরকার নেই। রাজশাহীতে অধ্যক্ষকে পানিতে ফেলে দেয়, এমন কর্মী আমাদের দরকার নেই।
চট্টগ্রামে দলীয় কোন্দলের দিকে ইঙ্গিত করে কাদের বলেন, চট্টগ্রামের মাটি শেখ হাসিনার ঘাঁটি। এ ঘাঁটিতে যে ফাটল ধরেছে, তা ক্লোজ করে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। মৌসুমী ও অতিথি পাখিদের স্থান আওয়ামী লীগে নেই। দল ভারী করার জন্য যারা পকেট কমিটি করবে, তাদের প্রয়োজন নেই। নেতৃত্বে সুবিধাবাদীরা আসলে আওয়ামী লীগ টিকে থাকতে পারবে না। দুঃসময়কালে পাঁচ হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন নেতা উৎপাদনের কারখানা। কর্মী উৎপাদনের কারখানা কমে গেছে। ব্যানার-পোস্টার লাগাতে এখন আর কর্মী পাই না। ভাড়া করা টোকাই দিয়ে লাগাতে হয়। এখন সবাই নেতা হয়ে গেছে, কর্মী কেউ নয়। সবাই নেতা হতে চায়। নেতা হতে গেলে আগে কর্মী হতে হবে। যারা নেতা হতে চান সৎ জীবনযাপন করবেন। কত টাকা দরকার জীবনের জন্য। চাঁদাবাজ আওয়ামী লীগের নেতা হতে পারে না। টেন্ডারবাজ, জমি দখলকারী, সন্ত্রাসীদের না বলুন।
কাদের বলেন, জনগণের মাঝেই আমাদের থাকতে হবে। আমাদের ক্ষমতার উৎস বিএনপির মতো বন্দুকের নল নয়। তিনি বলেন, বিশ্বের তিনজন সৎ রাজনীতিকের একজন আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের প্রভাবশালী রাজনীতিকের একজন তিনি। বাংলাদেশে ৭৫ পরবর্তী সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক তিনি, বাংলাদেশে সবচেয়ে ঝুঁকি নিয়ে যিনি জীবনযাপন করেন তিনিই হলেন শেখ হাসিনা। নেত্রীর সততা-সাহস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এম এ সালামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা, দিদারুল আলম, নারী সংসদ সদস্য খদিতাজুল আনোয়ার সনি।