পুলিশ জনগণের আস্থা অর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী

0
408

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জনগণের আস্থা-বিশ্বাস পুলিশ অর্জন করেছে। যে কোন সমস্যায় এখন ৯৯৯ এ কল করলেই পুলিশের সেবা পাওয়া যায়। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়েছে।’

আজ রোববার সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস এ ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২০’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র কয়েকটা বছর সময় পেয়েছিলেন। ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারের হত্যা করা হয়। আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের এক এসআই (উপ-পরিদর্শক) সেই দিন শাহাদাত বরণ করেছিলেন। এরপর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করে। তারা দেশের জন্য কাজ করেনি। ২১ বছর পর আমরা ক্ষমতায় এসে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় কাজ করেছি। পুলিশের উন্নয়নে কাজ করেছি।’

২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সময় পুলিশ সকল ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করেছে। জনগন পুলিশের পাশে ছিল। বিএনপির আগুন সন্ত্রাসে ১৯ জন পুলিশ সদস্য শাহাদাত বরণ করেন।’ পুলিশ সদস্যরা জীবন বাজি রেখে জাতীয় সম্পদ রক্ষায় কাজ করছেন উল্লেখ করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। এ সবের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ পুলিশ হলো জনগনের সেবক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কোন দুর্যোগে জনগনের পাশে দাঁড়ায় পুলিশ। তাই তাদের সমস্যার সমাধান করা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। আমরা ক্ষমতায় আসার পর পুলিশের রেশন বাড়িয়েছি। সম্প্রতি ১০ হাজার পুলিশ কনেস্টবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে একটুও দুর্নীতি হয় নাই। এতে তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

পুলিশ বাহিনী প্রতিটি ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুলিশকে জনবান্ধব করে তুলতে আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। জনবল ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করেছি এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। পদোন্নতির ব্যবস্থাও করেছি। পুলিশ বাহিনীতে গ্রেড ১ ও ২ চালু করেছি। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট যেমন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, নৌ পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নসহ (এসবিপিএন) করেছি।’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬ সালে পুলিশ স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘের শান্তি মিশনে পুলিশ কাজ করছে। সেখানে নারী পুলিশ কন্টিনজেন্টও আছে। আমরা নারী পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করছি। পুলিশের জন্য কমিউনিটি ব্যাংক করে দিয়েছি। এখান থেকে যেন এর সদস্যরা ঋণ নিয়ে কিছু একটা করতে পারে।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। কুচকাওয়াজ শেষে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে স্থাপিত বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টল পরিদর্শন এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ প্যারেডে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে রবিবার পাঁচ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ-২০২০ শুরু হল। যা চলবে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৪ জনকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ২০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৮ জনকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)- সেবা’ এবং ৫৬ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)- সেবা’ প্রদান করা হয়।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং পুলিশ মহা-পরিদর্শক পৃথক বাণী দিয়েছেন। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার চ্যানেলসমূহ পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করেছে। বরাবরের ন্যায় পুলিশ সপ্তাহ ২০২০ উপলক্ষে এবারো থাকছে পুলিশের বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘মিলেছি মেলবন্ধনে’।

পুলিশ সপ্তাহের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারগণের সাথে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীবর্গের সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতির ভাষণ, পুরস্কার বিতরণ (আইজি’জ ব্যাজ, শিল্ড প্যারেড, অস্ত্র/মাদক উদ্ধার প্রভৃতি), অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের সাথে কর্মরত পুলিশ অফিসারদের পুনর্মিলনী, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের সাথে আইজিপি’র সম্মেলন এবং বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা ইত্যাদি।

আগামী ১০ জানুয়ারি আইন-শৃঙ্খলা ও অপরাধ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে পুলিশ সপ্তাহের নানা আয়োজনের।

পুলিশ সপ্তাহে বিগত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়।