বেপরোয়া সার্টিফিকেট বাণিজ্য করা প্রতারক চক্র
দখিনা ডেস্ক: জাল সার্টিফিকেট তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত একাধিক জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্য বিষয়ে প্রায় পত্রিকায় সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় । এ চক্রের কাছ থেকে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ ছাড়াও যে কোনো পর্যায়ের সার্টিফিকেট অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করা সম্ভব। বিষয়টি উদ্বেগজনক। মেধা ও অধ্যবসায়ের স্বীকৃতি হিসেবে পাওয়া সার্টিফিকেট যদি টাকা দিলেই মুড়ি-মুড়কির মতো যত্রতত্র পাওয়া যায়, তাহলে এর চেয়ে উদ্বেগজনক আর কী হতে পারে! অতিপরিচিত কিছু এলাকাসহ সারা দেশে প্রতারক চক্র আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় এসব অপকর্ম করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃংখলা বাহিনী মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও পরিস্থিতির কোনো হেরফের হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কারও টনক নড়ছে না।
টাকার বিনিময়ে চাইলেই দেশের নামকরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট পাওয়া গেলে কষ্ট করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন কী? এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ভুয়া সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে চাকরির বৈতরণী পার হয় যারা, মেধার দিক থেকে তারা যোগ্য থাকে না। জাল বা ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে অযোগ্য বা মেধাহীন লোকেরা যদি সরকারিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে আসন গেড়ে বসে, তবে তার ফল কখনোই শুভ হয় না। শক্তহাতেই এ ধরনের প্রতারণা বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সন্দেহ নেই, এতে ব্যক্তিগতভাবে মানুষ যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়, পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিভিন্ন র্দুবলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিবছর বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৌশলে জাল সনদ ছড়ানোর কথা সুবিদিত। ভর্তির সময় যাতে জাল সনদ প্রতিরোধ করা যায়, সে বিষয়ে এখন থেকেই ইউজিসি-শিক্ষামন্ত্রালয় বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেণ গ্রহণ করা উচিত।শুধূ সতর্কতামুলক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দায় এড়ানো যাবেনা । তবে সনদ জালিয়াতির সঙ্গে কেবল দেশীয় প্রতারক দলই সম্পৃক্ত নয়, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।
দু:খজনক বিষয় হল, ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে অনেকে বিদেশে যাচ্ছে। বিদেশে যাওয়ার পর তারা নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এর বাইরে দেশে আরও নানা ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালাছে। তাছাড়া যখন বিদেশ থেকে বা দেশে বহুজাতি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ সত্যায়িতের অনুষন্ধান আসে, তখন দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়েই প্রশ্ন উঠে । সরকার এসব অসাধু জালিয়াত চক্র নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- এটাই প্রত্যাশা।
সনদ জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি) নোটিশ দিয়েছে। একইসঙ্গে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। কোনরকম তদন্ত ছাড়া ইউজিসি’ শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সতর্ক জারি করে দায় এাড়াতে চায় । ফলে ওইসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা পড়ে কঠিন মানসিক চাপে ।অথচ ইউজিসির উচিৎ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সহযোগিতায় তাঁদের সচেষ্ট হওয়া ।
সনদ জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকার প্রামাণিক দলিল থাকার পরও যখন ইউজিসি অভিযুক্তদেরকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় এবং দুর্নীতি প্রমানিত হয়ে বরখাস্ত ব্যক্তি যদি উপচার্য পদে আসীন হয় তাহলে সনদ জালিয়াত চক্রের প্রতারক কর্তাব্যক্তিরা পশ্রয়ই পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে যা সমাজের জন্য অশনী সংকেত ।
সনদ জালিয়াত চক্র এতই বেপরোয়া যে, জনসাধারণের মোবাইলে মেসেজ দিয়ে, মোবাইলে কল দিয়ে এমনকি রাস্তার পাশে লিফলেট বিতরণ করেও ক্লায়েন্ট ধরার চেষ্টা করছে তারা । প্রকাশ্যে এমন অবৈধ বাণিজ্য করলেও এরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সার্টিফিকেট বাণিজ্য করা প্রতারক চক্র বাংলাদেশে এসএসসি থেকে শুরু করে পিএইচডি ডিগ্রি পর্যন্ত জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে । সেই সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি পাচ্ছে, পদোন্নতিও নিচ্ছে। মূলত এসব চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে সবাইকে। আর এসব প্রতারক চক্রকে ধরা ও শাস্তি দেওয়া প্রশাসনের কাজ। পুলিশ,প্রশাসন,সংশ্লিষ্ঠ অধিদপ্তর(ইউজিসি,র্বোড) শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলে এদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিলে এই চক্র ধরা পড়তে বাধ্য ।