দেশে চাকরির উপযুক্ততা কম কিস্তু সনদধারী বেকার প্রচুর  

0
633

দেশে চাকরির উপযুক্ততা কম কিস্তু সনদধারী বেকার প্রচুর  

দখিনা ডেস্ক: দেশে দক্ষ কর্মীর অভাব আছে৷ তবে সীমিত । অবশ্যই কিছু কিছু খাতে অভাব আছে৷ কারণ যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করছেন তারা বাস্তবানুগ দক্ষতা নিয়ে বের হচ্ছেন না৷ পাশাপাশি শিক্ষার মানও গত কয়েক বছরে নিম্নমুখী৷ বাংলাদেশে দিনকে দিন শিক্ষিত বেকার বাড়ছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেও চাকরি মিলছে না৷ সংকুচিত হচ্ছে কর্মক্ষেত্র৷ অনেক কারনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বা শিক্ষকেরা চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তৈরী করতে পারছেন না৷ যার কারণেই শিক্ষিত বেকার বাড়ছে৷ কর্মক্ষেত্রের উপযুক্ততার অভাবে সনদধারীরা বেকার হয়ে আছে ।ইন্ড্রাস্টির এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কর্মক্ষেত্রের উপযুক্ততার জন্য কোন সর্ম্পক গড়ে না উঠলে  সনদধারী বেকারের সংখ্যা বাড়বে। শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষন প্রয়োজন । গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে । চাকরি করার জন্য যে বিদ্যা, জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা দরকার, সেটা শিক্ষার্থীরা পুরো ছাত্রজীবন ধরে ভুলে থাকে। তারা নিজেদেরকে ঠকায়, মা–বাবাকে ঠকায়, জাতিকে ঠকায়; কারণ মা–বাবা ও রাষ্ট্র তাদের পড়াশোনার পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে দিনকে দিন শিক্ষিত বেকার বাড়ছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেও চাকরি মিলছে না৷ অপরদিকে সংকুচিত হচ্ছে কর্মক্ষেত্র৷ চাকরির বাজার গত ৩/৪ বছর একটু খারাপ৷ বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে যারা গ্র্যাজুয়েশন করে বের হচ্ছে তাদের চাকরির ক্ষেত্র খুব কম তৈরী হচ্ছে৷ এখন প্রতি বছর দেড় থেকে দুই লাখ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে৷ তাদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগই কোন চাকরি পাচ্ছে না৷ ইন্টারভিউ দিতে আসে, অনার্স–মাস্টার্স পাস করা তরুণেরা ইন্টারভিউ দিতে আসে, কিন্তু কিচ্ছু জানে না। ইংলিশে মাস্টার্স করে আসছে, দুইটা সেনটেন্স শুদ্ধ করে ইংলিশ লিখতে পারে না। কথা বললে মনে হবে আইকিউ লেভেল এত কম! দুনিয়ার কোনো খোঁজখবরই রাখে না।’ এই অভিযোগ নতুন নয়। তাই দেশের চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে দক্ষ লোক নাপওয়ায় বিদেশ থেকে উচ্চ বেতনে লোক আসে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পসহ শিল্প ও সেবা খাতের উচ্চ স্তরের পদগুলোতে প্রচুর বিদেশি লোক কাজ করে, তারা হাজার হাজার ডলার নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে।

তবে এখনও টেকনিক্যাল স্কিলের চাকরি বেশি৷ এটি  আগে থেকে অনেক বাড়ছে৷ যদিও সেটা পর্যাপ্ত না, আরো দরকার৷  টেকনিক্যাল স্কিলের বেতন কাঠামো তুলনামূলক ভালো৷ সাধারন স্কিলে চাকরি আসলে কম৷ বিবিএ, এমবিএ যারা করছেন তাদের বেতন বেড়েছে৷ সাধারণভাবে প্রাইভেট সেক্টরে বেতন কাঠামো কমে গেছে৷ আইটি বা ফ্যাক্টরি ম্যানেজমেন্ট লেভেলে এখনও কিছু চাকরি হচ্ছে৷

ভকেশনাল ট্রেইনিং নিয়ে যারা বের হচ্ছে তাদের চাকরি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি৷ কিন্তু আমাদের সমাজে মানসিকতা অন্য ধরনের৷ অভিভাবকেরা মনে করেন, ভকেশনাল ট্রেইনিং করে যে চাকরি পাবে সেটার সামাজিক মর্যাদা কম৷ আমাদের সমাজে মূলত অফিস কেন্দ্রিক চাকরি চায়৷ যেখানে বসে কাজ করবে৷ কিন্তু মার্কেটিংয়ে চাকরির বাজার আছে৷ সেখানে তারা যেতে চায় না৷ অনেক চাকরি পেয়েও তারা করে না৷ কারখানার চাকরিও তারা করতে চায় না৷

বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারত্বের হার বেশি হওয়ার কারণ, আগে এত বেশি গ্র্যাজুয়েট বের হতো না৷ গত ৫/১০ বছরে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহু ছাত্র বের হচ্ছে৷ চাকরির তুলনায় সাপ্লাই এখন বেড়ে গেছে৷ এখন এদের জন্যতো চাকরি তৈরী হচ্ছে না৷ এছাড়া গত ৩/৪ বছরে বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু এ্যাফেকটেড৷ তার মধ্যে তৈরি পোশাক খাত অন্যতম৷ ২০১৯ সালটা কিন্তু তৈরি পোশাকের জন্য খারাপ গেছে৷ এরপর ব্যাংকিং খাত একটা বড় বাজার ছিল৷ খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে ব্যাংকে চাকরির জায়গা কমে গেছে৷ টেলিযোগাযোগ খাতে আগে চাকরির জায়গা ছিল৷ যেমন গ্রামীণফোনে আগে ৫/৭ হাজার মানুষ কাজ করতেন৷ এখন তারা আউটসোর্সের মাধ্যমে অনেক কিছু করাচ্ছে৷ ফলে সেখানে এখন চাকরি আছে ২/৩ হাজারের৷

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো  গতানুগতিক ভাবেই চলছে । পরির্বতনে অভ্যস্ত নয়। অনুধাবন করছে না যে, তাদের পড়াশোনা চাকরির বাজারের সঙ্গে যাচ্ছে না৷ তাঁরা মনে করেন তাঁদের মূল কাজ ডিগ্রি দেওয়া ৷ সে চাকরি পাচ্ছে কি পাচ্ছে না সেটা তারা দেখেন না৷ এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ান তারা ইন্ড্রাস্টির প্রয়োজন দেখেন না৷ ফলে তারা যে থিওরি পড়াচ্ছেন সেটা বাস্তবে গিয়ে কাজে লাগছে না৷ পাশ হচ্ছে, ডিগ্রিও পাচ্ছে কিন্তু এর মূল্য থাকছে না৷

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে অনেকে উদ্যোক্তা হয়েছেন বা হচ্ছেন৷ এটা নতুন ট্রেন্ড৷ বিদেশে উদ্যোক্তাদের অর্থ সংস্থানের একটা ব্যবস্থা থাকে৷ কিন্তু এখানে সরকারি বা বেসরকারি খাত থেকে সেভাবে তারা অর্থ পান না৷ পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে কেউ কিছু শুরু করলে সেটা থেকে রিটার্ন আসতে কয়েক বছর লেগে যায়৷ সেই পর্যন্ত এই উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে৷ যারা একটু বেশি টাকা নিয়ে শুরু করেন তারা হয়ত টিকে যাচ্ছেন৷